বড় ভাইকে ফাঁসাতে স্ত্রীকে হত্যা, সঙ্গে ছিল ছেলে-ভাতিজা
প্রতিপক্ষ বড় ভাইকে ফাঁসানোর জন্য টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় চার সন্তানের জননী সুফিয়া বেগমকে পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেছেন তাঁর স্বামী, ছেলে ও ভাতিজা। এ কথা স্বীকার করে স্বামী আলাল উদ্দিন আজ বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে টাঙ্গাইল আদালতের পুলিশ পরিদর্শক তানভীর আহম্মেদ জানান, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলামের আদালতে আজ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন নিহতের স্বামী আলাল উদ্দিন। এ ছাড়া অপর দুই আসামিকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
গত সোমবার সকালে মির্জাপুর থানা পুলিশ উপজেলার আজগানা বিল থেকে সুফিয়া বেগমের মৃতদেহ উদ্ধার করে। সুফিয়া বেগম ওই গ্রামের আলাল উদ্দিনের স্ত্রী।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপারের সভাকক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার রঞ্জিত কুমার রায় জানান, গত ১৪ অক্টোবর মির্জাপুরের আজগানা এলাকার আউলিয়াবাদ এলাকা থেকে সুফিয়া বেগম নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরের দিন নিহতের ভাই বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। পরে পুলিশের বিভিন্ন সোর্স এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নিহতের স্বামী আলাল উদ্দিন, ছেলে শরিফুল ইসলাম ও ভাতিজা স্বপন মিয়াকে আটক করা হয়। পরে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে, বড় ভাই মিনহাজের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও থেকে কয়েক লাখ টাকা ঋণ তোলা হয়েছিল সুফিয়ার নামে। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এবং ঋণের হাত থেকে রেহাই পেতে ভাতিজা ও তিনি নিজেই পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে বিলের পানিতে লাশ ভাসিয়ে দেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
পুলিশ জানায়, আলাল উদ্দিনের সঙ্গে বড় ভাই মিনহাজের দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে বড় ভাই মিনহাজকে ফাঁসানোর জন্য আলাল উদ্দিন নিজের স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য নিজের বড় ছেলে মাদক বিক্রেতা শরীফুল ইসলাম ও সম্বন্ধী কালিয়াকৈর উপজেলার মাটিকাটা গ্রামের মোতালেব হোসেনের ছেলে স্বপন মিয়াকে টাকা ও জমির লোভ দেখায়। পরে গত শনিবার রাতে আলাল উদ্দিন ছেলে শরীফুলকে দিয়ে তাঁর মাকে মাদক আনার কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে নেন। বাড়ির পাশে আজগানা বিলের কাছে পৌঁছালে সেখানে স্বামী আলাল উদ্দিনকে দেখে স্ত্রী সুফিয়া বলেন, তুমি এখানে কেন? এর জবাবে আলাল উদ্দিন স্ত্রীকে বলেন, দুজনে বিলে গোসল করলে আমাদের রোগবালাই ভালো হবে। এতে সরল বিশ্বাসে সুফিয়া স্বামীর সঙ্গে বিলের পানিতে নামেন। সেখানে আলাল হাতে থাকা চাকু দিয়ে সুফিয়াকে হত্যার চেষ্টা করেন। পরে আলাল উদ্দিন, ছেলে শরীফুল ও ভাতিজা স্বপন পানিতে নেমে হাত-পা ধরে চুবিয়ে সুফিয়াকে হত্যা করে বাড়ি চলে যান।
এ ব্যাপারে গত সোমবার সুফিয়ার ভাই মেছের আলী বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই দিন রাতে পুলিশ স্বামী আলাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁর দেওয়া তথ্য মতে গতকাল বুধবার রাতে মির্জাপুর থানা পুলিশ আলাল উদ্দিনের বাড়ি থেকে ছেলে শরীফুল ও ভাতিজা স্বপনকে গ্রেপ্তার করে।