জাবিতে সিন্ডিকেট সদস্যের নেতৃত্বে হামলার অভিযোগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একজন সিন্ডিকেট সদস্যের নেতৃত্বে ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ সময় অভিযুক্তদের দ্বারা ছুড়ে মারা ইটের খোয়ার আঘাতে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি তাঁদের।
গতকাল শুক্রবার রাতে ক্যাম্পাসে ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগ ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের মশাল মিছিলের পর এ হামলা করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়।
সিন্ডিকেট সদস্য ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মুহম্মদ হানিফ আলী, সহযোগী অধ্যাপক আবু সাঈদ মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হাসান ইমামের নেতৃত্বে এ হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাওন অভিযোগ করেন, শুক্রবার রাতে ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগ ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের মশাল মিছিলের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সংযোগ দুই দফায় বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পরে মশাল মিছিল থেকে ফিরে দুই বিভাগের শিক্ষকদের নেতৃত্বে শতাধিক শিক্ষার্থী পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে ইটের খোয়া ছুড়তে থাকে। তিনি আরো অভিযোগ করেন, ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগ ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমাবেশ থেকে ছোড়া ঢিলের আঘাতে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মমিনুল ইসলাম আহত হয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের হাবিব, বর্ষণ, মোস্তফা ও অভি এবং ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রীতম, তুহিন, অনিক ও সৌম্য নেতৃত্বে ছিলেন বলে দাবি করেছেন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এ এন এম ফখরুদ্দিন রাতে বলেন, ‘বিষয়টি মৌখিকভাবে উপাচার্যকে জানিয়েছি। এ ছাড়া শনিবার লিখিতভাবে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করব।’
একই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ন্যক্কারজনক হামলা অনভিপ্রেত। এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সিন্ডিকেট সদস্য ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মুহম্মদ হানিফ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘মশাল মিছিলের সময় আমি ভবনে ছিলাম। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে, মশাল মিছিলের সময় আমি বাইরে গিয়েছিলাম, তবে আমি চাকরি ছেড়ে দেব।’
এ হামলায় জড়িত সন্দেহভাজন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিব এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। আমার বিরুদ্ধে এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা মিথ্যা এবং বানোয়াট।’
এর আগে নবনির্মিত বিজ্ঞান ভবনের প্রথম থেকে তৃতীয় তলা হস্তান্তরের দাবিতে ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেছে ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগ ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
মিছিলে অংশ নেওয়া দুই শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। এ ছাড়া একই দাবিতে গত বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন এ দুই বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
গত ৩০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগকে ওই ভবনের তৃতীয় তলা বরাদ্দ দেয়। এরই মধ্যে তারা ভবনে উঠে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং ভবনের প্রথম থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত হস্তান্তরের দাবিতে সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
নবনির্মিত বিজ্ঞান ভবনের তৃতীয় তলায় স্থান বরাদ্দের দাবিতে প্রায় দেড় মাস ধরে বিবাদে লিপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বিভাগ। এর মধ্যে গত ১৪ মে ভোর ৫টার বৈঠকের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কর্তৃক বরাদ্দকৃত অংশে চেয়ার-টেবিল নিয়ে উঠে পড়ে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ। তার পর থেকে ভবনের প্রথম থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত বরাদ্দের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে এ দুটি বিভাগ।