জাবিতে সিন্ডিকেটের নির্দেশ উপেক্ষা করে পাল্টাপাল্টি অবস্থান অব্যাহত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে পাল্টাপাল্টি অবস্থান অব্যাহত রেখেছেন পরিবেশ বিজ্ঞান এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিন ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের পরও অবস্থান অব্যাহত রাখার ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এ কে এম রাশেদুল আলম বলেন, ‘আমরা আমাদের নৈতিক দাবিতে অনড়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থান অব্যাহত থাকবে। বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাব।’
অন্যদিকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা কৌশলী অবস্থান নিয়ে আছেন। অন্যান্য দিনের মতো ভবনের বাইরে অবস্থান না নিয়ে প্রবেশপথের ভেতরের দিকে ১৫ জনের মতো শিক্ষার্থী চেয়ার নিয়ে বসে আছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী দাবি করেন, এটা কোনো অবস্থান কর্মসূচি নয়। বরং ক্লাস করার জন্য অপেক্ষা করছেন তাঁরা।
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের পরও পাল্টাপাল্টি অবস্থান অব্যাহত থাকায় প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তটি মৌখিকভাবে জানালেও এখনো তাঁদের চিঠি দেইনি। একটু পরই চিঠি পাঠিয়ে দেব। আশা করি সবাই সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখাবে।’
ভবনে স্থান বরাদ্দ নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বিভাগের মধ্যে কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান, ইলেকট্রনিকস ও কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং পরিবেশ বিজ্ঞান ভবনের তৃতীয় তলায় পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগকে বরাদ্দ দিয়ে আদেশ জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিকের সই করা ওই অফিস আদেশে বলা হয়, ‘০১-০৬-২০০২, ০৬-০১-২০০৩, ২৯-০৫-২০০৩ এবং ২১-০৬-২০০৩ তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভাসমূহের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ও (ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান, ইলেকট্রনিকস ও কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং পরিবেশ বিজ্ঞান ভবন) ভবনের উত্তর ব্লক ও দক্ষিণ ব্লকের তৃতীয় তলার ২৮ হাজার বর্গফুট স্থানের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে উভয় ব্লকের তৃতীয় তলার ২৮ হাজার বর্গফুট স্থান পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দ প্রদান করা হলো।’
এ অফিস আদেশের বিরোধিতা করেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে তাঁরা উপাচার্যের কার্যালয়ে অবস্থান নেন।
গত রোববার সকাল থেকে শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাব সংকট নিরসনের দাবিতে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী ওই ভবনের দুটি প্রবেশপথে অবস্থান নেন।
অফিস আদেশ জারির পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অফিসের লোকজন নিয়ে নতুন ভবনে উঠতে যান পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকরা। তবে ভবনের উভয় প্রবেশপথে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচির ফলে সামনের রাস্তার অপর পাশে অবস্থান নেন বিভাগের আট শিক্ষক। পরে বিকেল ৪টার দিকে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীও শিক্ষকদের সঙ্গে যোগ দেন। ফলে মাত্র কয়েক ফুট দূরত্বে অবস্থান নেন তিনটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
সেই দিন থেকে তিন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি অবস্থান অব্যাহত থাকায় সমস্যা সমাধানে গতকাল মঙ্গলবার জরুরি বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। বৈঠক থেকে নতুন ভবনের স্থান বরাদ্দ নিয়ে তিন বিভাগের পাল্টাপাল্টি অবস্থানরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ৫ এপ্রিলের পূর্বাবস্থায় ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
গতকাল বিকেলে প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ ছাড়া সুষ্ঠু একাডেমিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনতে সিন্ডিকেট সদস্য ও মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আলাউদ্দিনকে প্রধান করে একটি সুপারিশ কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদ্স্য সচিব করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের পরিচালক এস এম আনোয়ারুল ইসলামকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ চৌধুরী, অধ্যাপক রাশেদা আখতার এবং গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. নুরুল হক।