টিভি
কেমন ছিল ঈদের নাটক?
ঈদের সময় দর্শকদের মূল আকর্ষণ থাকে টিভি নাটকে। বর্তমানে টিভির পাশাপাশি নাটকগুলো ইউটিউবে বা অন্য মাধ্যমে প্রচার করার কারণে সহজেই দর্শক তা দেখে নিতে পারেন। এ বছর দুই ঈদেই নাটকের মাধ্যমে নতুন চমক সৃষ্টি হয়েছে। তরুণ দর্শকদের ভেতর নাটকগুলো নিয়ে বেশ আগ্রহ লক্ষ করা গেছে।
গত বছর আয়নাবাজি চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর চলচ্চিত্র অঙ্গন কিছুটা আশাবাদী হয়ে ওঠেন। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত দর্শকরা হলে ফিরলেন, আগ্রহ দেখালেন দেশীয় গল্পে। এই দর্শকদের কেন্দ্র করেই ঈদুল ফিতরে 'আয়নাবাজি সিরিজ' নামে সাতটি নাটক বের করার পরিকল্পনা হলো। অমিতাভ রেজার তত্ত্বাবধানে কাজ করলেন আরো কিছু মেধাবী তরুণ। কয়েকটা নাটক ফেসবুকে ট্র্যান্ডিং টপিক হয়ে গেল। কৃষ্ণেন্দু চট্টোপ্যধায়ের ‘ফুল ফোটানোর খেলা’, সুমন আনোয়ারের ‘রাতুল বনাম রাতুল’, তানিম রহমান অংশুর ‘কে? কেন? কিভাবে?’, আমিতাভ রেজা চৌধুরীর ‘মার্চ মাসে শুটিং’ জনপ্রিয় হলো।
ঈদুল ফিতরেই মোস্তফা সরয়ার ফারুকিও ‘ছবিয়াল রিইউনিয়ন’ করলেন। তিনি নিজে কোনো নাটক বানালেন না, তবে তাঁরই নির্দেশনায় ভাই-ব্রাদাররা নাটক বানালেন। তাঁরা গল্প বলার একটা মৌলিক ভঙ্গি তৈরি করলেন। রেদওয়ান রনি পরিচালনায় 'মি. জনি' , হুমায়ুন সাধুর 'চিকন পিনের চার্জার' , আশুতোষ সুজন পরিচালিত 'পুতুলের সংসার' ফেসবুকে আলোচিত হলো। তবে সব থেকে বেশি জনপ্রিয় হলো আদনান আল রাজীবের ‘বিকাল বেলার পাখি’। একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের টানাপড়েনের গল্প। যেন গল্পটা আমাদের প্রত্যেকের জীবনেরই।
এবারের ঈদুল আজহাতেও অনুসরণ করা হলো আগের ঈদের কৌশল। সিরিজ নাটক প্রচার হলো টিভিতে। অমিতাভ রেজা ও মেজবাউর রহমান সুমন, এই দুজনের তত্ত্বাবধানে ‘অস্থির সময়ে স্বস্তির গল্প’ শিরোনামে নাটক বানালেন সাতজন তরুণ নির্মাতা। যাদের মধ্যে একজন নুহাশ হুমায়ূন। হুমায়ুনপুত্রের নাটকের প্রতি ছিল দর্শকের ব্যাপক আগ্রহ। তা ছাড়া এ নাটকে অভিনয় করেছেন আসাদুজ্জান নূর। কিন্তু নাটকটি আশানুরূপ সাড়া পেল না।
আহসান হাবিবের জনপ্রিয় কবিতা নিয়ে সৈয়দ আহমেদ শাওকি নির্মাণ করেছেন 'কথা হবে তো?' অভিনয় করছেন মনোজ কুমার ও নাবিলা। এই নাটকটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। নির্মাণও বেশ গোছানো ও সুন্দর ছিল।
সুকর্ণ শাহেদ নির্মাণ করছেন ‘মাহুত’। অভিনয় করছেন নাসির উদ্দিন খান, বাবলু বোস ও লুসি তৃপ্তি গোমেজ। এই নাটকও বেশ পাকা, কিন্তু অতটা আলোচিত হয়নি।
জাহিন ফারুক আমিন নির্মাণ করছেন ‘শ্যাওলা’। এটা একটা জমজমাট থ্রিলার। তবে এটাও সাড়া জাগাতে পারেনি।
সিরিজের বাইরে এবারের ঈদে সব থেকে আলোচিত নাটক হয়েছে ‘বড় ছেলে’। ঈদুল ফিতরের নাটক ‘বিকেল বেলার পাখি’র মতো মধ্যবিত্ত আবেগ নিয়ে বানানো। মেহজাবিনের অভিনয় প্রচুর প্রশংসিত হয়েছে।
শাফায়েত মনসুর রানার দুটি নাটক বেশ নাড়া দিয়েছে দর্শকদের। ‘আমরা ফিরব কবে’ নাটকে আমাদের প্রযুক্তি মুগ্ধতা এবং মগ্নতা যে আমাদের ব্যক্তি জীবনকে দুর্বোধ্য আর জটিল করে তুলছে, সম্পর্কের জন্য যে তা বিপজ্জনক তা তুলে ধরেছেন। ‘ক্যাফে ৯৯৯’ নাটকে রানা দেখিয়েছেন কিছু নাগরিক অসুখ। আধুনিকতাকে কেন্দ্র করে যে রোগ আমাদের গ্রাস করে সেটাই তুলে ধরেছেন এই নাটকে।
হাসান মোরশেদের পরিচালনায় ‘মায়া’ ভিন্নধর্মী এক নাটক । বজ্রপাতে মারা যাওয়া এক শিশুর লাশ বিক্রি নিয়ে ঘটনা। এক দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া দরিদ্র বাবার মনস্তত্ত্ব তুলে ধরা হয়েছে নাটকে।
তা ছাড়া আবু শাহেদ ইমন পরিচালিত ‘গোল্ডেন এ প্লাস’ নাটকটিও বেশ সাড়া জাগিয়েছে। মানবজাতিকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে এখানে। আশফাক নিপুণ পরিচালিত ‘আমি মটিভেশন্যাল স্পিকার হতে চাই’ নাটকটি বেশ মজার। এখন অনলাইন ভরা মোটিভেশনাল স্পিকারে। তাদের ব্যঙ্গ করে এই নাটক। মানুষ প্রধানত যখন দুর্বল বোধ করে, নিজেকে অসহায় মনে করে, তখন তার দরকার হয় মোটিভেশনের। সেই দুর্বলতার সুযোগ অন্যরা কীভাবে নেয় তার কিছুটা দেখা যাবে এখানে।
এ ছাড়া এবারের ঈদে প্রচারিত হয়েছে ‘দ্য জেন্টেলম্যান’, ‘বুকের ভেতর পাথর থাকা ভালো’, ‘গল্পের ইলিশ’, ‘স্পর্শ’, ‘সুখের লটারি’, ‘স্বৈরাচার কিংবা প্রেমিকা’, ‘দাস কেবিন’, ‘পাঞ্চ ক্লিপ’, ‘চার সপ্তাহ’, ‘না বলা সেই ডায়েরি’, ‘মায়া ও মমতার গল্প’, ‘উড়ে যাওয়ার কাল’, ‘ভাঙন’ ইত্যাদি নাটক।
শুধু এ বছর নয়, গত কয়েক বছর ধরেই ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যতিক্রমী বা ভিন্ন ধরনের নাটক তৈরির প্রচেষ্টা চোখে পড়ছে। এটি ইতিবাচক দিক। আশা করি সামনে এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমরা আরো ভালো ভালো নাটক দেখতে পাব।
লেখক : ছাত্র, সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়