বেসরকারি খাতে ১৫% ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের
চলতি অর্থবছরের (২০১৫-১৬) প্রথমার্ধের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ জোগানের ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আগের অর্থবছরে এ খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি অর্জন হয় ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, আগের মুদ্রানীতির অর্থায়ন সচল রাখার পাশাপাশি নতুন দুটি বিষয় যোগ হবে এবারের মুদ্রানীতিতে। এ মুদ্রানীতি প্রবৃদ্ধিবান্ধব হবে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এবারের মুদ্রানীতিতে যোগ হওয়া নতুন দুটি অর্থায়নের প্রথমটি হলো- অভ্যন্তরীণ ও রপ্তানি উভয় বাজারের জন্য উৎপাদনমুখী প্রকল্পগুলোর মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদি বৈদেশিক মুদ্রা অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক থেকে আহরণ করা ৩০ কোটি ডলারের একটি তহবিল। আর দ্বিতীয়টি হলো- রপ্তানিমুখী বস্ত্র, পোশাক ও চামড়াশিল্পে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া অবলম্বনের অর্থায়নের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব ২০ কোটি ডলার পুনরর্থায়ন সহায়তা।
আইপিপিএফ প্রকল্পটিও ২০১৫ সালের ডিসেম্বর নাগাদ সম্পন্ন হওয়ার পর চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে বর্ধিত মাত্রায় নবায়নের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, উৎপাদন কর্মোদ্যোগের জন্য বিবিধমুখী এসব নীতি সমর্থন সংকুলান করে প্রণীত হয়েছে ২০১৬ অর্থবছরের মুদ্রানীতি কার্যক্রম। এর প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ভঙ্গি- যা সামাজিক ন্যায়বোধভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তার পাশাপাশি ঋণ জোগানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্ফীতি এড়িয়ে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি পরিমিতি এবং সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা জোরালো করবে।
দেশজ উৎপাদনে ৭ শতাংশ প্রকৃত প্রবৃদ্ধি এবং ৬ দশমিক ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির মাত্রা ধরে অভ্যন্তরীণ ঋণ জোগানের প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপিত হয়েছে বিগত অর্থবছরের প্রাক্কলিত ১০ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বিপরীতে ২০১৬ অর্থবছরের জন্য ১৬ দশমিক ৩ শতাংশে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ জোগানের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলিত হয়েছে আগের অর্থবছরের প্রাক্কলিত ১৩ দশমিক ৬ শতাংশের বিপরীতে ২০১৬ অর্থবছরে ১৫ শতাংশে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, সরকারি খাতে ঋণ জোগানে ২০১৬ সালের ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন আপাতদৃষ্টে উচ্চ প্রতীয়মান হচ্ছে মূলত বিগত অর্থবছরে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির কারণে। ব্যাপক মুদ্রার প্রবৃদ্ধি বিগত অর্থবছরের ১৩.১ শতাংশের বিপরীতে ২০১৬ অর্থবছরের জন্য ১৫.৬ শতাংশে প্রাক্কলিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভ মুদ্রা জোগানে আগের অর্থবছরের ১৪.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বিপরীতে ২০১৬ অর্থবছরের জন্য প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ।
দেশে বিনিয়োগ কার্যক্রম জোরদার হওয়ার ফলে ব্যাংকিং খাতের নিট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধি আগের অর্থবছরের চেয়ে মন্থর হয়ে ৫.২ শতাংশে দাঁড়াবে। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের বর্তমান বৃদ্ধি হারেও শিথিলতা আসবে। বৈদেশিক লেনদেনের চলতি খাতের ঘাটতিও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ জোরদার হওয়ার কারণে বাড়বে, তবে জিডিপির দুই শতাংশের মতো মাত্রার প্রাক্কলিত ঘাটতি কোনো উদ্বেগের কারণ হবে না।
নতুন অর্থবছরের মুদ্রানীতি কার্যক্রম ঋণ জোগানের প্রবৃদ্ধি প্রকৃত দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মাত্রায় পরিমিত রাখলেও পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট এবং খাদ্য ও জ্বালানিবহির্ভূত কোর মূল্যস্ফীতিতে নিম্নগামী প্রবণতা সুস্পষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নীতি সুদহার অর্থাৎ রেপো, রিভার্স রেপো সুদহার সঙ্গতিপূর্ণ মাত্রায় নামিয়ে আনার বিবেচনায় নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নতুন অর্থবছরের মুদ্রানীতি কার্যক্রমের আওতায় অন্তর্ভুক্তিমূলক, পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন উৎপাদনমুখী উদ্যোগ দক্ষভাবে সঞ্চালনের লক্ষ্যে আর্থিক খাতে ঋণ শৃঙ্খলা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, করপোরেট সুশাসন ও জবাবদিহিতার ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় নজরদারির বিষয়গুলো ২০১৬ অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণাপত্রে পুনরুক্ত হয়েছে।