দেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে আছে : সিপিডি
গত ১০ বছরে দেশের অর্থনীতি সবচেয়ে চাপের মধ্যে আছে বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলা, খেলাপি ঋণ, পুঁজিবাজারে ধস ও নেতিবাচক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধিসহ অর্থনীতিতে বড় ধরনের অশনি সংকেত দেখছে সংস্থাটি।
অর্থনীতির এমন বাস্তবতা দেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধির হিসেবের সঙ্গে মোটেই সামঞ্জস্পূর্ণ নয় বলে মনে করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
আজ রোববার চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের বাজেট মূল্যায়ন নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেন সিপিডির গবেষকরা।
গত এক দশক ধরেই দেশের ব্যাংকিং খাতে চলছে বিশৃঙ্খলা। বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কমে যাওয়া, তারল্য সংকট এবং ঋনের তুলনায় সঞ্চয়ের নেতিবাচক প্রবাহ চরম চাপে ফেলেছে ব্যাংকিং খাতকে। সেইসাথে আছে পাহাড়সম খেলাপি ঋণ। মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ও সুশাসনের অভাবে পুঁজিবাজারেও ধস নেমেছে বলে মনে করছে সিপিডি। সুখবর নেই বৈদেশিক লেনদেনেও। রপ্তানিতে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, যা গত ১০ বছরে প্রথম।
অর্থনীতির এমন দশা একদিনে হয়নি, কয়েকবছর ধরেই যেমন বাড়ছে খেলাপি ঋণ তেমনি তারল্য সংকটও বেড়েছে। কিন্তু তারপরও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে আট শতাংশ ছাড়িয়েছে। তাই সিপিডির কাছেও এর উত্তর নেই। ড. দেবপ্রিয় বলছেন, ‘তথ্য-উপাত্তের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন নয় জিডিপি প্রবৃদ্ধির চিত্র।’
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘জিডিপির অংশ হিসেবে ২৩ শতাংশের ভেতরে আমার ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ওঠানামা করছে। অথচ প্রবৃদ্ধি পাঁচ থেকে ছয়, ছয় থেকে সাত, সাত থেকে আটে চলে গেল। ব্যক্তি খাতের লোকেরা টাকা ফেরত দিচ্ছে না ব্যাংকের ভেতরে সেখানে তারল্যের সমস্যা রয়েছে এবং উনারা বলছেন উনারা লাভ করতে পারছেন না তার পরও প্রবৃদ্ধি পাচ্ছে। পুঁজিবাজারের ভেতরে বড় ধরনের সংকট তার পরও প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির পরিমিতি এখন একটি সুতা কাটা ঘুড়ির মতো। অর্থাৎ বাস্তবতার সাথে যে সুতার সংযোগ থাকে এটি আর নেই।’
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা ক্রমান্বয়ে এই যে দূর্বলতা গুলো সামাল দেওয়ার জন্য ক্যাশ ইনসেনটিভের দিকে যাচ্ছি। এটাও একটা অশনি সংকেত।’
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, ‘খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত যে সমস্যা এটাকে কোনোভাবেই আন্ডারমাইন করে দেখা উচিত নয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আইসল্যান্ডে এ ধরণের ল্যাভারেজ হয়েছিল। ক্যাপিটাল মার্কেট ড্রাই হয়ে গিয়েছিল। আর্থিক খাত জর্জরিত হওয়ার কারণে ব্যাংক ব্যবস্থার ধস নেমেছিল। আফ্রিকার অনেক দেশে এই সমস্যা রয়েছে।’
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, ‘পুঁজিবাজারে দুষ্টচক্র আবার নতুন করে ঘোরা শুরু করেছে। সুতরাং এ জায়গা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসার জন্য কার্যক্রম দরকার।’ তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারের সমস্যাটি অর্থ সংকট জনিত কোনো সমস্যা নয়। পুঁজিবাজারের সমস্যা হচ্ছে এর সুশাসন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর দুর্বলতা।’
সম্প্রতি ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে অবৈধ অর্থের যে চিত্র এসেছে, তা খেলাপি ঋণ, পাচার হওয়া অর্থের মতো অবৈধ অর্থেরই একটা ক্ষুদ্র অংশ বলে মনে করে সিপিডি।