মওলানা ভাসানীর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী : টাঙ্গাইলে নানা কর্মসূচি
টাঙ্গাইলে নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে আজ মঙ্গলবার মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। দিনটি উপলক্ষে আজ সকালে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ভাসানী ফাউন্ডেশন, ভাসানী পরিবার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সন্তোষে ভাসানীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
এ ছাড়া সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আজ সকালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও কবর জিয়ারতের মধ্যদিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলাউদ্দিন। এরপর ভাসানীর পরিবারের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
পরে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী ও বিএনপির পক্ষ থেকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু ভাসানীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোনাজাত করেন। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবীর খোকন শিমুলসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাজাহান আনসারী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র জামিলুর রহমান মিরনের নেতৃত্বে সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
এদিকে, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকী, ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ ভাসানীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোনাজাত করেন। এ ছাড়া জেলা জাতীয় পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি, ভাসানী স্মৃতি সংসদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, জাসাস, ভাসানী আদর্শ অনুশীলন পরিষদ, ভাসানী স্মৃতি পরিষদ, ন্যাপ ভাসানী, আওয়ামী সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে যে দুর্যোগের সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের দৃঢ় ও সৎ হতে হবে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের উচিত মওলানা ভাসানীর জীবন চরিত্র ও আদর্শ স্মরণ করা। এই দুর্যোগ থেকে অব্যাহতি পেতে আমাদের ত্যাগী হতে হবে। আমরা যারা নেতা, তাদের দুর্দশা হবেই।’ স্বাধীনতায় যার যা মর্যাদা, তা স্বীকার করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু বলেন, ‘আজ ভাসানী বেঁচে থাকলে দেশে ভোটারবিহীন নির্বাচন হতে পারত না। ভাসানীর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে এই স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটাতে হবে।’
বরকতউল্লাহ বুলু আরো বলেন, ‘বিএনপি জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটের মাধ্যমে বিএনপি সরকার পরিবর্তনে বিশ্বাস করে।
পরে বাদ জোহর মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং ক্যাম্পাসে অবস্থিত শাহ নাসিরউদ্দিন বোগদাদী এতিমখানায় কোরআন খতম ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়।
১৯৭৬ সালের আজকের দিনে ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মওলানা ভাসানী। টাঙ্গাইলের সন্তোষে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে মওলানা ভাসানীর জন্ম। সিরাজগঞ্জে জন্ম হলেও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তাঁর জীবনের সিংহভাগ সময়ই কাটিয়েছেন টাঙ্গাইলের সন্তোষে।
মওলানা ভাসানী তাঁর কৈশোর-যৌবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি তৎকালীন বাংলা-আসাম প্রদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন। সারা জীবনই তিনি সাধারণ মানুষের কল্যাণে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। তাঁর উদ্যোগে ১৯৫৭ সালে কাগমারীতে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলন বাংলাদেশের রাজনীতিতে মোড় ঘুরিয়ে দেয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি সর্বদলীয় উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। স্বাধীনতার পর তাঁর সর্বশেষ কীর্তি ছিল ‘ফারাক্কা লং মার্চ’।