দেশে এসে বিয়ে, স্ত্রীসহ পুরো পরিবার কোয়ারেন্টিনে
ফ্রান্স থেকে দেশে এসে দুই সপ্তাহের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকেননি; বরং বিয়ে করেছেন। খবর পেয়ে প্রশাসন গিয়ে প্রবাসীর বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছে বর, নববধূসহ পুরো পরিবারকে। গতকাল মঙ্গলবার হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার করাব গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সপ্তাহখানেক আগে দেশে আসেন লাখাই উপজেলার এক ফ্রান্সপ্রবাসী। দেশে এসে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মঙ্গলবার ছিল তাঁর বিবাহোত্তর ওয়ালিমা অনুষ্ঠান। সরকারের নির্দেশনা ছিল, প্রবাসীদের দেশে এসে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। কিন্তু তিনি হোম কোয়ারেন্টিনে না থেকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
ফ্রান্সপ্রবাসীর দাবি, তাঁকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য সরকারের কোনো মহল থেকে বলা হয়নি। তাই তিনি এ বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এদিকে বিষয়টি জানতে পেরে লাখাই উপজেলা প্রশাসন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ওয়ালিমা অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর বাড়িতে গিয়ে বিয়ের পরবর্তী অনুষ্ঠানাদি বন্ধ করতে বলা হয়। তখন প্রবাসীর বিয়ের গেট ভেঙে ফেলা হয়। এরপর প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী নবদম্পতি নিজ গৃহে আইসোলেশনে চলে যান।
লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্চিতা কর্মকার বলেন, ওই প্রবাসী গত ১১ মার্চ ফ্রান্স থেকে দেশে ফেরেন। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তারপরও সতর্কতা হিসেবে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁকে ওই সময় থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বাধ্যতামূলকভাবে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা বলা হয়। কিন্তু প্রবাসী স্থানীয় প্রশাসনকে না জানিয়ে সোমবার একই উপজেলায় বিয়ে করেন। মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর বাড়িতে ছিল ওয়ালিমা (বৌভাত) অনুষ্ঠান। উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারে এবং তাতে গিয়ে বাধা দেয়।
সঞ্চিতা কর্মকার বলেন, ‘বৌভাতের অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোনো মেহমানকে সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। একই সঙ্গে বর ও কনেসহ ওই পরিবারের সদস্যদের আগামী ২৬ মার্চ পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে।’
ইউএনও জানান, ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরামর্শ অনুযায়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসক প্রতিদিন ওই পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন।
প্রবাসীর পারিবারিক সূত্র জানায়, করোনা প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা। এর অর্থ এই নয় যে তিনি করোনা আক্রান্ত। কিন্তু অতি উৎসাহী কিছু মানুষ প্রচার করছে, বর নাকি করোনায় আক্রান্ত। কোনো কোনো মিডিয়াও অপপ্রচার করছে। এ পরিস্থিতিতে তিনি ও তাঁর পরিবারের লোকজন সামাজিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।