সাভারে প্রচণ্ড যানজটে চরম ভোগান্তি
ঢাকার সাভারে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে প্রচণ্ড যানজটে স্থবির হয়ে পড়েছে জাতীয় ও আঞ্চলিক সড়ক-মহাসড়ক। সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও আশুলিয়ায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মাইলের পর মাইল জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।
সড়ক-মহাসড়কের পাশে পশুর হাট, পশুপাখির ট্রাক ও ব্যক্তিগত যানবাহনের বাড়তি চাপ, তৈরি পোশাক কারখানায় ছুটি পাওয়া পোশাক শ্রমিকদের ঘরে ফেরার তাড়া—সব মিলিয়ে ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা হয়ে উঠেছে সীমাহীন ভোগান্তি আর কষ্টের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে শিশু ও নারীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
সাভার-আশুলিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত রাজধানীর প্রবেশপথ ছাড়াও যানজট বিস্তৃত হয়েছে আঞ্চলিক সড়ক এবং মহাসড়কগুলোতেও।
আমিনবাজার থেকে শুরু হয়ে সাভার থানা স্ট্যান্ড, সিঅ্যান্ডবি, নবীনগর, পল্লীবিদ্যুৎ, বাইপাইল, শ্রীপুর অংশে এই যানজট বিস্তৃত হয়েছে বাড়ৈপাড়া পর্যন্ত।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা মাঠে রয়েছেন। তবে টাঙ্গাইল থেকে মহাসড়ক আটকে থাকা যানবাহনগুলো সেভাবে অগ্রসর না হওয়ায় এর রেশ পড়েছে আশুলিয়া ও সাভারে।
সকাল থেকে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে একটানা ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এই যানজট। গাবতলী থেকে আশুলিয়া অতিক্রম করতে সময় লেগে যায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার বেশি। সন্ধ্যা পর্যন্ত যানজট কমে পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার এসে দাঁড়ায়।
মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে দেখা গেছে, উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গগামী শত শত যানবাহন আটকে থাকায় পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
মারাত্মক এ গাড়ির জটে শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে গণপরিবহণগুলো। আট থেকে ১০ ঘণ্টা দেরি করে কাউন্টারে পৌঁছাচ্ছে বিভিন্ন রুটের বাস। টিকেট কেটে কাঙ্ক্ষিত বাসের অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতে ঘরমুখো যাত্রীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে যেভাবে বেকায়দায় পড়েছেন, তেমনি বাস পেয়েও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
এদিকে বাড়ি ফিরতে মরিয়া মানুষ। যে যেভাবে পারছে বাড়ির পথ ধরেছেন। পশুবাহী ট্রাক থেকে পিকআপ বাদ যায়নি কোনো কিছুই।
রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে গবাদিপশু নামিয়ে ফিরতি পথে আটকে পড়া ট্রাকে ট্রাকে দেখা যাচ্ছে অসংখ্য যাত্রী। স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। গাদাগাদি করে যে যার মতো চেপে বসেছেন ট্রাকে। এ ছাড়াও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকে বাসের ছাদে চেপেই রওনা হয়েছেন গন্তব্যের পথে।
বগুড়ার যাত্রী শামীমা নাসরিন জানান, গাবতলী থেকে সাভার আসতে তাঁর তিন ঘণ্টা লেগে গেছে। বগুড়া পৌঁছাতে কতক্ষণ লাগবে তা নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছেন তিনি।
বাইপাইলে আটকে পড়া বেসরকারি সংস্থার কর্মী মোবারক হোসেন জানান, ভোর ৪টায় ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন।
দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ধীরগতিতে বাইপাইল অতিক্রম করছিলেন মোবারক।
এরই মধ্যে বৃষ্টি ও ভ্যাপসা গরমে নাজেহাল রাস্তায় নামা মানুষগুলো।
সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ করিম বলেন, কয়েকদিন ধরে গরুর গাড়ির কারণে সড়কে অতিরিক্ত চাপ রয়েছে। গতকাল কারখানা ছুটি হওয়ার পর যাত্রীবাহী গাড়ির চাপও বেড়েছে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে গাড়ি চালকদের বেপরোয়া ব্যবহারের কারণে জট লেগেই থাকছে। আশা করছি দ্রুতই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সড়কে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তারপরও যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।