গজারিয়ায় বিদ্রোহী অজনপ্রিয়দের হাতে নৌকা, অসন্তোষ
আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যেকোনো নির্বাচনে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে দল থেকে জানানো হয়েছে। তবে, এ নির্দেশনা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হতে দেখা যাচ্ছে।
আসন্ন পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে গজারিয়া উপজেলার সাতটি ইউপির দুটিতে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রাপ্তদের নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সাধারণ জনগণের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। একটি ইউনিয়নে বিদ্রোহীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, আরেকটিতে গত নির্বাচনে স্বামী বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী থাকায় স্ত্রী তৃণমূলের তালিকায় ১ নম্বরে থাকার পরেও মনোনয়ন পাননি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গজারিয়া ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছেন মোহাম্মদ শফিউল্লাহ, যিনি গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন এবং তৃণমূলে মতামতের তালিকায় আছেন তিন নম্বরে। আর, ইমামপুর ইউপি নির্বাচনে মনোনীত হয়েছেন মো. হাফিজুজ্জামান খান জিতু। তিনি তৃণমূলের মতামতে একটি ভোটও পাননি। এ দুই ইউপিতে প্রার্থী বাছাইয়ে সবচেয়ে বড় বৈষম্য হচ্ছে—তৃণমূলের ভোটে এক নম্বরে থাকা মোসা. ফারহানা আক্তার এ্যানির স্বামী গত নির্বাচনে ইমামপুর ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তিনি মনোনয়ন পাননি। কিন্তু, গজারিয়া ইউপিতে গত নির্বাচনে শফিউল্লাহ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও এবার মনোনয়ন পেয়েছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে কথা বলে জানা গেছে, গজারিয়া ইউপিতে বর্তমান চেয়ারম্যান হচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তালেব ভূইয়া। তিনি গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে লড়াই করে ছয় হাজার ৯৩৩ ভোট পেয়ে জয়ী হন। আর ওই নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে এক হাজার ১১৩ ভোট পেয়ে পরাজিত হন মোহাম্মদ শফিউল্লাহ। আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে স্থানীয়ভাবে তালিকা তৈরি করলে সেখানেও তৃণমূলের মতামতে যথাক্রমে আট ভোট পান আবু তালেব ভূইয়া, আট ভোট পান আবুল বাসার এবং মাত্র এক ভোট পান মোহাম্মদ শফিউল্লাহ। আগের নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে এবং তৃণমূল আওয়ামী লীগ, তথা ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সমর্থন ছাড়া তিন নম্বরে থেকেও আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছেন শফিউল্লাহ। তাঁর মনোনয়ন পাওয়ার খবরে গজারিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সবারই মন্তব্য হচ্ছে—যে ব্যক্তি দলের সিদ্ধান্তকে অসম্মান করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন, তাঁকে কেন মনোনয়ন দেওয়া হলো। আর, তিনি স্থানীয় নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন তাঁর আত্ম-অহমিকা, দুর্নীতি এবং দুর্ব্যবহারের কারণে। গত পাঁচ বছরে সাধারণ জনগণ এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর চেষ্টা তো করেননি, বরং হয়েছেন আরও বেপরোয়া ও লাগামহীন। সে কারণে তিনি নির্বাচনে অংশ নিলেও ভোটে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম এবং তাঁর কারণে আওয়ামী লীগের সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে।
এদিকে, গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নেও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষিত হতে দেখা গেছে। এই ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী তিন জন হচ্ছেন—মোসা. ফারহানা আক্তার এ্যানি, মো. মেহেদি হাসান সবুজ ও মো. হাফিজুজ্জামান খান জিতু। তৃণমূলের মতামতে এ্যানি পেয়েছেন ১৬ ভোট, সবুজ পেয়েছেন চার ভোট, আর জিতু একটি ভোটও পাননি, অর্থাৎ তাঁকে চেয়ারম্যান হিসেবে আওয়ামী লীগের কেউই চায় না। অথচ অজ্ঞাত কারণে শূন্য ভোট পাওয়া জিতুই পেয়েছেন নৌকার মনোনয়ন। বিষয়টি জানার পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা তাঁদের মতামতের গুরুত্ব না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, ‘আমরা দলের ভালো চাই বলে যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনীত করতে সুপারিশ করেছি। কিন্তু যাঁর পক্ষে একটি ভোটও পড়েনি, তাঁকে মনোনয়ন দিয়ে আমাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এটি দল, নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনতে পারে।’
এ দুই ইউপির আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ভাষ্য হলো—এখানে নৌকা প্রতীকের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের দুর্বলতা রয়েছে। কিন্তু বিতর্কিত, অজনপ্রিয় ও জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ায় এই প্রার্থীরা কতটা সুফল বয়ে আনবে, তা নিয়ে পুনরায় ভেবে-চিন্তে যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাদের অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা।