নিউইয়র্কে কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরিতে ‘বাংলা কর্নার’ উদ্বোধন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
‘মুজিব বর্ষ’ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপনের অংশ হিসেবে নিউইয়র্কে কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরিতে ‘বাংলা কর্নার’ স্থাপন করা হয়েছে।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের উদ্যোগে এবং কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরি’র সহযোগিতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন স্থানীয় সময় গতকাল এ কর্নার উদ্বোধন করেন। তিনি এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন।
এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন সি. ল্যু, কুইন্স বোরো প্রেসিডেন্ট ডোনাভান রিচার্ডস এবং কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেনিস এম. ওয়ালকট। এ ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটির সদস্য ও সাংবাদিকেরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কম্যুনিটির সর্ববৃহৎ আবাসস্থল নিউইয়র্কের কুইন্স বোরো, যেখানে ইংরেজি, স্প্যানিশ ও চীনা ভাষার পরেই বাংলা চতুর্থ বৃহৎ ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সে কারণে কুইন্স বোরোতে অবস্থিত কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরিতে ‘বাংলা কর্নার’ উদ্বোধন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। ‘বাংলা কর্নারে’ মোট ৩০৯টি বই বাংলাদেশ কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। বইগুলো বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিষয়ে বাংলাদেশের প্রথিতযশা লেখক ও সাহিত্যিকদের লেখা।
এ ছাড়া বাংলাদেশের উপন্যাস, গল্পসমগ্রসহ শিশু-কিশোর উপজীব্য বই এ কর্নারে স্থান পেয়েছে।
২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পর পর তিন বছর কুইন্সের মূলধারাকে সম্পৃক্ত করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কুইন্সে ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশি-আমেরিকানদের জন্য কনস্যুলেট যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরিতে ‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষ্যে ‘বাংলা কর্নার’ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। ২০২০ সালে এই ‘বাংলা কর্নার’ বিপুল পরিসরে উদ্বোধনের কথা থাকলেও কোভিড-১৯ মহামারির কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীকালে এ বছর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলাকালীন সীমিত পরিসরে কোভিড সংক্রান্ত নিয়মাবলী অনুসরণ করে ‘বাংলা কর্নার’টির উদ্বোধন করা হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বলেন, ‘২০২১ সাল বিভিন্ন দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ বছর আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং আজ (গতকাল) জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, এ ছাড়া এ বছর বাংলাদেশের আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি হলো—বাংলাদেশ এ বছরই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার সব সূচকে সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন, সে কারণে এ বছরের এ দিনে ‘বাংলা কর্নার’-এর শুভ উদ্বোধন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তিনি এ সময় কুইন্স লাইব্রেরিকে ঘিরে তাঁর অতীত স্মৃতিচারণ করেন। তিনি আরও বলেন, আমরাই একমাত্র জাতি, যারা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি। তিনি আশা প্রকাশ করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাঁদের ভবিষ্যত প্রজন্মদের নিয়ে এই ‘বাংলা কর্নার’-এ আসবেন এবং বই পড়বেন। তিনি এই বিশেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ৩২টি ভাষণের সংকলণ ও বিশ্লেষণ এবং প্রধানমন্ত্রীর ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে ৭৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির লেখা সংবলিত বিশেষ সংকলন কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরিকে উপহার দেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, মুজিববর্ষে স্থাপিত এই ‘বাংলা কর্নার’টি আমাদের বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটির জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরিসহ অন্যান্য মূলধারার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কনস্যুলেটের যোগাযোগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ও ব্রাজিলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা এবং কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেনিস এম. ওয়ালকট অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর জাতিসংঘে প্রথম বাংলায় ভাষণ প্রদান এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক বাংলা ভাষণকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে এক অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি এ প্রসঙ্গে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধুর বারংবার কারাবরণের সময়কাল উল্লেখ করে বলেন মুজিব বর্ষে এই ‘বাংলা কর্নার’ স্থাপন যথার্থ প্রতীকী এবং গুরুত্ব বহন করে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন সি. ল্যু, এবং কুইন্স বোরো প্রেসিডেন্ট ডোনাভান রিচার্ডস এবং সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস। প্রত্যেকেই বাংলা ভাষাকে নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশি-আমেরিকানদের কাছে তুলে ধরার এ উদ্যোগের প্রশংসা করেন। এর মাধ্যমে বাংলা ভাষাভাষী সবার বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা তৈরি হবে বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন।
বক্তব্য শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর নিজের লেখা বেশ কয়েকটি বই কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির প্রেসিডেন্ট ডেনিস ওয়ালকটের হাতে তুলে দেন। কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেনিস এম. ওয়ালকট কমিউনিটিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে একটি সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন। এই বইগুলো কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির প্রধান শাখায় ছয় মাস প্রদর্শিত হবে এবং পরবর্তীকালে উক্ত লাইব্রেরির বিভিন্ন শাখায় বইগুলো সংগৃহীত থাকবে।