অবসরপ্রাপ্ত কনস্টেবল খুন, স্ত্রী ও ছেলের দায় স্বীকার
ঝিনাইদহে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবলের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার জেলা শহরের কালিকাপুরে মোল্লাপাড়ায় নিজ আঙিনা থেকে অবসরপ্রাপ্ত কনস্টেবল ওবায়দুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করা হয়।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে রোববারই ওবায়দুলের স্ত্রী শিখা খাতুন ও ছেলে খালিদ মাহমুদ লিংকনকে আটক করে পুলিশ। আজ সোমবার তাঁরা আদালতে ওবায়দুলকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। সেই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে তুহিন নামের এক ব্যক্তি সহযোগিতা করেন বলে স্বীকারোক্তি দেন। আজ সোমবার সন্ধ্যার পর ঝিনাইদহের জ্যেষ্ঠ ব্চিারিক হাকিম মো. মাসুদ আলী ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ধারণ করেন।
খালিদ মাহমুদ যশোরের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিসিএমসির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। একমাত্র ছেলের পাশাপাশি ওবায়দুলের একটি মেয়েও আছে, সে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।
পুলিশ দাবি করেছে, শিখার সঙ্গে হত্যার আরেক সহযোগী তুহিনের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিখা, তুহিন ও খালিদ মাহমুদ মিলে ওবায়দুলকে বিষাক্ত ওষুধ প্রয়োগে হত্যা করে। এ ব্যাপারে নিহতের বড় ভাই সদরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। তিনিও অভিযোগ করেছেন, পরকীয়ার ঘটনা জানাজানি হওয়ার ফলে খুন করা হয়েছে তাঁর ভাইকে।
মামলা তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর থানার উপপরিদর্শক আনিসুজ্জামান জানিয়েছেন, শিখা ও তাঁর ছেলে পুলিশের কাছেই হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাড়ির পাশের ডোবা থেকে বিষাক্ত ওষুধের শিশি উদ্ধার করা হয়। ওই ওষুধ আমের মুকুলকে পোকামাকড় থেকে রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়। শিখা ও মাহমুদের সঙ্গে এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় তুহিন। তাঁর মা ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত নার্স। তুহিন এখনো পলাতক।
ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রোববার জেলা শহরের কালিকাপুর মোল্লাপাড়ার নিজ বাড়ির আঙিনা থেকে অবসরপ্রাপ্ত কনস্টেবল ওবায়দুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই দিন বিকেলে সদর হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত করানো হয়। রাতভর আটক ব্যক্তিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর আজ সোমবার সকালে বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। শনিবার রাতে তুহিনকে নিয়ে ওবায়দুল ও শিখার মধ্যে ঝগড়া হয়। এর পরই ওবায়দুলকে খুন করার পরিকল্পনা করা হয়। ওবায়দুল আগে থেকেই পেটে গ্যাসের জন্য এন্টাসিড জাতীয় তরল ওষুধ পান করতেন। রাত অনুমান ১১টার দিকে পরিবারের সদস্যরা খাবার খেয়ে ঘুমাতে যায়। খাওয়ার ওষুধের সঙ্গে বিষাক্ত ওষুধ মিশিয়ে খেতে দেওয়া হয় ওবায়দুলকে। তিন থেকে চার ঘণ্টা যন্ত্রণায় ছটফট করার পর রাত আনুমানিক ৩টার দিকে মারা যান ওবায়দুল। এর পর তুহিন ও ছেলে খালিদের সহযোগিতায় লাশ ফেলে রাখা হয় বাড়ির আঙিনায়। শিখা পুলিশের কাছে বলেছেন ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য লাশের পায়ে স্যান্ডেল পরিয়ে দেন তাঁরা। প্রথমে শিখা দাবি করেছিলেন, ওবায়দুল আত্মহত্যা করেছেন।
ওসি হাফিজুর রহমান আরো জানান, শিখা ও খালিদ শুরুতেই ওবায়দুল আত্মহত্যা করেছেন- এ ধরনের দাবি করায় সন্দেহ হয়। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে চিকিৎসকরা লাশের ময়নাতদন্ত করেন। নিহতের পাকস্থলিতে বিষাক্ত পদার্থের অস্তিত্ব পান চিকিৎসকরা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজবাহার আলী শেখ বলেন ,নিহত পুলিশ কনস্টেবল চলতি বছরের ১ আগস্ট স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। সর্বশেষ ওবায়দুল চুয়াডাঙ্গা জেলার সিন্দিরিয়া পুলিশ ক্যাম্পে কর্মরত ছিলেন। পাঁচ বছর ছিল তাঁর চাকরির বয়স। নিজেই চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
ওবায়দুলের বড় ভাই সদরুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রায় ২০ বছর আগে শৈলকুপা উপজেলার বাহিররয়েড়া গ্রামের বাসিন্দা শিখা খাতুনের সঙ্গে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হুদাবাকড়ি গ্রামের ওবায়দুলের বিয়ে হয়।