প্রতিক্রিয়া
আর কত নিচে নামব আমরা?
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে টিভিতে মধ্যরাতে শিয়া সমাবেশের প্রস্তুতিকালে গ্রেনেড হামলার ঘটনাটি দেখে বেশ অবাক হয়েছি। সত্যিই কি বাংলাদেশে ঘটনাটি ঘটেছে? ভেবেছি চোখে বোধহয় ভুল দেখছি। পাকিস্তান বা আফগানিস্তানে এ রকম ঘটনা হরহামেশাই হয়, তাই ভেবেছি এবারও বোধহয় ঘটনা সেসব দেশেই হয়েছে। কিন্তু না এটা আমার দেশেরই ঘটনা। টিভিতে দেখলাম, ঢাকা মেডিকেলের বিছানায় গ্রেনেড হামলায় আহত কিশোরী বলছে, ‘হঠাৎ করেই যেন মনে হলো পায়ের উপর কেউ গরম পানি ঢেলে দিল, আমি আর এরপর কিছু জানি না, দেখি শুধু রক্ত...।’ তখন যেন সেই কিশোরীর শরীরের সমস্ত যন্ত্রণা আমার শরীরে এসে ভর করেছে। বারবার মনে হচ্ছিল আমরা কি সত্যিই এখনো মানুষ আছি? আমাদের বিবেক, মন্যুষত্ব দিনদিন কোথায় নেমে যাচ্ছে? সত্যিই কি এখনো আমরা আশরাফুল মাখলুকাত আছি?
দেশে যখন দুর্গাপূজার উৎসব নির্বিঘ্নে চলছে, সেখানে শিয়ারা কি নির্বিঘ্নে একটি তাজিয়া মিছিল করার অধিকার রাখে না? নাকি কোন না কোনোভাবে দেশকে টালমাটাল অবস্থায় রাখতেই হবে? অনেকে বলতে পারেন রাষ্ট্র আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না । প্রশ্ন হলো রাষ্ট্র কাদের নিয়ে গঠিত? আমাদের মতো মানুষদের নিয়েই তো, তাই না। মানুষের নিজের মধ্যে যদি ন্যূনতম বিবেক বোধ না থাকে, সামান্য টাকার লোভে মানুষ মারায় উদ্যত হয় তবে রাষ্ট্র কী করবে? আমদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আমরা কী সত্যিই একটি সেক্যুলার বাংলাদেশ চাই নাকি দেশকে পাকিস্তান বানাতে চাই।
আমাদের দেশের এখনো সুনাম আছে যে সব ধর্মের সবই আমরা একসাথে মিলেমিশে থাকতে পারি, তাহলে বিভেদটা কার স্বার্থে? দিনে দিনে কেন আমরা এত অসহিষ্ণু হয়ে উঠছি? আমরা কি জানি না, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার?
যারা ধর্ম দিয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন বা তরুণদের নানাভাবে ব্রেন ওয়াশ করে দেশকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছেন, এখনই সময় রাষ্ট্রীয়ভাবে বা বিভিন্ন সামাজিক প্রচারমাধ্যমের মধ্য দিয়ে তাদের শিক্ষা/ধর্মের মূল উদ্দেশ্য বোঝানো। সবার যে যার যার মত প্রকাশের অধিকার আছে, তা তাদের যেকোনো মূল্যে বোঝাতে হবে।
লেখক : সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।