বর্ষবরণের জন্য প্রস্তুত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
আগামীকাল পহেলা বৈশাখ। জরা ও গ্লানি মুছে দিতে আগমনের প্রতীক্ষায় বাংলা নববর্ষ ১৪২২। পহেলা বৈশাখ তথা নববর্ষ মানেই যে বাঙালির প্রাণের উৎসব। আর এ উৎসবে নিজেদের রাঙাতে প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। এর অংশ হিসেবে বাংলা বর্ষের শুরুর দিন সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলা ভবন চত্বর থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হবে।
এ মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সামনে রেখে বিরাট কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বিভাগের প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী।
রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলাভবনে ঢুকতেই সেই ব্যস্ততা চোখে পড়ে। সারা বিভাগেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে দলগতভাবে বা একা কাজ করে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। আর সব সময় উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিচ্ছেন বিভাগের শিক্ষকরা।
বিভাগীয় শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার শোভাযাত্রা উপলক্ষে তিন ধরনের প্রতিকৃতি দিয়ে বর্তমান সময়কে প্রতিনিধিত্ব করা হবে। যার মধ্যে রয়েছে পেঁচা, পাখি ও ঘোড়ার প্রতিকৃতি বা কাঠামো।
এ প্রসঙ্গে বিভাগীয় শিক্ষক ময়েজ উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বাঙালির একমাত্র সর্বজনীন উৎসব হলো নববর্ষ। এটা শুধু আমাদেরই উৎসব। তাই তো একে বরণে এত প্রস্তুতি, এত যজ্ঞ।’ তিনি আরো বলেন, ‘দেশে কয়েক মাস ধরে এবং বর্তমানে যে আগ্রাসন চলছে তা একটি অশুভ লক্ষণ হিসেবে গণ্য করে এই সময়টাকে প্রতিনিধিত্ব করার লক্ষ্যে পেঁচার প্রতিকৃতি তৈরি করা হচ্ছে এবার। আর এ ত্রাহি অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে অর্থাৎ পাখির মতো উড়ে যেতে বরাবরের মতো পাখির অবয়ব রাখা হচ্ছে শোভাযাত্রায়। এ ছাড়া আমাদের জীবনের যে স্বাভাবিক গতি আছে, ঘোড়ার মাধ্যমে তা রূপায়ণ করার চেষ্টা চলছে।’
পাশাপাশি নানা রঙের ও নানা ধরনের মুখোশ বানাতে ব্যস্ত আরেকদল শিক্ষার্থী। এ ছাড়া বিভাগের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য সরা। সেগুলোতে রং-তুলির মাধ্যমে নানা অবয়ব ফুটিয়ে তুলছেন অনেকে। এগুলোর কোনোটিতে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে কাকতাড়ুয়ার প্রতিচ্ছবি, কোনো কোনোটিতে পল্লীবধূর মুখচ্ছবি। রয়েছে নানা ধরনের প্রাণির প্রতিচ্ছবি।
পুরাতন কলা ভবনে ঢুকতেই দেখা গেল, একটি টেবিলে নানা ধরনের চিত্র ও শিল্পকর্ম। সরা, মুখোশ এবং বিভিন্ন পাখির অবয়ব নিয়ে পসরা সাজিয়ে আছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। জানা গেছে, এসব বিক্রির মাধ্যমে শোভাযাত্রা আয়োজনের তহবিল গঠন করছেন তাঁরা।
চারুকলা বিভাগের ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জান্নাত-ই খাতুন সাথী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আসলে প্রাণের বৈশাখ তথা নববর্ষের আগমন বলেই সবাই এত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। এ ছাড়া চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী হওয়ায় এ প্রেরণা আরো জোরালোভাবে কাজ করছে।’
আর সাথীর এ কথার প্রমাণ পাওয়া গেল বিভাগের চত্বরে নিরলস কাজ করে যাওয়া শিক্ষার্থীদের কর্মব্যস্ততার মাঝে। কাজ করতে করতেই এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলছিলেন এসব শিক্ষার্থী। কেননা বাঁশ, কাঠ, চাটাই, কাগজ আর রং-তুলি ছেড়ে খাওয়া কিংবা অন্য কাজ করার যে ফুরসতই নেই কারো। পুরোদমে চলছে প্রস্তুতি, এখন অপেক্ষা শুধুই নতুন বছরের।