রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে চ্যালেঞ্জ নিতে হবে : উপাচার্য
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয় গোটা বিশ্বের সম্পদ। আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বৃদ্ধি বা উন্নতি হয়েছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকলে চলবে না, চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। বিশাল মানবগোষ্ঠী আজ বড় চ্যালেঞ্জ। একে মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে, ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’
আজ সোমবার বেলা ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় উপাচার্য অধ্যাপক মিজানউদ্দিন এ কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মুহাম্মদ এন্তাজুল হকের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সারওয়ার জাহান, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ছাদেকুল আরেফিন মাতিন ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সায়েন উদ্দিন আহমেদ।
অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ‘আজ থেকে ৬২ বছর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পদযাত্রা শুরু। আজ ৬৩ বছরে পা দিতে চলেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয় যত পুরোনো হয়, ততই সমৃদ্ধ হয়। ১২ শতকের অক্সফোর্ড এরই পরিচয় বহন করে। এখানেও পাল আমলে সোমপুর বিহার ছিল। সেখানকার উপাচার্য অতীশ দীপঙ্কর সুদূর চীনে গিয়ে আলো ছড়িয়েছেন। যে সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল, তখন ছিল অন্ধকার। সেই সময় থেকে এখনো বিশ্ববিদ্যালয়টি অন্ধকার দূর করে আলো ছড়াচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘দেশভাগের আগে প্রশাসনিকসহ নানা কাজে রাজশাহীর সঙ্গে কলকাতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ঢাকা, চট্টগ্রামের সঙ্গে অতটা ভালো যোগাযোগ ছিলো না। কিন্তু দেশভাগ হয়ে গেলে পূর্ব বাংলার প্রাণকেন্দ্র হয়ে যায় ঢাকা। আর উত্তরবঙ্গে শিক্ষিত মানুষও ছিল হাতে গোনা অল্প কয়েকজন। ফলে উত্তরবঙ্গ আরো পিছিয়ে যেতে থাকে। এ অবস্থায় উত্তরবঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিন বলেন, ‘রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় কি চলবে?’ ৩০০ হেক্টর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এটি আজ দেশের অন্যতম বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়।’
চৌধুরী সারওয়ার জাহান আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা রাজনীতি অবশ্যই করবে। কিন্তু আদর্শহীন, দুর্নীতিপরায়ণ কিছু ছাত্র সংগঠনের শিক্ষার্থীদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় জিম্মি হয়ে পড়েছে। শিক্ষার দর্শন আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য জ্ঞান সৃষ্টি করা এবং তা ছড়িয়ে দেওয়া। যেখানে নাবিকের মতো শিক্ষকরা চালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন। আজ সেখানে কিছু শিক্ষার্থীর কাছে শিক্ষকরাও জিম্মি।’
এর আগে সকাল ১০টায় সিনেট ভবন চত্বরে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন ও উপ-উপাচার্য চৌধুরী সারওয়ার জাহান। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি আবাসিক হলেও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর দিবসটি উপলক্ষে বৃক্ষরোপণ করা হয়। পরে সাড়ে ১০টায় এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনের প্যারিস রোড থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সেখানে গিয়ে শেষ হয়।