বিয়ের তারিখ ঠিক করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহত
কাতারপ্রবাসী ইমন হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সুনামগঞ্জ দিরাই উপজেলার এক মেয়ের সঙ্গে। দেশে এলে বিয়ের দিন ঠিক করতে নারায়ণগঞ্জ থেকে আত্মীয়-স্বজন নিয়ে মাইক্রোবাসে করে সেই মেয়ের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন ইমন। কিন্তু হবু শ্বশুর বাড়ি আর পৌঁছাতে পারেননি তাঁরা।
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কান্দিগাঁও নামক স্থানে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে চুরমার হয়ে যায় সেই মাইক্রোবাস। এতে ঘটনাস্থলে ইমন, তাঁর বাবা ও ছোট ভাইসহ আটজনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে মারা যায় তাঁদের দুই স্বজন, মা-মেয়ে।
গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে শেরপুর হাইওয়ে থানা পুলিশ, নবীগঞ্জ থানা পুলিশ ও নবীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি দল উদ্ধার কাজ পরিচালনা করে। পরে রাত ১১টায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই
মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে শেরপুর হাইওয়ে থানা পুলিশ।
পুলিশ জানায়, নারায়ণগঞ্জ থেকে একটি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্টো- চ-১৯৫৪৬২) নিয়ে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উদ্দেশে বের হন ইমন ও তাঁর স্বজনরা। বেপরোয়া মাইক্রোবাসটি নবীগঞ্জ উপজেলার কান্দিগাঁও নামক স্থানে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে ঘটনাস্থলে আটজন নিহত হয়। আহত হয় চারজন। তাদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে দুজনের মৃত্যু হয়।
গাড়ির চালক নাদিম জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে বিয়ের কনে দেখতে সুনামগঞ্জের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন তাঁরা। পথে নামাজের বিরতি নিয়ে আবার রওনা হলে তাদেরকে বাঁপাশ দিয়ে অন্য একটি মাইক্রোবাস ওভারটেক করে। একই সময় বিপরীত দিক থেকে আসা এনা পরিবহনের একটি বাসকে সুযোগ দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে থাকা একটি গাছে ধাক্কা লাগে।
এ ঘটনার পর ফতুল্লার ইদ্রিস মিয়ার ছেলে মো. মহসিন মিয়া (৫৭), মৃত আশরাফ আলীর ছেলে মো. আব্বাস উদ্দিন (৫০) ও তাঁর দুই ছেলে মো. ইমন হোসেন (২৫) ও মো. মাহবুব হোসেন রাব্বি (২১), মো. আবুল হোসেনের ছেলে মো. রাজিব মিয়া (২৫), মো. গনি তালুকদারের ছেলে মো. খলিল মিয়া (৩০), বরগুনার আমতলী উপজেলার মো. তোতা খাঁর ছেলে ইমরান হোসেন (২৬), বরিশালের মো. মজিবুর রহমানের স্ত্রী আছমা বেগম (৩৫) ঘটনাস্থলে নিহত হন।
তাৎক্ষণিক আশঙ্কাজনক অবস্থায় বেলায়েত হোসেনের স্ত্রী সুমনা বেগম (৩৫) ও মেয়ে খাদিজা আক্তারকে (৪) সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।
এ ব্যাপারে শেরপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এরশাদুল হক ভূঁইয়া দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। শেষে ময়নাতদন্ত ছাড়াই রাত সাড়ে ১১টার দিকে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।