বিস্ফোরণের জন্য দায়ী কেউ পার পাবে না : লেবাননের প্রধানমন্ত্রী
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে দুটি ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা চার হাজারের বেশি। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার পর বৈরুতে দুটি বড় ধরনের বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর গোটা দুনিয়ায় তোলপাড় পড়ে যায়। ভিডিও দেখে বোঝা যায়, একটি নয়, পরপর দুটি বিস্ফোরণ ঘটে মঙ্গলবার বৈরুতে।
বিস্ফোরণের কারণ এখনো জানা না গেলেও লেবাননের একাধিক সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্যে এটুকু স্পষ্ট, বিস্ফোরণস্থলে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক বোঝাই ছিল। অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সাধারণত বোমা তৈরির পাশাপাশি সার তৈরিতেও লাগে। বিস্ফোরণে ছোটখাটো ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে বৈরুত শহর। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ও সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।
বিস্ফোরণের পর মঙ্গলবার রাতেই টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব। দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে হুঁশিয়ারির সুরে তিনি বলেন, ‘রাসায়নিক পদার্থের গুদামটি ২০১৪ সাল থেকে ওখানে রয়েছে। এ বিস্ফোরণের কারণ ও এ-সংশ্লিষ্ট তথ্য সবাইকে জানানো হবে। দোষীদের কোনোভাবে ছাড় দেওয়া হবে না।’
হাসান দিয়াব আরো বলেন, ‘এ ভয়াবহ বিপর্যয়ের জন্য যারা দায়ী, তাদের এর মাশুল চুকাতে হবে। বিস্ফোরণে শহীদ ও আহতদের কাছে এটা আমার প্রতিশ্রুতি এবং জাতীয় অঙ্গীকার।’
লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আজ বুধবার ভোররাতে জানান, বিস্ফোরণের অভিঘাতে একাধিক ঘরবাড়ি ও ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে কারণে প্রাণহানির পাশাপাশি ক্ষতিক্ষতিও হয়েছে প্রচুর।
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকেই বিস্ফোরণ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন লেবাননের অভ্যন্তরীণবিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ ফাহমি। আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, বন্দরের গুদামে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ ছিল। তা থেকেই এমন ভয়ানক বিস্ফোরণ ঘটেছে। কিন্তু বন্দরের গুদামে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো বিস্ফোরক কারা জড়ো করে রেখেছিল, তা এখনো জানা যায়নি। লেবানন পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত করছে। এ পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
লেবাননের ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি আগেই জানিয়েছিল, বৈরুত বন্দরের গুদামে আগুন লেগেছে। অগ্নিকাণ্ডের মধ্যেই একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। যার জেরে এই বিপুল সংখ্যক হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের অভিঘাতে যেসব ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সদর দপ্তরও রয়েছে। লেবাননের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনেরও ক্ষতি হয়েছে।
লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বৈরুতের হাসপাতালগুলোতে তিল ধারণের জায়গা নেই। তাই আহত অনেককেই বৈরুতের বাইরে অন্যান্য হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব বলেন, বর্তমানে তাঁর সরকার এই দুর্যোগ মোকাবিলায় এবং আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে মনোনিবেশ করেছে। তবে খুব শিগগির বন্দরের ওই গুদামঘর নিয়ে তথ্য সামনে আনা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে বিপজ্জনক অবস্থায় ছিল ওই গুদামঘর। বিস্ফোরণের দিন কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, বিস্ফোরণের পর ঘন ধোঁয়ার কুণ্ডলী মাশরুমের মতো পাকিয়ে উঠছে। ভিডিও দেখেই আশঙ্কা করা হচ্ছে, একটি নয়, বিস্ফোরণ ঘটেছে আসলে দুটি।
বৈরুতের বন্দর এলাকায় ওই বিস্ফোরণের পর লেবাননের সব এলাকা থেকেই উদ্ধারকাজের জন্য কর্মীদের পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনাস্থলে প্রচুর সংখ্যক অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেক মৃতদেহ আটকে থাকার আশঙ্কা করছেন সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা।
২০০৫ সালে খুন হওয়া লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরি হত্যা মামলায় বিচারের রায় ঘোষণার ঠিক আগেই ঘটল এই বিস্ফোরণ। অনেকেই মনে করছেন, মঙ্গলবার রাতের বিস্ফোরণের সঙ্গে ওই ঘটনার যোগসূত্র রয়েছ। যদিও লেবাননের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এমন কোনো আশঙ্কার কথা জানাননি।