পন্টুন ভেঙে আরিচা-কাজীরহাট নৌরুটে আটকা ৫ শতাধিক ট্রাক
পাটুরিয়ায় ডুবে যাওয়া ফেরি এখনও উদ্ধার সম্ভব না হলেও এরই মধ্যে ভেঙে গেছে কাজীরহাট ঘাটের পন্টুন। এর ফলে পাবনার কাজীরহাট-আরিচা নৌরুটে আটকা পড়েছে ৫ শতাধিক পণ্য বোঝাই ট্রাক।
দুদিন ধরে যানবাহন পারাপার বন্ধ থাকায় এই নৌপথে দুই পাড়ে আটকে আছে পাঁচ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক। ফলে সেখানকার পাঁচ কিলোমিটার জুড়ে দেখা দিয়েছে প্রচণ্ড যানজট। এ ছাড়া ভেঙে যাওয়া পন্টুনের কারণে ঘাটে ভিড়তে না পেরে আরিচা থেকে যানবাহন নিয়ে আসা দুটি ফেরি দীর্ঘ সময় নদীতে নোঙর করতে হয়। এতে ওই ফেরিঘাটে পারাপারের জন্য আসা যানবাহনের শ্রমিক ও যাত্রীদের দুর্ভোগ এখন চরমে। গতকাল গভীর রাতে আরিচা ঘাট থেকে নতুন পন্টুন নিয়ে আসা হয় এবং আজ রোববার সেটি স্থাপন করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, নতুন পন্টুন স্থাপন হলে দুর্ভোগ কমে আসবে।
কাজিরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে ঘাটের একমাত্র পন্টুনটি হঠাৎ করেই ভেঙে যায়। এতে ফেরিঘাটে কোনো ফেরি ভিড়তে না পরায় ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
যাত্রী ও যানবাহনের চালকরা অভিযোগ করেন, কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে ছয় থেকে সাতটি ফেরির প্রয়োজন। কিন্তু চালু রয়েছে চারটি। যে চারটি চালু রয়েছে সেগুলো একদিকে যেমন ছোট ও ধীরগতির, তেমনি ত্রুটিযুক্ত। ফলে কাজীরহাট ফেরিঘাটে আরিচায় পার হতে আসা যানবাহনের ভিড় লেগেই থাকে। এর ওপর ওই ঘাটে ফেরিতে যানবাহন ওঠা-নামার জন্য রয়েছে মাত্র একটি পন্টুন।
আছিরুদ্দিন নামের একজন ট্রাকচালক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মহাসড়কে চার-পাঁচদিন ধরে এভাবে বসে থাকায় খাওয়ার কষ্টের সঙ্গে টয়লেটের সমস্যা দেখা দিয়েছে। অথচ ঘাটের সুপরিসর ট্রাক টার্মিনালে থাকতে পারলে মহাসড়ক যেমন যানজটমুক্ত থাকত, তেমনি ট্রাক শ্রমিকদেরও থাকা, খাওয়া ও টয়লেট নিয়ে সমস্যা হতো না।’
কাজীরহাট ফেরিঘাটে পাঁচদিন ধরে পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে আটকে আছেন ট্রাকচালক গফুর আলী। তিনি বলেন, ‘এই নৌপথে সাত থেকে আটটি ফেরির প্রয়োজন। অথচ দেওয়া হয়েছে চারটি দুর্বল ও ছোট ফেরি। পন্টুন ভেঙে যাওয়ার পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলে সেটি মেরামত করা হয়নি।’
পন্টুন স্থাপন করতে মাত্র চার-পাঁচ ঘণ্টা লাগলেও এখানে প্রায় দুই দিন পরে পন্টুন স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাত্র একটি পন্টুন দিয়ে এতগুলো যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে, যা খুবই কষ্টকর ব্যাপার বলে জানান গফুর আলী।
নওগাঁ থেকে আসা ট্রাকচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এতবড় একটি ফেরিঘাটে মাত্র একটি পন্টুন থাকায় মাঝেমধ্যেই তা ভেঙে যাওয়ার খবর শুনতে পাই। এতে আমাদের চরম ভোগান্তির মধ্যে থাকতে হয়। এখানে কমপক্ষে তিনটি পন্টুন দরকার।’
পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম শামসুজ্জোহা বলেন, ‘কাজীরহাটের ট্রাক টার্মিনাল দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিআইডব্লিউটিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাও বলেছি। টার্মিনালটি দখলমুক্ত হলে ফেরিঘাট সংলগ্ন মহাসড়ক অনেকটাই যানজট মুক্ত হবে।’
বিআইডব্লিউটিসির কাজীরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আরিচা থেকে নতুন পন্টুন এসেছে। ভেঙে যাওয়া পন্টুনটি সরিয়ে ওই স্থানে নতুন পন্টুন বসানো হচ্ছে। এতে যানজট কমে আসবে।‘ বারবার পন্টুন ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই ঘাট এখন অনেকটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। উত্তরবঙ্গের এখন প্রবেশদ্বার এই নৌপথ। আরও দুটি পন্টুন নির্মাণ করা করা দরকার। একটি পন্টুন থাকায় যানবাহনের চাপে সেটি বারবার নষ্ট হচ্ছে।’