সাক্ষাৎকার
আমরা জামাতি-আওয়ামী-বিএনপি নই : সামহোয়্যারের জানা
গুলশান ২ নম্বরে বাড়িটা খুঁজে পেতে আমাদের ‘লেট’ হয়ে গেল মিনিট পনেরোর মতো। মাথায় সেটার চেয়েও বেশি ছিল অনেক ধরনের কৌতূহল। প্রশ্নপত্র নিয়েও ছিল খানিকটা দ্বিধা। আসলে ব্লগিং কী বা এর কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষ খুব একটা কিছু জানেন না। আর এরই মধ্যে ব্লগিং বা ব্লগার নিয়ে তো বিতর্কের শেষ নেই; সেটা কেউ বুঝে করছেন, কেউ বা না বুঝে।
‘কেউ বলছে জামাতি, কেউ বলছে আওয়ামী লীগার, কেউ বা বিএনপি। কিন্তু আমরা কারোরই নই। আমরা নিরপেক্ষ। আমরা শুধু মত প্রকাশের একটা জায়গা তৈরি করতে চেয়েছিলাম। আর আমরা আসলে শুধু সেটাই চাই’—শুরুতেই সাফসাফ কথাগুলো বলে আমাদের অনেক প্রশ্নেরই জবাব দিয়ে দিলেন জানা। পুরো নাম সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা। বাংলা ব্লগিংয়ের শুরু হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই, সঙ্গে ছিলেন স্বামী আরিল্ড ক্লোক্কেরহৌগ। তিনি নরওয়ের নাগরিক। নামটা তো সবারই জানার কথা, ‘সামহোয়্যার ইন ব্লগ’। সালটা ২০০৫, ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ। বাংলা ব্লগিংয়ের ইতিহাসে প্রথম বাংলায় ব্লগপোস্ট।
অফিস দেখতে দেখতে কিছু প্রশ্ন মনের ভেতর থেকে বেরোবার পথ খুঁজছিল। এরই মধ্যে হালকা খাওয়াদাওয়া চলছে। তার পরে মগভর্তি কফিতে চুমুক দিতে দিতেই প্রশ্নটা করে বসি।
আমাদের প্রশ্ন, ‘এই প্রতিষ্ঠানটা চলে কীভাবে? মানে বলতে চাচ্ছি, আয়ের উৎস কী?’
জানা বললেন, ‘এখন কিছু বিজ্ঞাপন আসে। কিন্তু মূল আয়ের জায়গাটা অন্যখানে। আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম সামহোয়্যার ইন নেট লিমিটেড। মূলত আউটসোর্সিংয়ের কাজ হয়। সেটার আয় থেকেই অনেকখানি এটার ব্যয়ে কাজে লাগে।’ আমরাও এ উত্তরে বুঝলাম, ব্যাপারটা আসলেই বেশ কঠিন। যতটা ভেবেছিলাম, তার চেয়েও ঢেরগুণে বেশি। আমরা আবারো শুনছি তাঁর কথা। একনাগাড়ে প্রাসঙ্গিক বলে যাচ্ছেন তিনি।
‘আমি দেশে এবং দেশের বাইরে লেখাপড়া করেছি। বিভিন্ন ভাষার মানুষ দেখেছি। তাদের সঙ্গে মিশেছি। আমার স্বামী একজন নরওয়েজিয়ান। ভাষার প্রতি আমার নিজের একটা দুর্বলতা রয়েছে। বিভিন্ন ভাষা বলতে, শিখতে এবং লিখতে পছন্দ করি। যেমন—আমি নরওয়েজিয়ান ভাষা বলতে, পড়তে এবং লিখতে পারি। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর মধ্যে সুইডিশ, ড্যানিশ ভাষা বুঝি, বলতে পারি, পড়তে পারি। বাংলা তো আমার নিজের ভাষা। মাতৃভাষার প্রতি বিশেষ দুর্বলতা সেই ছোটবেলা থেকেই। এর বাইরে ইংরেজি বলি, পড়ি, লিখি এবং হিন্দি বুঝতে পারি। ফ্রেঞ্চ এবং জার্মান ভাষায়ও আগ্রহ রয়েছে।’
এখান থেকেই শুরু। স্বপ্নকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যেতে গেলে স্বপ্ন দেখার সঙ্গে সঙ্গে দূরদৃষ্টিটাও লাগে, সেটা তাঁদের ছিল। জানালেন, বিভিন্ন দেশে থাকলে, ঘুরলেও মনেপ্রাণে তো একজন বাঙালি। নিজের ভাষার জন্য, দেশের জন্য কিছু একটা করার ইচ্ছাটা সব সময়েই ছিল। নিজের পর্যবেক্ষণে দেখেছেন, বাঙালিরা সব সময়ই অনেক বেশি কমিউনিটিভিত্তিক জীবনে অভ্যস্ত। সবাইকে নিয়ে সবার সঙ্গে থাকা। নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে। এই কমিউনিটিটাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেটাই ছিল চিন্তা। সেখান থেকেই ব্লগিংয়ের চিন্তা। কিন্তু তখন ব্লগিং মানেই ইংরেজিতে ব্লগিং; কোনো বাংলা ব্লগিং সাইট নেই। কারণ, ইন্টারনেটে বাংলা লেখা সম্ভব ছিল না, কিছু ব্যবহারকারী ডেস্কটপে বাংলা লিখতেন। সামহোয়্যার ইন ব্লগের মাধ্যমেই মূলত ইন্টারনেটে বাংলায় লেখা সম্ভব হয়েছে।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে ঘটল সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা। জানা বললেন, ‘এ সময়ে খুব আতঙ্কিত ছিল সবাই। টিভিতে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় কী হয়েছে, কেউ মারা গেছে কি না কেউ বলতে পারছে না। সারা দিন সবার মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক। তখনই অনুভব করলাম সিটিজেন জার্নালিজম বা নাগরিক সাংবাদিকতার শক্তি এবং গুরুত্ব। এ রকম একটা প্ল্যাটফর্ম দরকার, যেখানে সাধারণ মানুষ নিজেদের মনের কথা বলতে পারবে; নিজের মতামত অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পারবে, জানতে, জানাতে এবং আলোচনা করতে পারবে। দেশের সর্ববৃহৎ সেলফোন কোম্পানি গ্রামীণফোনে দীর্ঘ সময় কাজ করার অভিজ্ঞতায় আমরা দুজনই বুঝতে পেরেছিলাম যে মোবাইল ফোন শুধু কথা বলার যন্ত্র হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকবে না। প্রযুক্তিগত নানা দিক উন্মোচিত হবে, ইন্টারনেট খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। সে রকম বুঝেই একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ করছিলাম। সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা ভেতরের তাড়নাকে বাড়িয়ে দিল। যত বাধাই আসুক, বাংলা ব্লগিং শুরু করব ওই বছরের মধ্যেই—এই সংকল্প নিয়ে কাজ শুরু করি। তখন আমাদের সঙ্গে কিছু মেধাবী প্রোগ্রামার যুক্ত করে নিলাম। সে সময় আসলে বাংলা ব্লগিং সাইট করার মতো লোকজন খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল ছিল। হাসিন হায়দার, ইমরান, মোর্শেদ—এদের কথা বলব। এদেরকে আমরা বলি সেই সময়কার ‘ববস’, মানে ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ’। ব্লগিং সাইটটি নিয়ে এদের সঙ্গে আমাদের পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনা করে আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করি। মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যেই একটি সম্মিলিত প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় সামহোয়্যার ইন ব্লগ চালু হয়ে যায়।
আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলা ব্লগিং সাইট করা, নিউজ পোর্টাল নয়। নিউজ থাকবে, কিন্তু সেটা সিটিজেন জার্নালিজম হিসেবে। অর্থাৎ কোথাও কোনো ঘটনা ঘটল, যাঁরা সেখানে আছেন, তাঁরা সেই ছবি এবং খবরটা নিজেরাই মোবাইলের মাধ্যমে ব্লগে তুলে দিলেন, যাতে একটি প্রাণবন্ত আলোচনা সম্ভব। কারণ, ঘটনা ঘটার পর সেটা জানতে এবং সংবাদটি গুছিয়ে নিতে সাংবাদিকদের সময় লাগে। তার পর একজন সাংবাদিক সেটা কাভার করে আসার পর আমরা খবরটা পাই। কিন্তু ব্লগিংয়ের মাধ্যমে খবরটা সঙ্গে সঙ্গেই পাওয়া সম্ভব।
সেই সঙ্গে বাংলা ভাষায় ব্লগিং চালু করতে চেয়েছিলাম, যাতে মানুষের মত প্রকাশের একটা জায়গা থাকে। গণমাধ্যমগুলোতে সে সুযোগ রয়েছে, কিন্তু সেখানে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ব্লগিংটা অনেকটাই উন্মুক্ত। আর মডারেশনের ক্ষেত্রে আমরা পোস্ট মডারেশন করি। অর্থাৎ লেখা প্রকাশিত হবে প্রথমে। তার পর যদি তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠে এবং দেখা যায় যে আমাদের ব্লগিং নীতিমালা লঙ্ঘিত হয়েছে, তবে আমরা সে পোস্টটি ব্লগারকে জানিয়ে সরিয়ে ফেলি। আমরা সেই ব্লগারের কাছে মেইল পাঠাই যে কী কারণে তার লেখাটি সরিয়ে ফেলা হচ্ছে এবং আমাদের নীতিমালাগুলো তাকে পাঠাই। কথা বলার বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রশ্নে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে আমরা একটি ব্লগিং নীতিমালা করেছি, আমরা সেভাবেই ব্লগ পরিসরে আচরণ এবং পোস্টগুলোর দেখভাল করে থাকি।
শুনতে শুনতে হঠাৎ খেয়াল হলো, আমাদের প্রশ্নপত্রের থেকেও তো কিছু প্রশ্ন করতে হবে! নামকরণের বিষয়ে তো একটা প্রশ্ন না করলেই নয়। এবারে প্রশ্ন বনাম উত্তর পর্ব শুরু হয়ে যায়।
আমাদের কৌতূহলী জিজ্ঞাসা, ‘আচ্ছা, নামটা এমন কেন? নামটার মধ্যে একধরনের ঘোর কাজ করে? সামহোয়্যার ইন মানে কোনো এক জায়গায়! নামটা কীভাবে এলো?’
প্রশ্ন শুনে হাসলেন জানা আপা। জানালেন নামকরণের পেছনের ইতিহাস, “আমি আর আমার হাজবেন্ড মিলে একটি ছুটির দিন বাসায় বসে ‘আর্থ’ ব্যান্ডের গান শুনছিলাম। তাদের একটি গান ‘সামহোয়্যার ইন আফ্রিকা’ আমাদের খুব পছন্দের। সেখান থেকেই এই ‘সামহোয়্যার ইন’ শব্দটি নেওয়া। বলতে পারেন, মাথায় গেঁথে গেল আর কী! এভাবেই আমাদের প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া। ব্লগের নামটাও সেভাবেই আসে। তবে সামহোয়্যার ইন ব্লগের একটা বাংলা নামও আছে, ‘বাঁধ ভাঙার আওয়াজ’।
এনটিভি অনলাইন : ব্লগ তো হলো। কিন্তু ব্লগ কী, সেটা কীভাবে মানুষ জানল? বাংলাতেও ব্লগিং করা যায়, এটা মানুষ কীভাবে নিয়েছিল তখন?
উত্তর : আমরা যখন শুরু করি, তখন ব্লগিংয়ের ব্যাপারে হাতেগোনা কিছু ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ধারণা ছিল এবং তা ইংরেজিতে। আবার বাংলায় অনলাইনে লেখার ব্যাপারটা তখনো সম্ভব হয়নি। হাতেগোনা কয়েকজন ছিলেন, যাঁরা তখন বাংলাদেশে ব্লগিং করতেন, তবে ইংরেজিতে। এমনই একজন গায়ক ঢাকা ব্যান্ডের মাকসুদ ভাই। আমরা মাকসুদ ভাইকে জানাই এবং তাঁকে আমাদের ব্লগ সম্পর্কে বলি। তিনি খুবই আগ্রহী ছিলেন। এর বাইরে দেশে ও বিদেশে বাঙালি যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে কারা ব্লগিং করেন, সেটা আমরা খুঁজতে থাকলাম। এর বাইরে আমাদের কোনো প্রচারণা ছিল না; কোনো বিজ্ঞাপনও ছিল না। শুধুই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ আর মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়তে লাগল। এর মধ্যে একদিন মাকসুদ ভাই সে সময়কার কিছু প্রোগ্রামার, ডেভেলপার এবং ইন্টারনেটের সঙ্গে কোনোভাবে সংযুক্তদের তাঁর বাসায় একটি চায়ের আড্ডায় ডাকেন। আমরা সেখানে গেলাম। আরো ১০/১৫ জন এলেন, যাঁরা ব্লগিং করতেন। ওই মিটিংটা খুব কাজে দিয়েছিল। এর পর মানুষের মুখে মুখেই ছড়িয়েছে ব্লগের কথা। ব্লগিং নিয়ে আমরা কখনো কোনো বিজ্ঞাপন দিইনি, এখন পর্যন্ত বিজ্ঞাপন দেওয়া ছাড়াই আমাদের কাজ চলছে।
এনটিভি অনলাইন : সামহোয়্যার ইন ব্লগ দিয়ে যাত্রা শুরু। একদম শুরু থেকেই বাংলাদেশের ব্লগিং দেখেছেন আপনারা। এর উত্থান বা বিস্তৃতির ব্যাপারটি কীভাবে দেখেন?
উত্তর : আমার মনে হয়, মাতৃভাষায় হওয়ার কারণে বাংলা ব্লগিংয়ের বিকাশ এবং প্রকাশ খুব দ্রুতগতিতে হয়েছে। ব্লগ চালুর পর ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্র্যাক সেন্টারে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সামনে রেখে আমরা একটা কর্মশালা করেছিলাম। সেখানে আসলে কীভাবে ব্লগ ব্যবহার করতে হয়, সেটা দেখানো হয়েছিল। দিনব্যাপী কর্মশালা ছিল সেটি। ওই কর্মশালা অনেক কাজে দিয়েছিল সে সময়ে। মানুষ জানতে পেরেছিল; ব্লগিংয়ের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছিল। এর পর অনেক জায়গাতেই মানুষ নিজেদের মতো করে ব্লগের কথা বলেছে। একটা উদাহরণ দিতে পারি, আমার বোনের ছেলে একদিন আমাকে এসে বলছে, ক্লাসে তাদের টিচার রেফারেন্স হিসেবে সামহোয়্যার ইন ব্লগের কথা বলেছেন। ও তখন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত। এভাবেই মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা বাংলা ব্লগকে সামনে এগিয়ে নিয়েছে।
এনটিভি অনলাইন : এত বড় একটা ব্লগ সাইটকে যাঁরা চালিয়ে নিচ্ছেন, সেই টিম সম্পর্কে বলুন।
উত্তর : আমাদের পুরো কাজটাই হয় টিমওয়ার্কের মাধ্যমে। আমাদের অফিসে কোনো স্যার-ম্যাডাম কালচার নেই। এখানে সবাই নিজের কাজটা নিজেই করে। যেমন ধরেন কেউ চা বা কফি খাবে, সেটা সে নিজেই বানিয়ে নেয়। আবার যাওয়ার আগে পাশের জনকে জিজ্ঞেস করে যাবে, তার কিছু লাগবে নাকি। আমরা সবাই কিন্তু একসঙ্গে বসেই কাজ করি। কারো জন্য আলাদা রুম নেই। এই কালচারটা আমি স্ক্যান্ডিনেভিয়ানদের মধ্যে দেখেছি। ওদের মধ্যে ভেদাভেদটা কম। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেঝে পরিষ্কার করে যে লোকটা, সেও কিন্তু নিজের গাড়িতে করে কাজে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকে দেখে হাত বাড়িয়ে দেয়, কুশল জিজ্ঞেস করে। আমরাও সেভাবে করতে চেয়েছি। এখন সামহোয়্যার ইন ব্লগের কনটেন্ট নিয়ে কাজ করছি আমরা চারজন। বাকিরা অন্যান্য আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছে।
(আমাদের বিস্ময়, এই বিশাল সামহোয়্যার ইন ব্লগ, মাত্র চারজন মিলে! জানা হাসলেন। বিস্ময়টা আরো বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ। চারজন, আমি সহ!’ বিস্ময় সামলে আবারো কাঠামোগত প্রশ্নে ফেরা হয়।)
এনটিভি অনলাইন : ব্লগ নিয়ে তো অনেক তর্কবিতর্ক হয়েছে। সমালোচনা কম হয়নি। গণজাগরণ মঞ্চের সময় থেকে ব্লগারদের হত্যা করার ঘটনা ঘটছে। এসব বিষয়ে কী বলবেন? ব্লগে রাজনৈতিক ভিন্নতা বা মতাদর্শের ভিন্নতা কতটা প্রভাব ফেলে ব্যক্তিগত জীবনে?
উত্তর : ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণজাগরণের সময়ে ‘ব্লগ’ এবং ‘ব্লগার’ শব্দ দুটি গণমাধ্যমের কারণে যেমন ব্যাপক পরিচিতি পায়, তেমনি গণজাগরণবিরোধী তথা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীদের দ্বারা ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যা এবং নানা অপপ্রচারও খুব সাধারণ মানুষের মধ্যে ভাবনা জোগায়। মিথ্যাচার এবং ‘ট্যাগিং’কে এরা নিজের শক্তি প্রমাণে অন্যায়ভাবে কাজে লাগায়। আপনার মতের বিরুদ্ধে গেলেই আপনি ইচ্ছা বা খুশিমতো ট্যাগিং করবেন, এমন প্রবণতা ব্যাপকভাবে বিস্তার পায়। পরস্পর সম্মানবোধ ও সহিষ্ণুতার অপব্যবহার হয়। ‘ট্যাগিং’ একরকম অসুখ বলতে পারেন। আমাদের তো নানা সময়ে যে যার মতো করে বিভিন্নভাবে ‘ট্যাগ’ করেছে। কেউ বলেছেন আমরা আওয়ামী ঘরানার, আবার অনেকে বলেছেন জামাতি। কিন্তু আমি বলব, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যখন নিরপেক্ষভাবে কাজ করে, তখনই সবাই যে যার মতো ট্যাগ করতে থাকে। নিরপেক্ষ না হলে এমন হয় না। ‘আমার ব্লগ’-এর কথা বলতে পারি। এটা আওয়ামী ঘরানার ব্লগ হিসেবে স্বীকৃত, এদের পোস্ট বা মতাদর্শ বা ব্লগ কর্তৃপক্ষও নিজেদের অবস্থান সব সময় স্পষ্ট করেছে। আবার ‘সোনার বাংলা ব্লগ’ জামাতি ব্লগ, সেটা বর্তমান সরকার বন্ধও করে দিয়েছে। আমাদের ক্ষেত্রে আবারো বলব, আমরা প্রথম দিন থেকেই নিরপেক্ষ। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নিরপেক্ষ প্ল্যাটফর্ম সামহোয়্যার ইন ব্লগ। আমাদের বিন্দুমাত্র কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বা সহযোগিতা নেই। আমরা শুরু থেকেই নিজেদের আউটসোর্সিং থেকে পাওয়া টাকা দিয়ে ব্লগটি চালিয়ে আসছি। এখন কিছু বিজ্ঞাপন যাচ্ছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত নিজেদের পয়সা দিয়েই এটা চালাতে হয়। আমরা শুরু করেছিলাম মাত্র কয়েকটি চেয়ার-টেবিল নিয়ে, তিন রুমের একটা বাসায়। এর পর আস্তে আস্তে এগিয়েছি। এখন তো দেশে অনেক ব্লগার। ব্লগের মাধ্যমে লেখক তৈরি হয়েছে, সাংবাদিক তৈরি হয়েছে। একুশে বইমেলায় যখন দেখি ব্লগারদের প্রচুর বই বেরিয়েছে, খুব ভালো লাগে। মনে হয়, কিছু একটা করতে পেরেছি, লেখক তৈরির একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পেরেছি।
এনটিভি অনলাইন : অনেকেই সমালোচনা করে বলে থাকেন যে ব্লগাররা শুধু ভার্চুয়াল জগতেই বিদ্যমান। সেখানেই তারা সচল, কিন্তু বাস্তবে মাঠে নেমে কাজ করার ক্ষেত্রে তাদের পাওয়া যায় না। ব্লগ এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি পর্যন্তই।
উত্তর : আমি সেটা মনে করি না; বরং ব্লগার কমিউনিটি ও সোশ্যাল মিডিয়া অনেক বেশি সচেতন এবং সচল অনেকের চেয়ে। বেশ কিছু ঘটনার কথা বলতে পারি। ব্লগাররা সেই শুরু থেকেই কল্যাণমূলক কাজে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং ভয়াবহ ‘সিডর’ ও ‘আইলা’ মোকাবিলা থেকে শুরু করে আজ অবধি বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ, প্রতিবছর শীতবস্ত্র বিতরণ এবং বিপন্ন মানুষের প্রাণরক্ষায় ব্লগাররা একত্র হয়ে নিঃস্বার্থ কাজ করে আসছেন। তাঁরা কিন্তু এক হয়েছেন ব্লগিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। আমাদের যাত্রা শুরু ২০০৫ সালে আর ফেসবুকের সঙ্গে আমাদের দেশের মানুষ পরিচিত হয় ২০০৭ সালের দিকে। ২০০৯ থেকে ২০১১—এই সময়ের মধ্যে ফেসবুকের প্রসার ঘটে। আগে যাঁরা ব্লগিং করতেন, তাঁরাই কিন্তু ফেসবুকে নিজেদের কমিউনিটিটা তৈরি করে নেন। সিনেমাখোরদের আড্ডা যেমন সিনেমা নিয়ে কাজ করে। এঁদের শুরুটা ব্লগ থেকে, এখন কিন্তু ফেসবুকের গ্রুপেও তাঁরা অ্যাকটিভ। রানা প্লাজার কথা বলব। ওই দুর্ঘটনার পর ব্লগাররা একসঙ্গে কাজ করেছেন। নিজেরা উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছেন। সেখান থেকে আপডেট জানিয়েছেন। টাকা সংগ্রহ করেছেন; রক্ত, অক্সিজেন, ওষুধ সংগ্রহ করেছেন। ওই সময়ে ব্লগাররা যে যেভাবে পেরেছেন, মাঠে নেমে কাজ করেছেন।
এনটিভি অনলাইন : ‘ব্লগার’ শব্দটির পাশাপাশি আরেকটি শব্দ প্রচলিত আছে ‘পেইড ব্লগার’। এর অস্তিত্ব কি আছে?
উত্তর : আমরা কিন্তু প্রথম থেকেই নিজেদের অর্থায়নে ব্লগটাকে চালিয়ে এসেছি। এখন পর্যন্ত কোথাও বিজ্ঞাপন দিইনি সেভাবে। মানুষের মুখে মুখেই আমাদের ব্লগের কথা ছড়িয়েছে। ২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নিজেদের পয়সা খরচ করে ব্লগটা দাঁড় করিয়েছি। চার বছর পর, ২০০৯ থেকে আমরা সাইটে বিজ্ঞাপন নেওয়া শুরু করি। আমি বলব যে ‘পেইড ব্লগার’ একটি আক্রমণাত্মক শব্দ। এখানেও সেই ‘ট্যাগিং’ চলে আসছে। আমাদের দেশে পেইড ব্লগার বলে কাউকে হেয় করার চেষ্টা করা হয়, বোঝানো হয় যে নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছে সে। এখন এমন হতে পারে যে, কোনো জনপ্রিয় ব্লগার রয়েছেন, তাঁর জনপ্রিয়তাকে কেউ কাজে লাগিয়ে নিজেদের বিজ্ঞাপন করতে চাচ্ছে। যেমন ধরুন সাবান বা শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপন হতে পারে। সেই ব্লগার সেটা নিয়ে লিখতে পারেন, এটা তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। এর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই এবং বিজ্ঞাপননির্ভর পোস্ট আমরা অনুমোদন করি না। বিশ্বজুড়ে অনেক ব্লগারই লেখালেখি করে ব্লগিং করে আয় করছেন। সেটা একেবারেই ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক। সে বিবেচনায় বিশ্বজুড়ে পেইড ব্লগিং প্রচলিত। সেটা আলাদা বিষয়। কিন্তু আমাদের ব্লগে পেইড ব্লগারের কোনো অস্তিত্ব নেই। আমরা কাউকে ব্লগিংয়ের বিনিময়ে কোনো অর্থ দিই না। আমরা কেবল মত প্রকাশের স্বাধীনতা বা ব্লগিং সুবিধাদানকারী একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করি। তবে ‘ব্লগ’, ‘ব্লগিং’ এবং ‘ব্লগার’ শব্দগুলো ২০১৩ সালে চূড়ান্ত অপপ্রচারের মুখে পড়ে। এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য দৈনিক ইত্তেফাকের সঙ্গে আমাদের সামহোয়্যার ইন ব্লগের একটি মিডিয়া-বন্ধন তৈরি হয়েছে। আমাদের এখানে যেসব পোস্ট ছাপা হয়, সেখান থেকে বাছাইকৃত কিছু লেখা আমরা পাঠিয়ে দিই এবং ইত্তেফাকে আমাদের ব্লগারদের বাছাই করা লেখা ছাপা হয় নিয়মিত। আমরা টপিক ব্লগের আয়োজন করে থাকি। গত রমজানে ইউনিলিভারের সঙ্গে এ রকম একটি আয়োজন করেছিলাম, যেখানে ব্লগাররা রমজানে কীভাবে মানুষ নিজেদের সংযমে নিয়োজিত করবে, সে বিষয় নিয়ে লিখেছিলেন। সেখান থেকে সেরা ব্লগারদের পুরস্কৃত করেছিল ইউনিলিভার।
এনটিভি অনলাইন : ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ ব্লগের ক্ষেত্রে বহুল উচ্চারিত একটি শব্দ। এটাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
উত্তর : ব্লগিং প্ল্যাটফর্মটাই কিন্তু স্বাধীন মত প্রকাশের জায়গা। স্বাধীনভাবে কথা বলা বা মত প্রকাশ মানুষের অধিকার। আমার যদি কারো মত পছন্দ না হয়, তাহলে আমি আমার যুক্তি দিয়ে তার সঙ্গে বিতর্ক করব। এখানে নৈতিকতার বিষয়টি চলে আসে। আমি মনে করি, আরেকজনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার ক্ষেত্রে আমার ততটুকু বলার স্বাধীনতা আছে, যতটুকু তাঁর স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন না করে। যখন মানুষ যুক্তিতর্কে হেরে যায়, তখনই একজন আরেকজনকে ‘পাগল’ বলে বা আঘাত করে। আপনি আপনার যুক্তিগুলো তুলে ধরে দ্বিমত পোষণ করতেই পারেন।
এনটিভি অনলাইন : গণজাগরণ মঞ্চের সময় ব্লগার রাজীব হায়দারের হত্যাকাণ্ড বা বইমেলায় অভিজিৎ, ঢাকার ওয়াশিকুর বা সিলেটের বিজয় হত্যাকাণ্ড নিয়ে কী বলবেন?
উত্তর : এটা আমাদের অসহিষ্ণুতার প্রমাণ। গণজাগরণ মঞ্চের সময় থেকে ‘ব্লগ’ ও ‘ব্লগার’—এই দুটো বিষয়কেই ‘নাস্তিক’ ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। সে সময় খালেদা জিয়া সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের সামনে ব্লগারদের ‘নষ্ট ছেলে’, ‘নাস্তিক’ বলেছেন। একটা নেতৃত্ব পর্যায় থেকে এমন মনগড়া মন্তব্য চূড়ান্ত দায়িত্বহীনতা এবং বিপজ্জনক। এই দায়িত্বহীনতার সুযোগ নিয়ে সে সময় কোনো কোনো জুমার নামাজের সময় মসজিদের ইমামরা ব্লগারদের নাস্তিক বলেছেন। এগুলো মানুষের মনে ‘ব্লগ’ এবং ‘ব্লগার’ বিষয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। যিনি কোনো দিন ব্লগিং করেননি, এমনকি ব্লগ কী তা-ও জানেন না—সেই মানুষও ব্লগারদের নাস্তিক বলে জানে। দৈনিক আমার দেশ ব্লগিং নিয়ে সীমাহীন অপপ্রচার করেছে সে সময়। এগুলো ধর্মভীরু সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্লগ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। মানুষ ভেবেছে, ব্লগিং মানেই অন্যায়, খারাপ কিছু। এসব অপপ্রচারের কারণে ব্লগ এবং ব্লগারদের বড় একটা ক্ষতি হয়েছে, বিপদের মুখে পড়েছে। তাদের সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে; ভীষণভাবে কলুষিত করা হয়েছে। আমাকে নানা সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্লগাররা ফোন দিয়েছেন। রাজশাহীর পুঠিয়া থেকে একদিন একজন ফোন করে জানিয়েছিলেন, তাঁদের এলাকার মসজিদের ইমাম জুমার নামাজের বয়ানে ব্লগারদের ‘নাস্তিক’ বলেছেন।
আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারার মাধ্যমে ব্লগারদের আরো কোণঠাসা করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, যদি ইন্টারনেটের কোনো লেখায় কারো অনুভূতিতে আঘাত লাগে, তবে সে পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে পারবে এবং পুলিশ অভিযুক্তকে বিনা ওয়ারেন্টিতে গ্রেপ্তার করতে পারবে। এর মাধ্যমে পুলিশকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তার ব্যাপক অপব্যাখ্যা এবং অপব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তারা এখন চাইলেই যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে বা হয়রানি করতে পারে। আইসিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে অন্যায়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আর পরিস্থিতির কারণে ব্লগাররা নিজেরাই এখন সেলফ সেন্সরশিপ করছেন। একাধিক ব্লগার হত্যাকাণ্ডের কারণে ব্লগারদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি মর্মান্তিক এবং এ বিষয়ে জরুরি সরকারি পদক্ষেপ আশা করি।
ঢাকার মহাখালীতে ওয়াশিকুর নামের যাকে হত্যা করা হলো, সে কিন্তু আসলে ব্লগার নয়। খুবই সাধারণ একটি ছেলে, সোশ্যাল মিডিয়া/ফেসবুকে লিখত। আমি তাকে কোনো ব্লগিং প্ল্যাটফর্মে খুঁজে পাইনি। অপপ্রচার এবং ট্যাগিংয়ের জন্য ব্লগিংয়ের মতো সম্ভাবনাময় একটা জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ গণতন্ত্র এবং মুক্তমত চর্চার অন্যতম জায়গা হলো ব্লগ।
এনটিভি অনলাইন : নিজের নিরাপত্তা নিয়ে কি আপনি উদ্বিগ্ন?
উত্তর : হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। আমরা তো শুরু থেকেই এসব অপপ্রচারের শিকার। যার যখন যেভাবে সুবিধা আমাদের জামাতি বা আওয়ামী বলে ট্যাগ করেছে। ফেসবুকে আমাদের নামে অপপ্রচার করা হয়েছে। আমার এবং আমার স্বামীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে পেজ খোলা হয়েছে। হত্যার হুমকি তো অহরহই আসছে। আমার বাচ্চাটা স্কুলে যায়, ওকে নিয়ে টেনশনে থাকি। গণজাগরণের সময় আমাদের ব্লগকে জামাতি ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। আবার জামাতিদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আমরা বিদেশি চর; আওয়ামী এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছি। এর মাধ্যমে আসলে মর্যাদাহানির চেষ্টা করা হচ্ছে আমাদের।
এনটিভি অনলাইন : ২০০৫ সালে শুরু, এখন ২০১৫। ১০ বছরের যাত্রাটা কেমন ছিল?
উত্তর : অপপ্রচার যেমন ছিল, তেমনি ব্লগারদের মধ্যে ঐক্য ছিল। সে কারণেই ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম এখনো টিকে আছে। আমিনবাজারে একবার একটি বাস দুর্ঘটনা ঘটেছিল। সেখান থেকে একজন ব্লগার একটি পোস্ট দিয়ে সবাইকে জানিয়েছিলেন এবং সাহায্য চেয়েছিলেন। ওই এলাকার আশপাশের ব্লগাররা সবাই সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে গিয়েছিলেন ওখানে। ১০/১৫ জন ব্লগার মিলে সেখানে উদ্ধারকাজে অংশ নেন। এ রকম আরো উদাহরণ আছে। রক্তদান নিয়ে ব্লগারদের আলাদা কমিউনিটি আছে। জরুরি প্রয়োজনে রক্ত লাগলে মানুষ ব্লগে পোস্ট দেন। আমরা সেগুলো স্টিকি করি, যাতে আরো মানুষ জানতে পারেন। ২০০৬ সালে ব্লগারদের প্রচেষ্টায় প্রাপ্তি নামের একটি মেয়ের জীবন বাঁচানো হয়েছিল। প্রাপ্তির ফুপু একজন ব্লগার। তিনিই প্রথম বিষয়টি নিয়ে ব্লগে পোস্ট করেছিলেন। তার পর আমরা সবাই মিলে প্রাপ্তির জন্য কাজ করেছি। প্রাপ্তির ব্লাড ক্যানসার হয়েছিল, সবাই মিলে আমরা প্রাপ্তিকে বাঁচাতে পেরেছিলাম। চার বছর বয়সে মেয়েটার ক্যানসার ধরা পড়েছিল। এখন সেই প্রাপ্তির বয়স ১৪ বছর। সে পুরোপুরি সুস্থ। ক্লাস নাইন বা টেনে পড়ে।
রাজশাহীতে শাশ্বত সত্য নামে একজন ব্লগার ছিলেন। তাঁর হাড়ের সমস্যা ছিল। তখনো ব্লগাররা সবাই এক হয়ে কাজ করে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন। সত্য কিছুদিন আগে আমেরিকা থেকে বড় একটা কোর্স করে এসেছেন। ১২ বছর বয়সী উপমা নামের একটা মেয়ের হার্ট অপারেশনের জন্য অনেক টাকার দরকার ছিল। সেখানেও ব্লগাররা নিজেদের মতো করে এগিয়ে এসেছিলেন। এই যে সবাই একসঙ্গে ভালো কিছুর জন্য কাজ করা, এটাই ব্লগের শক্তি। আমার মনে হয়, মিডিয়াকেও এসব ব্যাপারে সচেতন হবে। ব্লগিং নিয়ে যেসব অপপ্রচার হয়, তার বিরুদ্ধে। ব্লগার মানেই নাস্তিক নয়, এটা মানুষকে বোঝাতে হবে।