অনিয়ম রোধে কৌশলে পরিবর্তন এনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক : গভর্নর
সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের অদক্ষতা ও দুর্বলতার কারণে ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৌশলে পরিবর্তন আনছে বলে জানিয়েছেন গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে না পারলে ব্যাংকিং খাতে দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীলতা আসবে না।
আজ রোববার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত বার্ষিক ব্যাংকিং সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
গভর্নর বলেন, ‘কয়েকটি ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণে কিছু অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক তার তদারকি কৌশলে পরিবর্তন এনেছে। আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, পর্ষদের জবাবদিহিতা ও দায়-দায়িত্বের তত্ত্বাবধানে জোর দেওয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ কাঠামো শক্তিশালী করা হয়েছে।’
সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগের বিষয়ে ইঙ্গিত করে গভর্নর বলেন, ‘অদক্ষতাই ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলার মূল কারণ। এ সমস্যার সমাধানে বিআইবিএমকে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর আরো নতুন নতুন কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে।’
সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় চার বাণিজ্যিক ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর আর্থিক সূচকের ক্রমাগত অবনতি হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যবেক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক সুযোগের পরও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে পারেনি।
গভর্নর বলেন, ‘আন্তর্জাতিক রীতি-নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ, পরিমাপ ও ঝুঁকি প্রশাসনের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হয়েছে। সুপারভিশনে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ বিদ্যমান দুর্বলতাগুলোকে উত্তরণে সহায়তা করবে বলে আশা করা যায়।
সমগ্র বিশ্বে আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে, তা ধরে রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য ব্যাংকিং খাতের সুশাসনের দিকে আরো নিবিড় মনযোগ দিতে হবে। আমরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি।’
ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আরো বেশি মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান গভর্নর। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের আকার অনেক গুণ বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। গুণমানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, প্রবৃদ্ধি প্রক্রিয়ায় সর্বসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, সমাজের অবহেলিত মানুষ ও নারীর ক্ষমতায়ন এবং পরিবেশ সংরক্ষণই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল লক্ষ্য।
আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, গতানুগতিক ধারার স্বল্পমেয়াদের ব্যবসায়ভিত্তিক মুদ্রা ও আর্থিক নীতি দিয়ে দীর্ঘমেয়াদের অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই ও পরিবেশবান্ধব প্রয়োজন মেটানো যায় না। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক স্বল্পমেয়াদে ও অনুৎপাদনশীল খাতের অর্থায়নকে নিরূৎসাহিত করে উৎপাদনশীল, তথ্যপ্রযুক্তিগত ও টেকসই অর্থায়নের ওপর জোর দিয়েছে। কর্মসংস্থান, সৃজনশীল বিনিয়োগ, সুবিধাবঞ্চিতদের উন্নয়ন, বৈষম্য হ্রাস, সমাজের পিছিয়ে পড়াদের ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব অর্থায়নের এই মডেলকে জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের মতো সংস্থাগুলো রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। পেমেন্ট সিস্টেমের আধুনিকায়ন, অনলাইন সিআইবি, অনলাইন রিপোর্টিং, অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউস, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক, ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ, কেওআইসি এবং রিয়াল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) ব্যবস্থাসহ আর্থিক খাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার মোবাইল ব্যাংকিংসেবার প্রসার ও আর্থিক সেবাবঞ্চিত মানুষকে ব্যাংকিং সুবিধা দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। ব্যাংকিং খাতের দ্রুত ডিজিটাইজেশন মোবাইল আর্থিক সেবা ও নারীর অংশগ্রহণকে সহজ ও উৎসাহিত করেছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলন ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবিব। বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমির অধ্যক্ষ কে এম জামসেদ উজ-জামান। গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী।