সিলেট-৩ উপনির্বাচন : ইভিএমে ভোটগ্রহণ শনিবার
সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচন আগামীকাল শনিবার। সম্পূর্ণ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে ১৪৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। এজন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আজ শুক্রবার বিকেলে ইভিএমসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম প্রতিটি কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব (নৌকা), জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক (লাঙল), বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া (ডাব) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বহিষ্কৃত সদস্য শফি আহমেদ চৌধুরী (মোটর সাইকেল)।
সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদের জানিয়েছেন, উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ইতোমধ্যে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে দুই সদস্যবিশিষ্টি একটি ‘নির্বাচনী তদন্ত কমিটি’ গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। কমিটিতে রয়েছেন সিলেটের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ তাসলিমা শারমিন এবং সিনিয়র সহকারী জজ নির্জন কুমার মিত্র।
বুধবার নির্বাচন কমিশনের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সিলেট-৩ আসনের নির্বাচনের জন্য তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁঞাকে দক্ষিণ সুরমা উপজেলায়, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জন কান্তি দাসকে বালাগঞ্জ উপজেলায় এবং সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুমন ভূঁইয়াকে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটরা ২ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট পাঁচদিন নির্বাচনী মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন। বিচার কাজের জন্য তারা একজন বেঞ্চ সহকারী/স্টেনোগ্রাফার/অফিস সহকারীকে সহকারী হিসেবে সঙ্গে নিতে পারবেন।
এদিকে, নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদির জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে নির্বাচনী এলাকা দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায় মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রোববার দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত এ নির্দেশ জারি থাকবে।
সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদির জানান, নির্বাচনী এলাকায় ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস, কার ও জিপ চলাচল বন্ধ থাকবে।
তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রার্থী, তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম শিথিল থাকবে। এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং গণমাধ্যমের কাজে ব্যবহৃত যানবাহনের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে না।
নির্বাচন অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, আগামীকাল ৪ সেপ্টেম্বর সাধারণ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলায় থাকবে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশের ১৭ থেকে ১৮ জন সদস্য। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে নিয়োজিত থাকবে ১৮ থেকে ১৯ জন। এদের মধ্যে পুলিশ আর আনসার সদস্যের কাছে অস্ত্র থাকবে। তারা সার্বক্ষণিক ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা দেবেন।
পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত মোবাইল ফোর্স ২১টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স ১২টি, র্যাবের ১২টি টিম ও ১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বিজিবির সঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও দায়িত্ব পালন করবেন।
ভোটগ্রহণের দিন নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতকরণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত রাখা হবে ২১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। অন্যদিকে রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিংবা ভোট গণনা কক্ষের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে।
সিলেট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) লুৎফুর রহমান জানান, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে জেলা পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ৩৬টি এবং বালাগঞ্জ উপজেলায় ৩৪টি কেন্দ্র রয়েছে।
প্রতিটি কেন্দ্রে একজন উপপরিদর্শক, একজন অতিরিক্ত উপপরিদর্শক ও চারজন কনস্টেবল নিয়োজিত থাকবেন। তবে, কেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনায় কনস্টেবল সংখ্যা বেশি হতে পারে।
সিলেট মহানগর পুলিশের দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তার থানার অধীনে ৩৫টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি মোট ১৪ থেকে ১৬টি মোবাইল টিম, ২৫ সদস্য করে দুটি স্ট্রাইকিং ফোর্স, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা দায়িত্বে থাকবেন।
মোগলাবাজার থানার ওসি শামসুদ্দোহা জানান, তার থানার অধীনে ৪৪টি কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে কিছু কেন্দ্রে দুষ্কৃতিকারীরা বিশৃঙ্খলা করতে পারেন বলে তথ্যও পেয়েছেন। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ দৃষ্টি রাখবে বলে জানান তিনি।
দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসন। ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৫২ হাজার। গত ১১ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যু হয়। এরপর ১৫ মার্চ আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
করোনা পরিস্থিতির কারণে দেরিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়। ২ মার্চ ঘোষিত তফসিল ঘোষণার সময় ১৪ জুলাই নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুপারিশে ২৮ জুলাই নতুন তারিখ দেওয়া হয়। নির্বাচনের দুদিন আগে একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত নির্বাচন স্থগিতের নির্দেশ দেন। অবশেষে আগামীকাল ৪ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণ হতে যাচ্ছে।