ঈদে তোমাদের বেড়ানোর জায়গা
ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই সবার উৎসব। তবে সত্যি বলতে কি, ঈদের সত্যিকারের আনন্দ আসলে শিশুরাই সবচয়ে বেশি উপভোগ করে। ব্যস্ততম এই নগরীতে আত্মীয়স্বজন, পরিবার-পরিজনদের একসাথে কাছে পাওয়ার সময়টুকু শিশুদের খুবই পছন্দের। শিশুদের ঈদের আনন্দ আরো বাড়িয়ে তুলতে শহরজুড়ে প্রস্তুতিরও কমতি নেই কোনো। ইতিমধ্যেই সাজসাজ রব নগরীর বিভিন্ন পার্ক আর বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে। ঈদে শিশুরা আপনজনদের হাত ধরে চলে আসতে পারে নগরীর বিভিন্ন পার্কগুলোতে। চলুন দেখে নেওয়া যাক এই ঈদে ঢাকা এবং তার আশপাশে কোথায় শিশুদের বেড়াতে নিয়ে যাওয়া যায়।
নন্দন পার্ক
শিশুদের নিয়ে এই ঈদে ঘুরে আসার জন্য নন্দন পার্ক হতে পারে একটা চমৎকার জায়গা। শুধু কিন্তু শিশু নয়, বরং সব বয়সী সবার কাছেই নন্দনপার্ক হয়ে উঠেছে প্রিয় বিনোদনকেন্দ্রগুলোর একটি। দর্শনার্থীদের চাহিদার কথা ভেবেই সংযুক্ত করা হয়েছে রাইডগুলো। শিশুদের কথা ভেবেই রয়েছে কয়েকটি রাইড। নন্দন পার্কের ভেতরেই রয়েছে ওয়াটার ওয়ার্ল্ড। এবারে যেমন গরম পড়েছে, আসলে ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে যাওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। রাইডগুলোর ব্যবহারের নিয়মনীতি ও নিরাপত্তা নীতি কঠোরভাবে মেনে চললে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। অ্যাডভেঞ্চার রাইড, ওয়াটার ওয়ার্ল্ড, ওয়াটার কোস্টার, ক্যাবল কার, আইসল্যান্ড, টাইটানিকসহ এ পার্কে রয়েছে বিশ্বমানের বেশ কয়েকটি রাইড। এ পার্কে বাইরের কোনো খাবার নিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। রুচিসম্মত, পরিষ্কার আর স্বাদে ভরা পছন্দের সব ধরনের দেশি ও বিদেশি খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে নন্দনে। এখানে প্রবেশ মূল্য তিনভাবে বিভক্ত। নন্দন পার্কে প্রবেশ মূল্য ৯০ টাকা। পার্কে প্রবেশ মূল্য ও ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের সমস্ত রাইড ব্যবহার ফি ২৫০ টাকা। ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের রাইড ব্যবহার বাদে ১২০ সেমির ওপর উচ্চতা সম্পন্নদের পার্কে প্রবেশ ও সব রাইড ১৫০ টাকা। ১৫০ সেমির নিচে উচ্চতা সম্পন্নদের পার্কে প্রবেশ ও সব রাইড ২০০ টাকা এবং ৮০ সেমির নিচে যাদের উচ্চতা তাদের কোনো ফি দিতে হয় না। এছাড়া পার্কের ভেতর প্রত্যেকটি রাইডের কাছেই টিকেট কাউন্টার রয়েছে। কেউ ইচ্ছা করলে শুধু পার্কের প্রবেশ মূল্য দিয়ে প্রবেশ করার পর ইচ্ছামতো রাইডগুলোতে টিকেট কেটে উঠতে পারবে। রাইডগুলোর ফি ১০-৩০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। রাজধানীর আশপাশে যারা বেড়াতে যেতে চান তারা চলে যেতে পারেন সাভারের নন্দন পার্কে।
ফ্যান্টাসি কিংডম
ফ্যান্টাসি কিংডমকে বিনোদন পিপাসুদের স্বর্গরাজ্য বললে মোটেও ভুল হবে না। এখানে রয়েছে চমৎকার ল্যান্ড স্কেপিং, জায়ান্ট ফেরিস হুইল, জুজু ট্রেন, হ্যাপি ক্যাঙ্গারু, বাম্পার কার, ম্যাজিক কার্পেট, সান্তা মারিয়া, জায়ান্ট স্প্যানিশ, জিপ অ্যারাউন্ড, পনি অ্যাডভেঞ্চার ও ইজি ডিজিসহ আরো অনেক কিছু যা সহজে আপনার মন কেড়ে নিতে সক্ষম। এখানে রয়েছে হেরিটেজ পার্ক। বিশ্বমানের আদলে গড়া দারুণ সব রাইড নিয়ে এই পার্ক সাজানো। শুধু শিশুদের জন্য নয়, বিনোদনপিপাসু যেকোনো বয়সের দর্শকদের জন্য এই পার্কটি অত্যন্ত আনন্দের। এখানে রয়েছে দুই ধরনের প্যাডেল বোটসহ মজার সব রাইড। এই পার্কে সবচেয়ে উত্তেজনাকর ও জনপ্রিয় রাইড হলো: রোলার কোস্টার। এ ছাড়া রয়েছে জায়ান্ট ফ্লু, সান্তা মারিয়া, ম্যাজিক কার্পেট, ওয়ার্লিবার্ড, হ্যাপি ক্যাঙ্গারু, বাম্পার কার, বাম্পার বোট, জিপ অ্যারাউন্ড, পানি অ্যাডভেঞ্চার, ইজি ডিজি, জুজু ট্রেন ইত্যাদি। খাওয়ার জন্য রয়েছে তিন তারকা মানের আশু ক্যাসেল রেস্টুরেন্ট ও ওয়াটার টাওয়ার ক্যাফে। এ ছাড়া আরো ছোট ছোট ফুডকোর্ড তো আছেই। গিফট ও কেনাকাটার সুব্যবস্থাও রয়েছে এখানে।
যমুনা ফিউচার পার্ক
নগরীতে এখন বিনোদন কেন্দ্রগুলোর কথা ভাবলেই মাথায় আসে যমুনা ফিউচার পার্কের নামটি। এপার্কের জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় সব রাইড শুধু শিশু কিশোরদেরই নয়, বরং সব বয়সী মানুষের মধ্যে দারুণ আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আছে রোলার কোস্টার, পাইরেট শিপ, ফ্লোটিং ব্যালেট, ম্যাজিক উইন্ডমিল, ডাবল ডেকার, টাওয়ার চ্যালেঞ্জার, থ্রি-সিক্সটি ডিগ্রি স্যাফল, স্কাই ড্রপ, হুইল উইন্ড ক্যাভিলার- এমনি নানা সব রাইড যেগুলোতে চড়ে শুধু আপনার সাথের শিশুটি তো বটেই, আপনিও আনন্দে আত্মহারা হতে পারেন। সব মিলিয়ে ছুটির দিন কাটানোর জন্য এটি দারুণ জায়গা। শুধু রাইড কেন, একই সাথে সিনেমা দেখা, খাওয়া-দাওয়া সময় কাটানোর মতো এমন জায়গা এ শহরে কই আর পাবেন বলুন! মূল ভবনের লেভেল ফাইভে অবস্থিত ফিউচার ওয়ার্ল্ডে বাম্পার কার, হুইল উইন্ড ক্যাভিলিয়ার, ডাংকার্ড বঙ্গি, সুপার সুইং, ডাবল ডেকার, ফ্লোটিং ব্যালে এবং দেড় শতাধিক ভিডিও গেম মেশিন।
শিশুমেলা
ঢাকার শ্যামলী ওভারব্রিজের পাশে অবস্থিত এই শিশুমেলা প্রতিদিনের মতো ঈদের দিনেও খোলা থাকবে বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা। নগরীর একদম ভিতরেই এই বিনোদন কেন্দ্রটিতে আছে অসংখ্য রাইড, যেগুলো তিন বছর থেকে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্যও উপযোগী। ভেতরে খাবারের দোকানও আছে। ঈদের দিন ঘোরার জন্য শিশুমেলা হতে পারে দারুণ একটি বিনোদন কেন্দ্র।
শিশু পার্ক
শিশুদের বিনোদনের জন্য শিশুপার্ক হল সবথেকে পুরাতন পার্কটি। ঢাকার শাহবাগের শিশুপার্কে ঈদে শিশুদের জন্য থাকছে টানা চার দিনব্যাপী আয়োজন। এমনিতে বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকলেও ঈদের দিন শিশুপার্ক খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
টয় ট্রেন, মেরি-গো-রাউন্ড, লম্ফঝম্ফ, চাকা পায়ে চলা, উড়ন্ত বিমান, উড়ন্ত নভোযানসহ রয়েছে বেশ কিছু রাইড। প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৮ টাকা। আর প্রতিটি রাইড উপভোগ করা যাবে ৬ টাকায়।
বিমান জাদুঘর
বিমান বাহিনীর বিভিন্ন পুরনো বিমান এবং হেলিকাপ্টারে সাজানো হয়েছে এই জাদুঘর। ঢাকার আগারগাঁওয়ে আইডিবি ভবনের ঠিক বিপরীত পাশে অবস্থিত এই জাদুঘরে ঢুকতে খরচ হবে মাত্র বিশ টাকা। বিমান বাহিনীর বিভিন্ন পুরনো বিমান এবং হেলিকাপ্টারে সাজানো হয়েছে এই জাদুঘর। টিকেট কাউন্টার অতিক্রম করলেই চোখে পড়বে `নীলাদ্রি`। এই দোকানে পাওয়া যাবে বিমানবাহিনীর স্মারকসহ আরো অনেক কিছু। এখানে আছে বিভিন্ন সময়ের বিমান আর হেলিকপ্টারের সংগ্রহ। সব ধরনের মানুষের জন্য সহজেই সুযোগ মিলছে আসল এই বিমানগুলোকে খুব কাছে থেকে দেখবার। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে বিমানবাহিনীর শহীদদের স্মরণ করতে তৈরি করা হয়েছে শহীদ কর্নার। সেখানে গিয়ে একটু দেখে আসতে পারেন শহীদদের ভাস্কর্য মূর্তি। জাদুঘরে ঢুকতেই ডানদিকে করা হয়েছে চাইল্ড কর্নার। বিভিন্ন রকমের খেলার জিনিসে সজ্জিত এটি। এ ছাড়া হালকা খাবারের জন্য স্কাই মেন্যু নামে করা হয়েছে একটি স্ন্যাকসের দোকান। একটুখানি বিশ্রাম এবং পিজা বার্গারসহ বিভিন্ন রকমের হাল্কা খাবার পেতে পারেন এখানে। এই ভিন্নধর্মী জাদুঘরটি এখন অবকাশে ঢাকা শহরের মানুষের অন্যতম পছন্দ। ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসার জন্য এমন ব্যতিক্রমী জায়গা আর হয় না।
চিড়িয়াখানা
ঈদে ঢাকা চিড়িয়াখানা হতে পারে শিশুদের প্রধান আকর্ষণের একটি। বানরের বাঁদরামি, বাঘ-সিংহের গর্জন, মায়াবী চিত্রা হরিণ, পেঁচিয়ে পড়ে থাকা সাপের আলসেমি, রোদ পোহানো কুমির, ময়ূরের পেখম ছড়ানোর ফ্যাশন শোসহ আরো কত–কী দেখার আছে। শুধু ঘুরে ঘুরে জীবজন্তু দেখাতেই নয়, চাইলে চড়ে বসতে পারে কোনো কোনোটার ওপর। তবে ভয়ের কিছু নেই। হাতি–ঘোড়ায় চড়তে আবার ভয় কিসের! হাতিতে চড়া যাবে পাঁচ টাকায় আর ঘোড়া তিন টাকায়। চিড়িয়াখানার ভেতরে একটি প্রাণী জাদুঘরও আছে, বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অনেক প্রাণীর দেখা মিলবে সেখানে। তবে সেগুলো বিশেষ উপায়ে সংরক্ষণ করা। খোলা থাকবে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা। দুই বছর পর্যন্ত শিশুদের জন্য টিকেট লাগবে না। আর প্রাণী জাদুঘরের প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৫ টাকা।
অন্যান্য
এ ছাড়া ঘুরে আসতে পারেন চন্দ্রিমা উদ্যান, লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, জাতীয় জাদুঘর কিংবা ঢাকার অদূরে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ লোকশিল্প জাদুঘর, নরসিংদীর ড্রিম হলিডে পার্ক, বাংলার তাজমহল থেকে।