কলকাতায় দুই বাংলার ‘বাংলা সাহিত্য উৎসব’
আরো কাছাকাছি, আরো নিবিড় হলো দুই বাংলার সাহিত্যজগৎ। এই প্রথম দুই বাংলার মধ্যে ‘বাংলা সাহিত্য উৎসব’ অনুষ্ঠিত হলো কলকাতায়। শনিবার কলকাতার পার্ক স্ট্রিট চত্বরে অক্সফোর্ড বুক হাউসে বসল দুই বাংলার সাহিত্যজগতের বিশিষ্ট দিকপালদের নিয়ে ‘বাংলা সাহিত্য উৎসব’। একদিনের এই উৎসব ঘিরে সাহিত্যানুরাগীদের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। এই উৎসবে যোগ দেন দুই বাংলার বিশিষ্ট সাহিত্যকরা।
বাংলাদেশের অন্যতম কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন এবং পশ্চিম বাংলার খ্যাতনামা সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, কবি শঙ্খ ঘোষ ও ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে শনিবার ভারতীয় সময় বেলা ১১টা নাগাদ এই উৎসবের শুভসূচনা হয়। মাত্র একদিনের এই বাংলা সাহিত্য উৎসব চলে শনিবার বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা অবধি। দুই বাংলার সাহিত্যিকদের নিয়ে অভিনব এই উৎসবের আয়োজক ছিল কলকাতার অক্সফোর্ড বুকস ও পত্রভারতী প্রকাশনী। তাদের উদ্যোগে সম্পূর্ণ ঘরোয়া পরিবেশে জমে ওঠে এই সাহিত্য উৎসব। শনিবার সকালে এই অনুষ্ঠানের সূচনার পরেই এদিনের অনুষ্ঠানকে মোট সাত ভাগে ভাগ করা হয়। বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে নানা বিভাগে আলোচনা করা হয়। প্রতীতি বিভাগে অংশ নেন স্বনামধন্য সাহিত্যিক, কবি ও সাহিত্যানুরাগীরা।
দুই বাংলার সাহিত্যের বিভিন্ন ভাবধারা, মিল, অমিল, সাহিত্যের ধারা সব কিছু নিয়েই চলে দিনভর নানা আলোচনা। তবে দিনের প্রথম ভাগেই বাংলা সাহিত্যের ভাষা বদলে গিয়েছে কি না তা নিয়ে আলোচনা বেশ জমে ওঠে। সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার বাংলাদেশের সাহিত্যে আঞ্চলিকতার প্রভাব নিয়ে তাঁর মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। তার পরেই কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, মূলত বাংলা সাহিত্যের ভাষা সময় ও পরিবেশের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। লেখক কী বিষয়ের ওপর লিখছেন তার ওপরই নির্ভর করে ভাষার প্রভাব।
অন্যদিকে বাংলা সাহিত্যের ভাষাবৈচিত্র্য যে সাহিত্যের সম্ভারকে মহিমান্বিত করেছে সে কথা মেনে নিয়ে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘ভাষাবৈচিত্র্য তো আমাদের অনেক কিছু শেখায়। আমি তো ছিপ ফেলে মাছ ধরার মতো বসে থাকি বাংলা শব্দ ধরব বলে।’ বাংলা সাহিত্যের নানা শব্দ প্রয়োগ সৃজনশীলতাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি। তবে গতিময় বর্তমান সমাজে বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারে শব্দের ব্যবহার যে ক্রমশ ছোট হচ্ছে তা মেনে নেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকেই। এই অনুষ্ঠানে আগত সাহিত্যানুরাগীদের অনেককেই বলতে শোনা যায়, বাংলাদেশের সাহিত্যে রকমারি শব্দের প্রয়োগ দেখা যায়। এবং সেই সমস্ত শব্দ তাঁদের মুগ্ধ করে বলেও জানালেন তাঁরা। উদাহরণ হিসেবে মোবাইলকে মুঠোফোন এবং ফুলের শুভেচ্ছাকে ফুলেল শুভেচ্ছার মতো শব্দ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বেশ প্রচলিত বলেও মত দেন তাঁরা। তবে বাংলা সাহিত্যে শব্দ প্রয়োগ যে মোবাইলে কোড ল্যাঞ্জুয়েজের মতো এখন অনেকটাই ছোট হচ্ছে সে কথাও মেনে নেন বেশির ভাগ উপস্থিত সাহিত্যানুরাগী।
এদিন দিনভর বাংলা সাহিত্যের নানা দিক নিয়ে গল্প, আড্ডা, আলোচনা আর মতবিনিময়ে জমাট হয়ে ওঠে এই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের সূচনালগ্নে উপস্থিত থাকেন কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ উপদূতাবাসের উপরাষ্ট্রদূত জাকি আহাদও। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত খ্যাতনামা সাহিত্যিকদের পাশাপাশি আমজনতাও অংশ নেয়। খোলামেলাভাবে সবার সঙ্গে মিলেমিশে দুই বাংলার সাহিত্যের ভাব লেনদেন আর সাহিত্যের নানা বিষয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে পার হয়ে যায় দুই বাংলার সাহিত্যনির্ভর এই বিরল মুহূর্ত।