সৈকত হাবিবের তিনটি কবিতা
হত্যার কথা যারা বলে
যারা আজ হত্যার কথা বলে
তারা আসলে কী অনুভব করে
তাদের পিতা নিহত হলে?
হত্যার রক্ত কি তাদের অস্তিত্বে ক্রন্দন তোলে না?
তাদের জমাট ক্রোধ কি হত্যাকারীকে প্রজ্বলিত করে না?
খুনের সপক্ষে যারা কথা বলে
কী করে তারা তাদের ভাই নিহত হলে?
একটি হত্যা আরো হত্যাকেই উৎসাহিত করে
মৃত্যু তখন এক অনিচ্ছুক উৎসবের দিকে যায়
আর আমরা তাকে সখেদে উদযাপন করি
যারা আজ হত্যার কথা বলে
কী করে তারা সন্তানের মৃত্যু হলে?
তাদের জিঘাংসা কি কেবলি ঘুমিয়ে থাকে?
হত্যাকে যারা আজ তাদের স্বপ্ন করে তুলেছে
মৃত্যুর শাদা হাত যদি তাদের চুম্বন করে
তারা কি নিজেও তাকে সহাস্য-চুম্বন করে
এই মৃত্যু-আয়োজন তাকে উদ্ভাসিত করে?
এই অসংখ্য কোষের শরীর
সময় যাকে নির্মাণ করেছে
অন্তহীন বছর ধরে
কোনো খুনির পিপাসা যখন তাকে
ছিন্নভিন্ন করে
আমরা কী করে ভাবি একে
ঘ ট না কে ব ল!
লোকটা ও রবীন্দ্রনাথ
লোকটা পারতো হতে রবীন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথ হতে পারতো লোকটা
অবশ্য সে সেলাই করে জুতো
বসে রাস্তার ধারে
চুল-দাড়িতে দেখতে তারে লাগে
অবিকল ঠাকুরমশাইর মতো
চণ্ডীপাঠ আর জুতো সেলাই তার
চলে একই পাতে
জুতো সেলাই সাঙ্গ হলেই দেখি
বই একটা উঠে আসে হাতে
লোকটা পারতো হতে রবীন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথ হতে পারতো লোকটা
অবশ্য সে করে সেলাই জুতো
জীবনভর কেবলই ছেঁড়া সুতো...
আমাদের বাজারপৃথিবী
একটি ছোট্ট নক্ষত্র আছে
তোমার হৃৎপিণ্ডপুরে
দেখিনি তাকে আমি কোনোদিন
তবু তারই স্পন্দন দেখি
আমার হৃদয়ে
এতো নক্ষত্রের উদয় ও অস্ত প্রতিদিন,
মানুষের হাতে
ম্লান হয়ে যায় দূর-তারকারা, হাসে মিটি মিটি
এতো এতো মানবতারকার ভিড়ে, তবু
কারো কারো হৃদয়, কোথাও-না-কোথাও
অদৃশ্য নক্ষত্র হয়ে জ্বলে
হয়তো তোমার ভেতর থেকে প্রোজ্জ্বল হয়
আমার ভেতরে।
কিন্তু আমাদের বাজারপৃথিবী প্রতিদিন
তাকে করে রাখে হাস্যকর আর অর্থহীন।