বিয়ের দিন দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে আহত সেই তারমিনা মারা গেছে
রংপুরের বদরগঞ্জে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বিয়ের দিন ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত সেই মাদ্রাসা শিক্ষার্থী তারমিনা আক্তার ওরফে ফুলতি (১৪) মারা গেছে। পাঁচ দিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ রোববার সকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তারমিনা আক্তার। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তারমিনা মারা গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
এ বিষয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়েটিকে সুস্থ করে তোলার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তার বুক ও পেটের মাঝামাঝি স্থানে রক্তনালী কেটে যাওয়ায় মৃত্যু হয়েছে।’
স্বজন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পার্শ্ববর্তী মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা এলাকার পশ্চিম বড়বালায় তারমিনা আক্তারের বড় বোন তহমিনার বিয়ে হয়। একপর্যায়ে একই এলাকার মোনায়েম হোসেনের ছেলে শাখাওয়াত হোসেন প্রেমের প্রস্তাব দেয় তারমিনাকে। বিয়ের বয়স না হলেও পারিবারিকভাবে তড়িঘড়ি করে গত ২৮ জুলাই তারমিনাকে একই ইউনিয়নের গাছুয়াপাড়া এলাকায় বিয়ের দিন ধার্য করা হয়। এ ঘটনা জানতে পেরে শাখাওয়াত হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তারমিনার পরিবারের ওপর। একপর্যায়ে মোটরসাইকেলে করে নিজ বাড়ি থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে তারমিনার বাড়িতে আসেন শাখাওয়াত। বাড়ির সবাই তখন ঘুমিয়ে ছিল। এ অবস্থায় ঘুমন্ত তারমিনাকে ভোরে ডেকে দরজার কাছে ছুরি দিয়ে উপর্যুপুরি আঘাত করেন শাখাওয়াত। এতে তারমিনা বুক, দুই উরু ও পাজরে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তারমিনা। বাড়ির লোকজন ছুটে এসে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে চেতনা হারিয়ে ফেলে তারমিনা। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে শাখাওয়াত হোসেনকে ধাওয়া দিলে সে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে তারমিনাকে গুরুতর আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। পাঁচ দিন ধরে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে এই তারমিনা।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঘটনার দিন সকালে তারমিনাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি করানো হয়। এদিকে ঘটনার পর গত বৃহস্পতিবার শাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে বদরগঞ্জ থানায় মামলা করা হয়েছে। তারমিনা লোহানীপাড়া দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তোয়াব আলী ও পারভিন আক্তার দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান ছিল তারমিনা আক্তার ওরফে ফুলতি। তার এমন মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
তারমিনার মামা মানিক মিয়া বলেন, ‘শনিবার রাত ৯টার দিকে শেষবারের মত কথা বলেছিল সে। এর থেকে সে জ্ঞানহারা ছিল। আজ সকাল ৬টা ১০ মিনিটের দিকে সে মারা যায়। শত চেষ্টা করেও আমার ভাগনিকে বাঁচানো গেল না। মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে চিকিৎসার টাকা জোগাড় করেছে তারমিনার বাবা তোয়াব আলী। ধার-দেনা করে সে এখন নিঃস্ব। এরপরও মেয়েকে বাঁচাতে পারলেন না তিনি’, বলে ডুকরে কেঁদে ওঠেন।
বদরগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় ঘাতকের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হয়েছে। এখন সেটি হত্যা মামলা হিসেবে গণ্য হবে। আসামিকে ধরতে আপ্রাণ চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।