রক্তক্ষয়ী দিন শেষে ফের রাস্তায় মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীরা
মিয়ানমারে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার আবারও বিক্ষোভে নেমেছে দেশটির মানুষ। নিরাপত্তা বাহিনী গুলিতে একদিনে ৩৮ মৃত্যু দেখা মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদ ও রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবিতে ফের বিক্ষোভ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ দমনে পুলিশ তাজা গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়লেও তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। খবর রয়টার্সের।
আগের দিন বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ এবং সৈন্যদের গুলি ও সংঘাতে ৩৮ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল জাতিসংঘ। সে হিসাবে, ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর বুধবারই ছিল দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির সবচেয়ে ‘রক্তাক্ত দিন’।
এমন দমন-পীড়নের পরও মিয়ানমারের অভ্যুত্থানবিরোধীরা সামরিক শাসন মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চিসহ অন্যান্যদের মুক্তি ও নভেম্বরের নির্বাচনে সু চির দলের জয়ের স্বীকৃতি আদায়ে চাপ বাড়ানোর ব্যাপারেও তারা দৃঢ় সঙ্কল্পবদ্ধ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিয়ানমারে বুধবারের দেশব্যাপী বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনী অনেক ক্ষেত্রে সতর্ক না করেই নির্বিচারে গুলি চালায়। এর আগে গত রোববার দেশটিতে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে গুলি ও সহিংসতায় অন্তত ১৮ জন নিহত হন।
মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাক্টিভিস্ট থিনজার শুনলেই গতকালের ঘটনায় বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘বীভৎস ঘটনা। এটা রীতিমতো হত্যাকাণ্ড। পরিস্থিতি বা অনুভূতি বর্ণনা করার ভাষা নেই আমার।’
নিউইয়র্কে অবস্থানরত মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গেনার বলেন, ‘গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে আজ ছিল রক্তাক্ততম দিন। আজ—কেবল আজ—একদিনে ৩৮ জন মানুষ নিহত হয়েছে। ক্যু শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে, আর আহত হয়েছে অনেক।’
রয়টার্স জানায়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্রের কাছে দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
মিয়ানমারে বুধবার সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে মোনায়া শহরে। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হন সেখানে। পাঁচজনের মধ্যে চারজন পুরুষ, অন্যজন নারী।
গত ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারজুড়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সামরিক শাসনের অধীনে থাকা দেশটির গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা রুদ্ধ হয়ে গেছে।
অভ্যুত্থানের পর থেকেই সামরিক শাসনবিরোধী গণতন্ত্রপন্থিরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন। আর, বিক্ষোভ দমনে সামরিক জান্তাও কঠোর অবস্থান নিয়েছে।