মোস্তফা কামাল সৈয়দের মৃত্যুতে নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীদের শোক
এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান মোস্তফা কামাল সৈয়দ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ দুপুরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। মোস্তফা কামাল সৈয়দের মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গভীর শোক প্রকাশ করছেন নির্মাতা, অভিনয়শিল্পীসহ অনেকেই।
জনপ্রিয় নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী নিজের ফেসবুক হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘আঙ্কেল, সারা জীবন বলেছেন পজিটিভ নাটক বানাতে। আজ আপনি আমাদের সব নেগেটিভ করে দিয়ে চলে গেলেন! সারা জীবন বলেছেন, আপনার আল্লাহ আছেন, আপনি নামাজ পড়েন, আপনার কিচ্ছু হবে না; আঙ্কেল, আমাদের অভিভাবক আপনি, আপনি পিতাসম! কোথায় চলে গেলেন আমাদের একা করে দিয়ে! যেখানেই যান, আপনি আমাদের হৃদয়ে থাকবেন।’
নির্মাতা মোস্তফা কামাল রাজ ফেসবুকে লেখেন, ‘মেনে নেওয়া কষ্টকর কামাল ভাই! এইভাবে যেতে পারেন না আপনি। আমাদের আর কোনো অভিভাবক থাকল না।’
অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা ফেসবুকে লেখেন, ‘মিডিয়াতে ভালো কাজের সাথে সাথে কত কিছুই করতে হয়, ভালো ব্যবহার, যোগাযোগ, বন্ধুত্ব, তেল দেওয়া এবং নেওয়া। তবে এই মানুষটির সাথে আমার কোনো পরিচয় ছিল না ব্যক্তিগতভাবে, তবুও এত এত বার ডিরেক্টরদের তিনি আমাকে নিতে বলেছেন, সবার কাছে আমার অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন, অনেক সময় (ডিরেক্টরের কাছ থেকে শোনা) জোরও করেছেন ভাবনাকে এই চরিত্রে নিতে হবে। আমাকে নিয়ে জোর করার মতো মানুষ নেই বললেই চলে, ঘুমন্ত শহরে আমার শেষ ধারাবাহিক নাটক এই করোনাকালের আগে, ডিরেক্টর রাজু ভাই আমাকে প্রতি লটে বলতেন ভাবনা, কামাল ভাই অভিনয়ের খুব প্রশংসা করছেন। আমি অনেক উৎসাহ পেতাম, এই মানুষটা আমাকে অনেক সুন্দর সুন্দর চরিত্র উপহার দিয়েছেন। খুব ইচ্ছে ছিল একদিন গিয়ে তাকে প্রাণভরে ধন্যবাদ দেব, তা আর হলো না, আমার অভিনয়জীবনে আপনার ভূমিকা কখনো ভুলব না। আল্লাহ আপনাকে অনেক ভালো রাখুক এই দোয়া করি। সুন্দর মননে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন বটে, তবুও আমাদের মনে আপনি থাকবেন চিরকাল।’
নির্মাতা আনিমেষ আইচ ফেসবুকে লেখেন, ‘এনটিভির হাত ধরে আমার পথচলা শুরু, সেখানে নাটকবিষয়ক নানান পরামর্শ দিয়ে তিনি সর্বদাই আমাকে ঋণী করে রেখেছেন। তাঁর সূক্ষ্ম রুচিবোধের বহিঃপ্রকাশ আপনারা দেখতে পেতেন এনটিভির পর্দায়। এই করোনা মহামারি আরম্ভ হওয়ার কয়েকদিন আগেও কত পুরোনো স্মৃতিচারণা করে এলাম তাঁর সঙ্গে। আমাকে বড় স্নেহ করতেন তিনি, আর আমি পিতার মতোই ভালোবাসতাম তাঁকে। কত শত স্মৃতি এই ভদ্রলোকের সঙ্গে, তা বলে শেষ করা যাবে না। এই করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পরও নিয়মিত অফিসে যেতেন, তিনি তাঁর কর্মনিষ্ঠা দিয়ে সবার মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। এমনই দুঃসময় যে তাঁর অন্তিম বিদায়ে হয়তো কেউই উপস্থিত থাকতে পারব না। বিদায় কামাল ভাই, ওপারে দেখা হবে।’
অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা ফেসবুকে লেখেন, ‘বাংলাদেশের একজন কিংবদন্তি! আজকে উনি চলে গেলেন! মোস্তফা কামাল সৈয়দ আমাদের দেশের টেলিভিশনের একজন দিকপাল! বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং এনটিভির অনুষ্ঠান প্রধান হিসেবে তিনি কেবল অগণিত শিল্পী এবং পরিচালকের বিকাশে সাহায্য করেছেন তা না, আমাদের রুচি তৈরিতেও বিশাল ভূমিকা রেখেছেন! আল্লাহ তাঁকে বেহেস্ত নসিব করুন!’
এ ছাড়া বিভিন্ন শিল্পী ও কলাকুশলী তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। স্মৃতিচারণা করে মরহুমের জন্য সবার কাছে দোয়া চাইছেন।
আজ রোববার দুপুর দেড়টার দিকে মোস্তফা কামাল সৈয়দ স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আলফ্রেড খোকন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গত ১১ মে মোস্তফা কামাল সৈয়দ অসুস্থ হলে তাঁকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তি করার পর তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। তিনি আজ দুপুরে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।’
মোস্তফা কামাল সৈয়দ বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) উপমহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি স্ত্রীসহ এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তাঁর স্ত্রী কণ্ঠশিল্পী জিনাত রেহেনা। ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন।