১০ মাসে ধর্ষণের শিকার ১৩৪৯ জন, শিশুরাই বেশি
দেশে গত ১০ মাসে এক হাজার ৩৪৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে শিশুরাই বেশি ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৬ জনকে আর আত্মহত্যা করেছে ১৩ নারী। এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে আরো ২৭১ জনকে।
আজ শনিবার বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) ওয়েবসাইট থেকে এই পরিসংখ্যান জানা গেছে। আসক চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ধর্ষণের শিকার নারীদের বিষয়ে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ছয় বছর বয়সী ৯৬ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে দুজন, ধর্ষণের ফলে মারা গেছে একজন এবং ৩৯ জন ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে। এ ছাড়া সাত থেকে ১২ বছরের মধ্যে শিশুদের মধ্যে ১৭৮ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে, ১২ জন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার, ১১ জনকে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছে, একজন আত্মহত্যা করেছে এবং ৫৯ জন ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে।
১৩ থেকে ১৮ বছরের কিশোরীদের মধ্যে ১৮৯ জন ধর্ষণের শিকার, ৬৫ জন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার, ধর্ষণের পরে ১১ জনের মৃত্যু ও ধর্ষণের পরে ছয়জন আত্মহত্যা করেছে।
এ ছাড়া ১৯ থেকে ২৪ বছরের নারীদের মধ্যে ৫৩ জন ধর্ষণের শিকার, ২৪ জন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার, সাতজনকে ধর্ষণের পর হত্যা, একজন আত্মহত্যা করেছে এবং চারজনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
২৫ থেকে ৩০ বছরের নারীদের মধ্যে ২১ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১২ জন, ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছে পাঁচজনকে, ধর্ষণের পরে আত্মহত্যা করেছে একজন ও ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে একজন।
অপরদিকে ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে নারীদের মধ্যে ২২ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে, ১০ জন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার, একজন আত্মহত্যা করেছে এবং চারজন ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন।
আইন ও শালিস কেন্দ্র আরো উল্লেখ করেছে, গত ১০ মাসে ৫০৭ জন ধর্ষণের শিকার নারীর কোনো বয়স জানা যায়নি। এ ছাড়া ধর্ষণের পরে ১৫২ জন মৃত্যুবরণ করেছে এবং ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছে ২৭১ জন। এ ছাড়া শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন ১৮০ জন এবং শ্লীলতাহানির পরে আত্মহত্যা করেছেন ১৪ জন।
এ ব্যাপারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম আজ শনিবার বিকেলে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘লক্ষ করা যাচ্ছে, ইদানীং ধর্ষণের শিকার নারীর সংখ্যা বাড়ছে। এটা উদ্বেগের। এখান থেকে দ্রুতই পরিত্রাণ পাওয়া দরকার। সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের মানবাধিকারের প্রশ্নে ঘরে বসে থেকে লাভ নেই। চুপ থাকতে থাকতে দিন দিন পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকার সংগঠক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল আজ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ধর্ষণের শিকার নারীদের দ্রুত বিচার পাওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আর অপরাধীরা যেন ক্ষমতা দেখিয়ে পার পেয়ে না যেতে পারে সেদিকে রাষ্ট্রেরই নজর দিতে হবে। এ ছাড়া যারা অপরাধী তাদের সামাজিকভাবেও ধিক্কার জানাতে হবে। এতে যদি পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে। ইদানীং পরিস্থিতি এত ভয়াবহ যে, ছোট ছোট শিশুও ছাড় পাচ্ছে না। গত ১০ মাসে সবচেয়ে বেশি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আমাদের এখনি এসব দিকে বেশি বেশি নজর দিতে হবে। নতুবা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে গেলে সেটা মোটেও সুখকর হবে না রাষ্ট্রের জন্য।’