আমদানি জটিলতায় হিলি বন্দরে আটকা চালের চালান
আমদানিমূল্য নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা দেখা দেওয়ায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানিকৃত চালের চালান ছাড় করা হয়নি। এ অবস্থায় দেশে চাল আমদানি করে বিপাকে পড়েছে আমদানিকারকেরা।
এদিকে, গত তিনদিন ধরে বন্দরের বেসরকারি অপারেটর পানামা হিলি পোর্টের অভ্যন্তরে ছাড়ের অপেক্ষায় পড়ে আছে প্রায় এক হাজার ২০০ মেট্রিক টন চালবোঝাই ২৬ থেকে ২৭টি ভারতীয় ট্রাক।
বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সংগঠনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৯ সালের ৩০ মে সর্বশেষ হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশে চাল আমদানি হয়েছিল। এরপর থেকে আর চাল আমদানি হয়নি। চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে সরকার চালের ওপর রাজস্ব বাড়িয়ে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ করায় চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়।
হিলি স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশনের উপকমিশনার মো. সাইদুল আলম জানান, বাইরের দেশ থেকে চাল আমদানি করতে হলে প্রতি মেট্রিক টন ৪২০ মার্কিন ডলার ধরা হয়। এরপর তার ওপর ১৫ শতাংশ সরকারি রাজস্ব আদায় করা হয়। চাল আমদানি করার ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এই নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকারকেরা ভারত থেকে ৩৫৬ ডলারে চাল আমদানি করছেন। যা কাস্টমসের বেঁধে দেওয়া মূল্যের চেয়ে ৬৪ ডলার কম। তাই আমদানিকারকদের কাস্টমস থেকে চাল ছাড় করাতে হলে ৪২০ ডলার ধরে রাজস্ব পরিশোধ করে ছাড় করিয়ে নিতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরেও ৪২০ ডলারে দেশে চাল আমদানি হচ্ছে এবং সেই মোতাবেক রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে।
এদিকে, বন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স জগদিশ চন্দ্র রায়ের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মো. সেরেগুল ইসলাম ও রাশেদুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে ৩৫৬ ডলারে চাল আমদানি করা হচ্ছে। গত শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত ২৬ থেকে ২৭টি ভারতীয় ট্রাকের মাধ্যমে প্রায় এক হাজার ২০০ মেট্রিক টন চাল বন্দরে প্রবেশ করেছে। এরপর কাস্টমে চাল ছাড় করানোর জন্য গেলে তারা ৪২০ ডলার ছাড়া চালের ছাড় করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এই অবস্থায় আমরা চাল ছাড়ের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি। কাস্টমসের আমদানি মূল্যে ছাড় করানো হলে প্রতিকেজি ৪০ টাকার ওপরে খরচ হবে। আর আমরা যে মূল্যে আমদানি করেছি তাতে খরচ পড়বে ৩৭ টাকার মতো।
এ ব্যাপারে আমাদের আমদানিকারকেরা আজ সোমবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদনের মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশনা পেলে আমরা ছাড় করে নিব। এর আগে নিচ্ছি না।
গত তিন দিন ধরে চালগুলো ভারতীয় ট্রাকে বোঝাই অবস্থায় থাকায় চালের গুণগত মান নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তাছাড়া আমাদের অতিরিক্ত ট্রাক ভাড়াসহ বন্দরের মাশুল বেশি গুনতে হচ্ছে। কেজিতে আরও খরচ পড়ে যাবে।
গত মাস থেকে দেশে চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠে। দামের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সরকার ভারত থেকে বেসরকারি খাতে চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই অবস্থায় হিলি স্থলবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ২৯ জন আমদানিকারককে ভারত থেকে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। গত শনিবার থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশে চাল আমদানি শুরু হয়েছে।