আটকের সময় কী ছিল সালাহ উদ্দিনের কাছে
ঢাকার উত্তরা থেকে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে পাওয়া যায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ের পোলো গ্রাউন্ড এলাকায়। গত সোমবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ পোলো গ্রাউন্ডের প্রাতভ্রমণকারীরা ফোন করে খবর দেন, একজন ব্যক্তি উদ্ভ্রান্তের মতো সেখানে ঘুরছেন।
সেখানে পুলিশ গিয়ে বিএনপি নেতাকে প্যাস্তুর চৌকিতে নিয়ে আসে। তিনি নিজের পরিচয় দেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলে। এটাও বলেন যে, তিনি বিএনপির নেতা, প্রাক্তন মন্ত্রী।
প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ সদস্যদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, সালাহ উদ্দিনের মোটামুটি পরিষ্কার পোশাক ছিল আর হাতে একটা প্লাস্টিক ব্যাগে আরো একসেট জামা-প্যান্ট ছিল। তবে কোনো টাকাপয়সা ছিল না। আর কোনো নথিও নেই। গালে প্রায় ১০-১২ দিনের না-কাটা দাড়ি ছিল।
আর মেঘালয়ের পুলিশপ্রধান রাজীব মেহতা বার্তা সংস্থা আইএএনএসকে জানান, গত সোমবার গ্রেপ্তারের সময় বাংলাদেশের এই রাজনীতিকের কাছে শুধু কিছু ওষুধ ছিল।
বিবিসির ওই সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, শিলং শহরে উদ্ভ্রান্তের মতো কাউকে ঘুরতে দেখলেই কি সাধারণ মানুষ পুলিশে খবর দেয়, আর পুলিশও চৌকিতে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করায়?
পুলিশ সদস্যরা উত্তর দিলেন, অত ভোরে কেউ উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরছেন, জায়গার নাম জিজ্ঞেস করছেন– এসব শুনেই পুলিশ গিয়েছিল।
এর পর ওই সাংবাদিক আরো জিজ্ঞাসা করেন, এটা কতটা তারা নিজেরা বিশ্বাস করেন যে, একজন বাংলাদেশি নাগরিককে নিয়ে মুখ ঢেকে সীমান্ত পার করে পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে প্রায় ৮০ কিলোমিটার নিয়ে আসা হলো, অথচ কারো চোখে পড়ল না! সব পুলিশ সদস্যের উত্তর : অসম্ভব, অবাস্তব!
আন্তর্জাতিক পুলিশের সংস্থা ইন্টারপোলের ঢাকা ইউনিট বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তারের অনুরোধ জানিয়ে ভারতকে একটি রেড নোটিশ পাঠিয়েছে। মেঘালয় রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক (ডিজিপি) রাজীব মেহতার বরাত দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া এ-সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করে।
মেঘালয়ের পুলিশপ্রধান রাজীব মেহতা বার্তা সংস্থা আইএএনএসকে বলেছেন, ‘গতকাল বুধবার আমরা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তারের অনুরোধ জানিয়ে ঢাকা ইন্টারপোলের কাছ থেকে একটি রেড অ্যালার্ট পেয়েছি। আমরা নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোকে (সিবিআই) বাংলাদেশের এ অনুরোধের কথা জানিয়েছি।’
গত ১০ মার্চ থেকে ‘নিখোঁজ’ ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ। তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে তাঁর পরিবার ও দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
তবে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আটক করা হয়নি বলে দাবি করে আসছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
সালাহ উদ্দিন আহমেদের সন্ধান চেয়ে ১১ মার্চ রাতে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গুলশান ও উত্তরা পশ্চিম থানায় যান তাঁর স্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ। তবে কোনো থানাই তাঁর জিডি গ্রহণ করেনি।
সালাহ উদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মারকলিপি দেন তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদ।