বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থানা!
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার’ করার জন্য মতিহার থানার ভবন ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন করা হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি পুলিশ ফাঁড়ি থাকার পরেও প্রস্তাবিত পরিকল্পনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দুই সদস্য। সিন্ডিকেটের ১৬ সদস্যের মধ্যে তাঁরা দুজন দ্বিমত পোষণ করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (আপত্তি) দিয়েছেন।
মতিহার থানা ভবনটি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে তালাইমারী এলাকায় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের একটি সূত্র এনটিভি অনলাইনকে জানায়, গত ৩১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ৪৫৮তম সভার আলোচ্যসূচিতে ৮ নম্বর বিষয় ছিল মতিহার থানা ভবন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের প্রসঙ্গটি। মহানগর পুলিশের একটি লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়।
সূত্র জানায়, এটি উত্থাপনের পরই দুজন সিন্ডিকেট সদস্য এর বিরোধিতা করেন। সভা শেষে তারা উত্থাপিত পরিকল্পনাটি পুনর্বিবেচনার জন্য একটি আবেদনপত্রও দেন। এতে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এখানে থানা স্থাপন করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ক্যাম্পাসে থানা ও পুলিশফাঁড়ি স্থাপনের পরিকল্পনায় দ্বিমত পোষণ করা হচ্ছে।’
এর আগে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি মতিহার থানা ভবন ও একটি পুলিশফাঁড়ি স্থাপনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে দুই একর জমি চেয়ে মহানগর পুলিশের একজন উপকমিশনারের স্বাক্ষরিত একটি আবেদনপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক কার্যালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে।
সিন্ডিকেটে দ্বিমত পোষণ করা দুই সদস্য হলেন বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন ড. আমজাদ হোসেন এবং ফিশারিজ বিভাগের প্রভাষক ড. আল-আমিন সরকার।
থানা স্থানান্তরের পরিকল্পনায় দ্বিমত পোষণের ব্যাপারে ড. আমজাদ হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘থানা স্থাপন কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সুফল বয়ে আনবে না। এতে করে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তবুদ্ধির চর্চাও বিঘ্নিত হবে।’
সিন্ডিকেট সদস্য ড. আল-আমিন সরকার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পুলিশফাঁড়ি রয়েছে। সেটিই যথেষ্ট। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ব্যবহার করে পূর্ণ থানা ভবন স্থাপন করার যৌক্তিকতা নেই।’
থানা স্থানান্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হবে কিনা জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘থানা স্থাপন করা হলে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী হবে। ক্যাম্পাসে অপরাধমূলক ঘটনা অনেকাংশেই কমে যাবে। তা ছাড়া ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য প্রতিদিন যে বিপুল পরিমাণ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়, তাদের থাকা ও অস্ত্র রাখার জন্য একটি নিরাপদ জায়গারও প্রয়োজন রয়েছে।’
মিজানউদ্দিন আরো জানান, ‘থানা ভবন স্থানান্তরের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
রাজশাহী মহানগনর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার ও নগর পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, থানা ভবনের জন্য জমি চেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। জমি দেওয়া না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই নেবে।