রবীন্দ্র পুরস্কার-২০১৫
গ্রহণ করলেন সহনৎকুমার ও সাদী মহাম্মদ
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি গত ২৭ বৈশাখ ১৪২২/১০ মে ২০১৫ রোববার বিকেল ৪টায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে স্মারক বক্তৃতা, রবীন্দ্র পুরস্কার ২০১৫ প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। রবীন্দ্র স্মারক-বক্তৃতা প্রদান করেন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত রবীন্দ্র পুরস্কার-২০১৫ প্রদান করা হয়। রবীন্দ্রসাহিত্যে গবেষণা ও চর্চায় অবদানের জন্য অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা এবং রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সাদী মহাম্মদ রবীন্দ্র পুরস্কার-২০১৫ লাভ করেন। পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও শিল্পীর হাতে পুষ্পস্তবক, সনদ, ক্রেস্ট ও পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা তুলে দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
স্বাগত ভাষণে শামসুজ্জামান খান বলেন, এ বছর রবীন্দ্রজয়ন্তি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এবারই সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে রবীন্দ্রচর্চা নতুন মাত্রা লাভ করবে।
রবীন্দ্রপু পুরস্কার ২০১৫-প্রাপ্ত অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা এবং শিল্পী সাদী মহাম্মদ তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, রবীন্দ্রনাথের নামাঙ্কিত পুরস্কারপ্রাপ্তি জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। রবীন্দ্রগবেষণা ও চর্চায় আরো নিবিড়ভাবে নিবিষ্ট হওয়ার দায় এ পুরস্কার তৈরি করবে।
স্মারক বক্তৃতায় অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ বলেন, একটি সুসংস্কৃত পারিবারিক পরিমণ্ডল রবীন্দ্রনাথের মনোগঠনে ভূমিকা পালন করেছে নিঃসন্দেহে তবে নিজেকে তিনি তৈরি করেছেন এবং ক্রমাগত ছাপিয়ে গেছেন নিজেরই মেধা, মনন, শ্রম ও দূরকল্পনায়। তাঁর চিন্তা ও ভাবনায় ব্যাপ্ত ছিল স্বদেশ। এ জন্যই আপন করে আলিঙ্গন করতে পেরেছিলেন বিশ্ববোধকে। তিনি বলেন, একক ব্যক্তির মাঝে বহুত্বের বোধ সঞ্চারের মধ্য দিয়ে মহৎ মানবিকের আবাহনই রবীন্দ্রজীবন ও দর্শনের মূলকথা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেন, রবীন্দ্রচর্চার জন্য বাংলাদেশ সরকার যেমন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু করেছে তেমনি দেশের বিভিন্ন স্থানে রবীন্দ্রস্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। একই সঙ্গে আমাদের নবীন প্রজন্মকে রবীন্দ্রনাথের মহৎ-উদার দর্শনের আলোকে সুশিক্ষিত ও সুসংস্কৃত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারলেই রবীন্দ্রচিন্তা সার্থকতা পাবে। তিনি বলেন, মানবিকতার সাধনার সঙ্গে সঙ্গে অপসংস্কৃতিকে প্রত্যাঘাত করার সংস্কৃতি গড়ে তোলাতেই আজকের দিনে রবীন্দ্র-স্মরণের প্রাসঙ্গিকতা নিহিত।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, রবীন্দ্রনাথ শৈশব থেকেই বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছেন। পারিবারিক সূত্রে জমিদারির দায়িত্ব পেয়ে তিনি এ ক্ষেত্রে প্রথা ভাঙার চেষ্টা করেছেন। মহাজনের প্রতাপের হাত থেকে দরিদ্র কৃষকদের রক্ষার জন্য স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান এবং নানা জনহিতকর কাজে নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছেন। তিনি বলেন, জীবন ও সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ নানান প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন, আবার তাকে পেরিয়ে গেছেন নিজের সৃষ্টির সত্যে ও সৌন্দর্যে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্টব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কবি সৈয়দ শামসুল হক, নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মা, স্থপতি শামসুল ওয়ারেস, রাজনীতিক মোনায়েম সরকার, লেখক ড. ফজলুল আলম, ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল প্রমুখ।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী লায়লা আফরোজ এবং সামিউল ইসলাম পোলাক। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী লিলি ইসলাম, অনিমা রায় ও স্বপ্নীল সজিব।