প্রবীণদের স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে
প্রবীণ বয়সে অনেকেই ডিমেনসিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এই রোগে চিন্তা-ভাবনা এবং স্মৃতিতে সমস্যা হয়। গবেষকরা বলেন, সাধারণত ৮০ জনের মধ্যে ছয়জনের এই রোগ হয়। সম্প্রতি লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের গবেষকরা জানান, মধ্য বয়সের যেসব মানুষের ওজন কম থাকে অর্থাৎ যাদের উচ্চতার তুলনায় ওজন কম হয়, তাদের বৃদ্ধ বয়সে ডিমেনসিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার গবেষকরা এও বলেন, ওজন বেশি থাকলে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এসবের ঝুঁকি থাকে- এগুলোও ডিমেনসিয়ার বৃদ্ধি ঘটায়। এ নিয়ে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। তাহলে কী করতে হবে আমাদের? যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা ডিমেনসিয়া রোধে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বাতলে দিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান প্রকাশ করেছে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন।
ওজনের ভারসাম্য
গবেষণায় বলা হয়, যাদের ওজনের ভারসাম্য থাকে না তাদের ডিমেনসিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) ঠিক রাখতে হবে। অর্থাৎ উচ্চতার সঙ্গে ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। তাই কম বা বেশি ওজন নয়, উচ্চতার সঙ্গে ওজনের ভারসাম্য ঠিক রাখা এই রোগকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে।
নিয়মিত ব্যায়াম
আলঝেইমার সোসাইটির পরিচালক গবেষক ড. ডুব ব্রাউন জানান, ডিমেনসিয়া প্রতিরোধের চারটি সূত্র হচ্ছে, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান না করা, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, হৃদযন্ত্রের দিকে নিয়মিত খেয়াল রাখা। গবেষণায় দেখা যায়, ৩৫ বছরের তিন হাজার মানুষ যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন (অন্তত সপ্তাহে ৩০ মিনিট করে পাঁচ দিন হাঁটে), তাঁদের এই রোগে ঝুঁকি কম থাকে। অন্যান্য বিষয়গুলোও নির্ভর করে ডিমেনসিয়া রোধে, তবে নিয়মিত ব্যায়াম একটি বড় বিষয়।
আগে থেকে সাবধান হওয়া
ডিমেনসিয়া পুরোপুরি হওয়ার ১৫-২০ বছর আগে থেকেই কিছু লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু হয়। গবেষকরা জানান, স্মৃতিভ্রংশের সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, শরীরের রক্ত ও রক্তনালিগত বিভিন্ন সমস্যার (ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ইত্যাদি)। তবে যদি জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন করা যায়, যেমন- নিয়মিত ব্যায়াম করা, সামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকা এবং রক্তনালির ঝুঁকিগুলো এড়িয়ে চলা যায় তাহলে ডিমেনসিয়ার ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
হৃদযন্ত্রের দিকে খেয়াল রাখুন
রক্তনালির অবস্থা অনেকটাই ডিমেনসিয়া রোগের ঝুঁকি কমায়। গবেষকরা বলেন, নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করতে হবে। ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল চেকআপ করতে হবে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ধূমপান ছাড়তে হবে। যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের মধ্যে ডিমেনসিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৪৫ শতাংশ থাকে। তাই ধূমপান ত্যাগ করা খুব জরুরি।
তরুণ বয়স থেকেই জানাতে হবে
গবেষক ড. ব্রাউন বলেন, ডিমেনসিয়া বা যেকোনো ধরনের রোগ প্রতিরোধে তরুণ বয়স থেকেই মানুষকে সচেতন করতে হবে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া কতটা জরুরি এ ব্যাপারে আগে থেকেই শিক্ষা দিতে হবে। পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্তও করা যেতে পারে বিষয়গুলোকে। সঠিক শিক্ষিত লোকের এ ধরনের রোগের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। তাই তরুণ বয়স থেকে বিষয়গুলো সম্বন্ধে ধারণা দিতে হবে।
স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ
ডিমেনসিয়া রোধে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে এবং ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েট মেনে চলতে গবে। ফল, সবজি, মাছ, এগুলো ডিমেনসিয়া এবং অন্য রোগের ঝুঁকি কমায়। পাশাপাশি ভিটামিনসম্বৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
মদ্যপান এড়িয়ে চলতে হবে
যাঁরা মদ্যপান করেন, তাঁদের এই বদ-অভ্যাস এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত মদ্যপান মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। গবেষণায় বলা হয়, অতিরিক্ত মদ্যপান ডিমেনসিয়া রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এই রোগ প্রতিরোধে মদ্যপান এড়িয়ে চলতে হবে।