অর্থপাচার রোধে প্রাতিষ্ঠানিক নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
অর্থপাচার ও সন্ত্রাসরোধে দেশের বিভিন্ন খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নিজ নিজ নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর বিধানগুলো যথাযথভাবে পরিপালনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সম্প্রতি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সচিবালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক জি এম আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার, মূল্যবান ধাতু ও পাথরের ব্যবসায়ী, ট্রাস্ট ও কোম্পানি সেবা প্রদানকারী, আইনজীবী, নোটারি, অন্যান্য আইন পেশাজীবী এবং অ্যাকাউনট্যান্টদের সংশ্লিষ্ট আইন মেনে চলতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিএফআইইউর ওই সার্কুলারের মাধ্যমে বিভিন্ন রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে অর্থপাচার এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে একটি নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রাহক পরিচিতির যথাযথ তথ্য সংগ্রহ এবং ওই তথ্য যাচাই করতে হবে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়া গ্রাহকের ঝুঁকি বিবেচনাপূর্বক ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপনের আগে বা ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপনের সময় তাদের পরিচিতি যাচাই করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন গ্রাহকের প্রতিটি লেনদেনের ক্ষেত্রে বার্ষিক ভিত্তিতে তাদের পরিচিতি হালনাগাদ এবং অন্য গ্রাহকদের ক্ষেত্রে একটি লেনদেন সম্পাদনের দুই বছরের মধ্যে পরিচিতি হালনাগাদ করার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
তা ছাড়া গ্রাহক পরিচিতির সন্তোষজনক তথ্য পাওয়া না গেলে এবং যাচাই করা সম্ভব না হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের গ্রাহকের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন না করা বা তাদের সঙ্গে স্থাপিত সম্পর্ক বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি বিদেশি রাজনৈতিক ব্যক্তি, প্রভাবশালী ব্যক্তি বা আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান বা উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে বিশেষ নির্দেশ মানতে বলা হয়েছে।
ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অন্য প্রতিষ্ঠানের মতো নগদ লেনদেন প্রতিবেদন এবং সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট করার বিধান রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান পরিবীক্ষণের লক্ষ্যে বর্তমানে তৃতীয় পর্বের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এ মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় উপরোক্ত সেক্টরের মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রম বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা হবে। ওই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সফলভাবে মোকাবিলার লক্ষ্যে এবং সেক্টরের মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রম সুসংহতকরণের লক্ষ্যে বিএফআইইউ কর্তৃক ওই সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
আলোচ্য সার্কুলারের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে উক্ত সেক্টরের কার্যক্রম আরো সুসংহত হবে বলে বিএফআইইউ মনে করছে।
এরই মধ্যে এ সার্কুলারের বিষয়বস্তু নিয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস), ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি), ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে জারীকৃত এ সার্কুলারটি অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে সহায়ক হবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।