এক ব্যারেল তেলের উৎপাদন খরচ কত?
তেলের দরপতন অব্যাহত থাকায় হুমকির মুখে পড়েছে বিশ্বের জ্বালানিশিল্প খাত। তবে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোই বেশি সংকটে পড়ছে।
জ্বালানি খাতের আন্তর্জাতিক পরামর্শক ও ব্যবসায় তথ্যসেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান রিস্ট্যাড এনার্জির গবেষণা প্রতিবেদনের (আপস্ট্রিম ডাটাবেজ) বরাত দিয়ে সম্প্রতি সিএনএন মানি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে এক ব্যারেল (১৫৯ লিটার) জ্বালানি তেল উৎপাদন করতে ব্যয় হয় ৫২ দশমিক ৫ ডলার বা ৪ হাজার ২০০ টাকা। তবে বর্তমানে দেশটিতে এক ব্যারেল জ্বালানি তেলের বাজারদাম তিন হাজার ৩৬০ টাকা। এ হিসাবে এক লিটার তেলের দাম ২১ টাকা। প্রতি লিটার তেলে লোকসান হয় প্রায় ছয় টাকা।
ব্রাজিলে এক ব্যারেল তেল উৎপাদনে খরচ হয় তিন হাজার ৯২০ টাকা। কানাডায় ব্যারেলপ্রতি তেল উৎপাদনে খরচ হয় তিন হাজার ২৮০ টাকা।
যুক্তরাষ্ট্রে এক ব্যারেল জ্বালানি তেল উৎপাদনে খরচ হয় দুই হাজার ৮৮০ টাকা। তবে দেশটির বাজারে ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ধারাবাহিকভাবে কমছে।
রিস্ট্যাড এনার্জির তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বে ৬৫ হাজার তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র রয়েছে। তেলের উৎপাদন খরচের চেয়ে বাজারদর কম হওয়ায় তেলশিল্পের আয়ে ধস নেমেছে।
তেলের বাজারদর অস্বাভাবিক হারে কমায় অনেক দেশই উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে।
সৌদি আরব ও কুয়েতে এক ব্যারেল তেল উৎপাদন করতে গড়ে খরচ হয় ১০ ডলার বা ৮০০ টাকার কম। ৮৫৬ টাকা বা তার কমে ইরাকে এক ব্যারেল তেল উৎপাদন করা যায়।
রিস্ট্যাড এনার্জির প্রধান গবেষক পার মাগনুস নিসভিন বলেন, তেলের দাম কমলেও উৎপাদন খরচ কম থাকায় মধ্যপ্রচ্যের দেশগুলোর তেলশিল্প খাত এখনো শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
২০১৪ সালেও আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ছিল আট হাজার টাকা। তবে বর্তমানে তার অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে।
রিস্ট্যাডের বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের কিছু সিদ্ধান্তের কারণে তেলশিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। বাজারে তেলের অতিরিক্ত সরবরাহ থাকার পরও তেল উত্তোলনে ওপেকের সিদ্ধান্ত এ শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। উঁচু উৎপাদন খরচ হওয়া দেশগুলোকে হটিয়ে বাজার দখল করতে ওপেকের নেতৃত্ব দেওয়া সৌদি আরব এই ধরনের নকশা এঁকেছে বলে তাঁদের ধারণা।
তবে অনেক বিশ্লেষকের মতে, সাত বোন খ্যাত ব্রিটিশ পেট্রলিয়াম (বিপি), গালফ অয়েল, স্ট্যান্ডার্ড অয়েল অব ক্যালিফোর্নিয়া, ট্যাক্সাকো বা শেভরন, রয়্যাল ডাচ শেল, স্ট্যান্ডার্ড অয়েল অব নিউ জার্সি এবং স্ট্যান্ডার্ড অয়েল অব নিউইয়র্ক বর্তমানে অ্যাক্সন মবিলের বেশি মুনাফা করার প্রবণতায় তেলশিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই সাত কোম্পানির পাঁচটিই যুক্তরাষ্ট্রে, একটি ব্রিটিশ ও একটি ডাচ। এসব কোম্পানি তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোকে বেশি পয়সা না দেওয়ার পণ করেছে। তবে তারা ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি দাম আদায় করতে চায়।
কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, বাজারে মাত্র একজন জোগানদাতা থাকলেও অভিন্ন দাম না-ও থাকতে পারে। একই ব্যবসায়ী যখন বিভিন্ন বাজারে পণ্য সরবরাহ করেন, তখন কোন বাজারে কী দাম নেওয়া, তা নির্ভর করে কোন বাজারে প্রতিযোগিতা কেমন তার ওপর। যেখানে প্রতিযোগিতা বেশি, সেখানে দাম কম এবং যেখানে প্রতিযোগিতা কম, সেখানে দাম বেশি। ফলে প্রতিযোগিতার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমছে।