ব্লু হোয়েল
আপনি কি জৈব আবর্জনা হতে চান?
ইদানীং বাংলাদেশের মিডিয়ায় ‘ব্লু হোয়েল গেমের’ কথা শোনা যাচ্ছে। নানা নামে এটি পরিচিত। ‘ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ’, ‘এ সি অব হোয়েল’ এবং ‘ওয়েক মি আপ’ ইত্যাদি অনেক নামে এটি পরিচিত। এটি এমন একটি নিকৃষ্ট খেলা, যার মাধ্যমে অল্পবয়সী শিশু-কিশোরদের আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত করা হয়। অজ্ঞাত কোনো কারণে কিছু কিছু তিমি মাছ সমুদ্রসৈকতে অল্প পানিতে এসে পুরো দলসহ মারা গেছে এমন রহস্যজনক ঘটনা মাঝেমধ্যে ঘটে। এর থেকেই এই গেমের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ব্লু হোয়েল গেম’। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ব্লু হোয়েল গেমের কারণে কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এমনটা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়নি। তবে ‘ব্লু হোয়েল গেম’ খেলার বেশ কতগুলো কাহিনী জাতীয় দৈনিকগুলোতে ছাপা হয়েছে। সার্চ ইঞ্জিন গুগলের গত ১২ মাসের প্রবণতাবিষয়ক রিপোর্টে দেখা গেছে, পৃথিবীতে ‘ব্লু হোয়েল গেম’ নামে যত সার্চ করা হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানের অধিকারী। এ সময়কালে বাংলাদেশে এই ধরনের সার্চ ৪৭% বেড়েছে। এই সব সার্চের ক্ষেত্রে পাকিস্তান প্রথম স্থানের অধিকারী এবং ইন্ডিয়া চতুর্থ স্থানের অধিকারী (ঢাকা ট্রিবিউন, অক্টোবর ১২, ২০১৭)। এই তথ্য কিন্তু বেশ দুঃখজনক। বাংলাদেশের মতো ছোট দেশের মানুষের আত্মহত্যার গেমের প্রতি তীব্র আগ্রহ রয়েছে।
‘ব্লু হোয়েল গেম’ আসল অর্থে কোনো গেম নয়। এতে যারা আত্মহত্যাপ্রবণ বা নিজের ক্ষতি নিজে করতে চায় এমন শিশু-কিশোরদের নিজের ক্ষতি করতে ও শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত করা হয় এই গেমে। এই গেম যে খেলবে তাকে বলে চ্যালেঞ্জোর। চ্যালেঞ্জারকে গেম পরিচালনাকারী বা অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বা কিউরেটর নির্ধারিত ৫০টি কাজ করতে হয়। প্রতিটি কাজকে একটি এপিসোড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতিদিন একটি করে কাজ করতে হয়। প্রথম দিকে সাধারণ ছোটখাটো কাজ করতে দেওয়া হয়। যেমন সকাল ৪টায় উঠতে বলা হলো। গভীর রাতে কিউরেটর সরবরাহকৃত ভূতের ছবি দেখতে বলা হলো। পরের কাজগুলো ক্রমান্বয়ে কঠিন হয়ে ওঠে। পুরো বিষয়টি শেষ হয় চ্যালেঞ্জারের আত্মহত্যার মাধ্যমে। আত্মহত্যা করতে পারলে চ্যালেঞ্জোর খেলায় উইন করল বলে বিবেচনা করা হয়।
এই গেমটিকে অনেকে গেম না বলে ‘সাইবার বুলিং’ বা ‘অনলাইন শেমিং’ বলার পক্ষপাতী। এটি নিকৃষ্ট ধরনের অপরাধ কার্যক্রম বলে একে ‘সাইবার ক্রাইমের’ আওতায় ফেলা যায়। কেননা, এতে ঝুঁকিতে আছে এমন শিশু-কিশোরদের অপরিপক্বতার ও নেতিবাচক চিন্তার সুযোগ নিয়ে তাদের ভয় দেখিয়ে খেলা চালিয়ে যেতে, অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করতে উৎসাহিত করা হয়।
ফিলিপ বুদেকিন নামের একুশ বছর বয়সী রাশান বহিষ্কৃত সাইকোলজির ছাত্র ২০১৩ সালে এই গেম তৈরি করেন। বুদেকিনের ভাষায়, এই গেম তৈরির উদ্দেশ্য হলো যেই মানুষগুলোর কোনো মূল্য নেই, তাদের আত্মহত্যা করিয়ে সমাজকে তাদের কবল থেকে রক্ষা করা। তার ভাষায়, এ ধরনের মানুষগুলো হচ্ছে ‘বায়োলজিক্যাল গারবেজ’। কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার জন্য বর্তমানে বুদেকিন রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে জেলে আছেন।
রাশিয়ান তদন্তকারী কর্মকর্তা অ্যান্টন ব্রেইডিওর মতে, ছোট বয়সে বুদাকিনের তেমন কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব ছিল না। সমবয়সী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার বনত না। সে শিক্ষার সময়টি ছাড়া পুরো সময়টিতে অনলাইনে ব্যয় করত। তার মা কাজের জন্য অনেক ব্যস্ত থাকতেন এবং তাঁকে সময় দিতে পারতেন না। অ্যান্টন ব্রেইডিওর মতে, বুদাকিন কী করছে, তা সে নিজে খুব ভালোভাবে বুঝেই করেছে। এই বিচ্ছিন্ন লোকটি এই গেম আবিষ্কার করে অল্পবয়সী শিশুদের জীবনের ওপর পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এক ধরনের দূষিত আনন্দ পেতে শুরু করল। সে বেশ কয়েক বছর ধরে এই গেমটিকে আরো নিখুঁত ও মরণঘাতী করে তুলেছে। তাঁকে যখন জেল দেওয়া হয়, তখনো তার মধ্যে কোনো বিকার ছিল না।
মে ২০১৬-তে রাশিয়ার ‘নভায়া গেজেটা’ পত্রিকা রাশিয়ার ভি কনটাকটি (VKontakte) সোশ্যাল নেটওয়ার্কের ‘এফ ফিফটি সেভেন’ গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে আত্মহত্যার ব্যাপকতা নিয়ে রিপোর্ট করে। এ ধরনের ১৩০টি আত্মহত্যার কথা বলা হয়েছিল। পরে অবশ্য এই আত্মহত্যাগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে পাওয়া গেছে। এর সঙ্গে গ্রুপের তৎপরতার কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। দেশে দেশে ব্লু হোয়েল গেমের ফলে আত্মহত্যার ব্যাপকতা নিয়ে যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, তার সত্যতা নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। মনে রাখতে হবে যে, এই গেম ছাড়াও পৃথিবীতে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা আছে। আত্মহত্যা যে এই গেমের ফলেই হয়েছে তা প্রমাণ করা কঠিন।
ব্লু হোয়েল গেমের পেছনে খুব খারাপভাবে কিছু মনোবৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, আমরা যখন কোনো কিছুকে ভয় পাই তখন ভয় মোকাবিলা করার জন্য মনোবিজ্ঞানীরা ভয়টির সঙ্গে ক্রমান্বয়ে মুখোমুখি হতে বলেন। এর জন্য কতগুলো ধাপ তৈরি করেন, যাতে যিনি ভয়টি মোকাবিলা করছেন, তিনি হঠাৎ ঘাবড়ে না যান। এভাবে ফোবিক ডিজঅর্ডারের চিকিৎসা করা হয়। এই প্রক্রিয়াকে বলে ‘সিস্টেমেটিক ডিসেনসিটাইজেশন’। ব্লু হোয়েল গেমেও মৃত্যুর বিষয়টি মোকাবিলা করার জন্য, অর্থাৎ সফলভাবে আত্মহত্যা করার জন্য ক্রমান্বয়ে কতগুলো ধাপ অনুসরণ করানো হয়। যেমন—যারা এটি খেলবে, অর্থাৎ চ্যালেঞ্জারদের যারা গেমটি নিযন্ত্রণ করছে, অর্থাৎ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বা কিউরেটররা ক্রমান্বয় কতগুলো কাজ দেয়, যার মূল উদ্দেশ্য ভয় জয় করা। যেমন—শেষ রাতে উঠে পড়া, উঁচু ছাদে গিয়ে সেলফি তোলা, অন্ধকার বাগানে গিয়ে ছবি তোলা, হাতে অল্প করে কাটা, ক্রমান্বয়ে বেশি করে কাটা ইত্যাদি। এর শেষ হয় আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে।
কিশোর বয়সে মানুষের মস্তিষ্কের বিকাশ সম্পন্ন হয় না। এই বিকাশ পঁচিশ বছর পর্যন্ত হতে থাকে। কাজেই কিশোর-কিশোরীরা চিন্তা-চেতনায় অপরিপক্ব থাকে। তাদের বোকা বানানোও সহজ হয়। যে যা বলে তারা প্রায়ই তা বিশ্বাস করে। পৃথিবীর সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকে। তাদের মধ্যে নিজস্ব একটি ভালো-মন্দের বোধ তৈরি হয়। তারা ভালো-মন্দের বিবেচনায় যে পটভূমি কাজ করে, তা বুঝতে পারে না। একেক প্রেক্ষাপটে ন্যায্য আচরণ একেক রকম হবে, এটা তারা বোঝে না। খারাপ কাজ করার শপথ ভঙ্গ করা অনেক ভালো একটি কাজ তারা তা ধরতে পারে না। ‘ব্লু হোয়েল গেম’ খেলার প্রথমেই কিশোর-কিশোরীদের সাবধান করা হয় যে, এই গেম খেললে তাদের মৃত্যুও হতে পারে, আর একবার শুরু করলে তাদের এটি শেষ করতেই হবে, কোনোভাবেই বের হতে দেওয়া হবে না। সে এরপরও এই গেম খেলতে সাহস রাখে কি না, তা তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়।
এটি এক ধরনের প্ররোচনা হিসেবে কাজ করে। সে কাপুরুষ, সাহসী নয় এটি স্বীকার করা অল্পবয়সী বাচ্চাদের জন্য আসলেই কঠিন হয়ে ওঠে। কিশোর বয়সে বাচ্চাদের সামজিকতা এক বিশেষভাবে বিকশিত হয়। তারা অভিভাবকদের থেকে সমবয়সী বন্ধু-বান্ধবীকে বেশি গুরুত্ব দেয়। তারা ক্রমান্বয়ে নিজের স্বাধীনতার দিকে মনোযোগী হয়ে ওঠে। বাচ্চাদের মধ্যে প্রচলিত ধ্যান-ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করার মানসিকতা তৈরি হয়। এমনকি ধর্ম নিয়েও তারা প্রশ্ন তোলে। যেটা সবাই ভালো বলে তারা তাকে গুরুত্ব দেয় না; বরং নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি তার যত আগ্রহ। ফলে যৌনতা ও যৌনক্রিয়া, নেশা—যেকোনো সমাজ-অস্বীকৃত জিনিসের প্রতি তার মোহ কাজ করে। কিশোররা বর্তমানে বাস করে। ভবিষ্যৎ বিবেচনা করতে পারে না। যা মনে হয় তাই করে। এরা তাদের সমবয়সীদের মধ্যে বিদ্যমান চল অনুসরণ করে। একেক সময় একেক ট্রেন্ড আসে। তাদের বয়সী অনেক বাচ্চা তখন এগুলো অনুসরণ করে। ফলে তারাও করে। ভাবে না। তাদের অভ্যাস হলো বড়রা কতটুকু পর্যন্ত সহ্য করবে তা বার বার পরীক্ষা করা। এমন কিছু করে বসবে যা মানা কঠিন। বড়দের প্রতিক্রিয়া দেখবে। পরে আবার এ ধরনের কিছু একটা করবে। বড় হলে বয়স বাড়ে, অভিজ্ঞতা বাড়ে, মস্তিষ্ক পরিণত হয়, চিন্তায় গভীরতা আসে।
তখন এসব অস্বস্তিকর ব্যাপারও চলে যায়। ব্লু হোয়েল গেম কিন্তু এই কিশোরদেরই টার্গেট করে। তাদের বিকাশের ফলে সৃষ্ট নাজুক অবস্থাকে কিউরেটররা কাজে লাগায়। কিউরেটরেরা চ্যালেঞ্জারকে ভূতের মুভি দেখতে বলে। মুভি ও মন খারাপ করা মিউজিক সাপ্লাই করে। এ ছাড়া যেসব মুভিতে বাস্তব ও অবাস্তব একদম গুলিয়ে যায়, সেগুলোও দেখতে দেয়। ফলে এই কাঁচা মনগুলোতে একধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাদের আত্মহত্যার বীভৎস ভিডিও দেখতে দেওয়া হয়। তার সঙ্গে থাকে আর্তচিৎকার, দুমড়ে যাওয়া, ফেটে যাওয়া বিকৃত দেহ, জমাট রক্ত ও মনের ওপর চাপ ফেলে এমন মিউজিক।
গভীর রাতে একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে এই ধরনের ভিডিও ক্লিপ দেখায় তাদের মনের ওপর চাপ পড়ে। আত্মহত্যার একটি আকাঙ্ক্ষা মনে চলে আসে। তাদের না ঘুমাতে বলা হয়। দিনের পর দিন না ঘুমানোর ফলে তাদের মাথা একদম এলোমেলো হয়ে যায়। তাদের বোঝানো হয় যে, বাঁচার থেকে মরে যাওয়াই ভালো। তার পরিবার, তার বাবা-মা তাকে চায় না। তারা তাকে বোঝে না, কখনো বুঝবেও না। তার থেকে মরে যাওয়াই ভালো। অল্পবয়সে মরে যাওয়া একটি বড় ব্যাপার। সে স্পেশাল কেউ হয়ে উঠবে। তাকে বিশেষ কিছু গুণের জন্যই মৃত্যুর খেলা খেলতে বেছে নেয়া হয়েছে। সবাই এমন সুযোগ পায় না। বিষণ্ণতা রোগের চিকিৎসায় সাইকোলজিস্টরা ‘থট চ্যালেঞ্জ’ প্রক্রিয়া ব্যবহার করে রোগীর নেতিবাচক চিন্তা দূর করে তাকে সুস্থ করে তোলেন। এখানে কিউরেটররা চ্যালেঞ্জারদের মাথায় নানাভাবে নেতিবাচক চিন্তা পাকাপোক্ত করে দেয়। তাকে বিষণ্ণ করে তোলে। অনেকটা ‘থট চ্যালেঞ্জের’ উল্টো প্রয়োগের মতোই।
এই কিশোরদের একটি বিশেষ গ্রুপের সদস্য করা হয়। এই সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপের সদস্যরা সবাই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এই গ্রুপের সদস্যরা একে অপরকে বোঝে, মূল্যায়ন করে। যতক্ষণ চ্যালেঞ্জার খেলতে রাজি থাকে, ততক্ষণ কিউরেটরেরাও তাকে অনেক ভালোবাসা দেয়। বিষয়টি ‘পজিটিভ রিএনফোর্সমেন্ট’ বা ‘পুরস্কার’ হিসেবে কাজ করে। এই পুরস্কারের শর্ত একটাই, ক্রমান্বয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাও, আত্মহত্যা করো। অন্যদিকে এই ধরনের শিশু-কিশোরদের সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রায়ই মানসিক দূরত্ব থাকে। ফলে এই চ্যালেঞ্জারেরা এ ধরনের গ্রুপের সদস্যপদ হারাতে চায় না। তারা অনুভব করে যে, পৃথিবীতে একমাত্র এই গ্রুপেই তার মূল্য আছে। কিউরেটররা চ্যালেঞ্জারদের বলে যাতে তারা অন্য মানুষের সঙ্গে খরাপ ব্যবহার করে। যাতে অন্যদের পারলে মার লাগায়, গালাগালি করে। সারা দিন কথা না বলে চুপ করে থাকতে বলে। যাদের সঙ্গে খাতির আছে তাদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে বলে। এভাবে চ্যালেঞ্জার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ওঠে।
কিউরেটররা চ্যালেঞ্জারকে কোনো প্রাণী হত্যা করে তার বীভৎস ভিডিও ক্লিপ পাঠাতে বলে। কিশোর বয়সে তীব্র আবেগ থাকে। খুব অনড় ধরনের নীতিবোধ থাকে। কিউরেটররা চ্যালেঞ্জারদের শপথ করিয়ে নেয় যে তারা খেলবেই। এবং তারা কথা গোপন রাখবে। ফলে কিশোর-কিশোরীরাও কথা গোপন রাখে। কাউকে বলে না। কিশোর বয়সের আরেকটি বৈশিষ্ট্য অপরিপক্বতা ও নাটকীয়তা। ব্লু হোয়েল গেমে হাত কেটে লিখতে হয় এফ ফিফটি সেভেন বা এফ ফরটি, অথবা হাত কেটে তিমি মাছের ছবি আকতে হয়। আত্মহত্যা করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত হলে পায়ে চামড়া কেটে লিখতে হয় ‘ইয়েস’। এই পুরো ব্যাপারটি নাটকীয়তার ব্যাপারটি কাজে লাগানো হয়েছে। শপথ নিতে হয় যে, সে এখন একজন ‘হোয়েল’। আত্মহত্যায় প্রলুব্ধ করার জন্য অন্য একজন বা একাধিক চ্যালেঞ্জারের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করিয়ে কথা বলিয়ে দেওয়াও খেলার একটি ধাপ। এ ছাড়া সুযোগ থাকলে এমন দুজন চ্যলেঞ্জার সামনাসামনি কথাও বলে। এর মাধ্যামে ভয় ভাঙা হয়। আরেকজনকে সেল্প হার্ম করতে দেখলে বা তার সঙ্গে কথা বললে আরেকজন সাহস পায়।
এই একই প্রক্রিয়ায় গ্রুপ থেরাপিতে শুচিবাই বা ওসিডি রোগীদের এই রোগ জয় করতে এনকারেজ করা হয়। সেখানে রোগী আরেকজনকে ভয় জয় করতে দেখে নিজে উৎসাহিত হয়। এটিকে বলে রোল প্লে। এই খারাপ লোকগুলো সেটাকেই খারাপভাবে ব্যবহার করছে। চিকিৎসা পদ্ধতিকে খুন করার জন্য কাজে লাগাচ্ছে। কিউরেটরেরা চ্যালেঞ্জারদের কমান্ড মানতে উৎসাহিত করে। এ জন্য তারা মাদক চিকিৎসায় ব্যবহৃত ‘মোটিভেশনাল ইন্টারভিউয়িং’ পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে কমান্ড মানতে উৎসাহিত করছে। কেউ খেলা ছেড়ে চলে যেতে চাইলে এই কিউরেটরেরা তাদের ভয় দেখায়। ব্ল্যাকমেইল করে। বলে তাদের প্রিয় মানুষদের, যেমন—বাবা-মা বা বন্ধু-বান্ধবীকে মেরে ফেলবে। খেলার প্রথম দিকেই ভুলিয়ে-ভালিয়ে তাদের কাছ থেকে তাদের ফেসবুক আইডি ও পাসওয়ার্ড, একান্ত ব্যক্তিগত ব্ল্যাকমেইল করার উপযুক্ত ছবি ইত্যাদি নিয়ে রাখে।
যখন কিউরেটরেরা ভয় দেখায় তখন কিশোর-কিশোরীরা ভয় পেয়ে যায়। ফলে খেলা চালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। অনেক সময় তাদের আত্মহত্যা করাতে না পারলেও দুর্ঘটনা ঘটাতে চেষ্টা করা হয়, যা আত্মহত্যার মতোই মনে হবে। যেমন—কিউরেটরেরা বলল, ছাদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে ঝুকে সেলফি তুলে পাঠাতে, চলন্ত ট্রেন বা বাসের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে ও এগুলো তার গায়ে এসে পড়ার এক-দুই ফুট দূর থাকতেই সরে পড়তে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আর সরে পড়া হয় না। সময় থাকে না। তখন এই গেমের একটি নতুন শিকার সংযুক্ত হলো। শিশু-কিশোরদের মধ্যে একটি অংশ আছে, যারা মানসিকভাবে অসুস্থ। বাংলাদেশে এই হার ১৮.৩৫%। এদের একটি অংশের রয়েছে বিষণ্ণতা। বিষণ্ণতার একটি লক্ষণই আত্মহত্যা প্রবণতা।
যাদের মধ্যে গুরুতর মানসিক রোগ (সাইকোসিস) রয়েছে, যাদের মধ্যে অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিজঅর্ডার রয়েছে, পারসোনালিটি ডিজঅরডার রয়েছে, যারা নেশা ব্যবহার করে তারাও আত্মহত্যাপ্রবণ হয়। এই রোগাক্রান্ত কিশোর-কিশোরীরা এই ধরনের গেম খেললে তা তাদের জন্য অতি বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। এ ছাড়া ২০১৭ সালের এপ্রিলের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী (এস্টিমেটেড) বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার প্রতি এক লাখে ছয়। এই ধরনের গেম এই হারের বৃদ্ধির কারণ হয়ে উঠতে পারে। আত্মহত্যা ছাড়াও অনেক মানুষ নিজের ক্ষতি নিজেই করে থাকে। একে বলে ‘সেল্প হার্ম’। অত্মহত্যার থেকে এই হার অনেকটা বেশি। তারাও বিপদের মধ্যে আছে। কিউরেটররা কিন্তু বড় মানুষ। এদের নিজেদের আত্মহত্যা করার কোনো আগ্রহ নেই। যত আগ্রহ অন্যদের মারার জন্য।
বাংলাদেশে কি এই খেলা এসে গেছে?
এ ধরনের দুই একটি গেম খেলার ঘটনা শোনা যাচ্ছে। পত্রিকাতে রিপোর্ট এসেছে। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে মূল গেমটি এ দেশে খেলা কঠিন। কীভাবে এটি খেলতে হয়, তা নিয়ে নানা মত রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন যে যারা খেলবে তাদের স্মার্টফোনে বিশেষ ধরনের কতগুলো অ্যাপস ইনস্টল করতে হবে। এই খেলাগুলো হয় ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে। জেনে রাখা ভালো যে, ইন্টারনেটের যে অংশগুলো আমার সার্চ ইঞ্জিন যেমন, গুগল ইত্যাদি দিয়ে সার্চ করতে পারি তাকে বলে ‘সার্ফেস ওয়েব’। আর যেগুলো সার্চ করে পাওয়া যায় না, পাসওয়ার্ড দিয়ে বা অন্য কোনোভাবে লুকানো থাকে তাকে বলে ‘ডিপ ওয়েব’। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী মাত্র ৪% ওয়েব হলো সার্ফেস ওয়েব। বাকি ৯৬% ওয়েবই ‘ডিপ ওয়েব’।‘ডার্ক ওয়েব’ হলো ‘ডিপ ওয়েবের’ একটি অংশ যা কোনো সার্চ ইঞ্জিন দিয়ে খুঁজে পাওয়া যায় না। ডার্ক ওয়েব অপরাধী চক্রের জায়গা যা তারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটনের জন্য ব্যবহার করে। অনেকের মতে, ব্লু হোয়েল গেম খেলতে ‘বিট কয়েন’ লাগে। ‘বিট কয়েন’ এক ধরনের নেট নির্ভর টাকা, যা কোনো দেশের রাষ্ট্রীয় আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত নয়। আন্তর্জাতিকভাবেও এর স্বীকৃত নয়। এটি একটি বেআইনি অর্থ লেনদেন প্রক্রিয়া। এর মূল্যমান পরিবর্তিত হতে থাকে।
২৫ অক্টোবরের হিসাব অনুযায়ী এক ‘বিট কয়েন’ কিনতে গেলে বাংলাদেশি চার লাখ সাতান্ন হাজার পাঁচশত ঊনআাশি টাকা প্রয়োজন ছিল। ‘ব্লু হোয়েল গেম’ খেলতে এক বিট কয়েনের অংশ বিশেষ লাগে, যা অনেক টাকা। বাচ্চাদের এত টাকা নেই। ‘বিট কয়েন’ কম্পিউটারে জটিল সমস্যার সমাধান করেও অর্জন করা যায়। বেশির ভাগ বাচ্চার সেই প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা নেই। আমাদের দেশের ইন্টারনেট সংযোগ অতটা ভালো নয়। অনেকেরই আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড নেই। ডার্ক ওয়েবে ঢুকে ‘ব্লু হোয়েল গেম’ খেলার মতো প্রযুক্তি বা দক্ষতা বেশির ভাগ মানুষের নেই। যুক্তি বলে মূল ব্লু হোয়েল গেম খেলা এ দেশে দুরূহ। তবে একটি বিকল্প মতও আছে।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এটি খেলা যায়। যেমন—ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম। কিউরেটররা এগুলো ব্যবহার করে চ্যালেঞ্জারদের সঙ্গে কাজ করে। এমনও হতে পারে যে, বাংলাদেশে কতগুলো খারাপ লোক নিজ উৎসাহে কিউরেটর হয়ে বিনা টাকাতেই কতগুলো অসহায় কিন্তু আত্মহত্যাপ্রবণ কিশোরদের এই কাজে উৎসাহিত করছে। বিশেষত ‘ব্লু হোয়েল গেম’ নামেই গেম। এটি মূলত কতগুলো নির্দেশনা। কাজেই অতি উন্নত কোনো অ্যাপস হয়তো অতটা দরকারও নেই। ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করা হয় মূলত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। বাংলাদেশি অপরাধী চক্র (কিউরেটর) কিছুটা বিপদের ঝুঁকি নিয়েও এটি ছাড়াই কাজ চালাতে পারে। কোন মতটি ঠিক, তা নিশ্চিত হওয়া খুবই কঠিন।
আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ
বাংলাদেশের উচ্চ আদালত ‘ব্লু হোয়েল গেমস’-এর লিংকগুলো ব্লক করার জন্য সরকারকে আদেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া এ ধরনের অন্যান্য গেম, যেগুলো আত্মহত্যা উসকাতে পারে সেগুলোকেও ব্লক করতে বলা হয়েছে। আদালত মোবাইল ফোন অপারেটরদের স্পেশাল নাইট টাইম অফার, অর্থাৎ নেট ব্যবহারে রাত্রিকালীন মূল্যহ্রাস করা থেকে বিরত থাকতেও বলেছেন (১৬ অক্টোবর ২০১৭ ইং তারিখে ‘দি ডেইলি স্টার’ পত্রিকায় প্রকাশিত)। বাংলাদেশ টেলি কমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) এ জন্য ইতিমধ্যে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে।
শিশু-কিশোরদের প্রতি পরামর্শ :
-জীবন অনেক সুন্দর। জীবনকে ভালোবাসো।
-যদি কঠিন সময় পার করতে হয়, ধৈর্য ধরো। একদিন সুদিন আসবে।
-ইন্টারনেট, মোবাইল, সোশ্যাল মিডিয়া, গেমিং এগুলোতে অতিরিক্ত সময় দিয়ো না।
-যেসব বন্ধু-বান্ধবী পর্নোগ্রাফি, নেশা, অপরাধমূলক কাজকর্ম, ব্লু হোয়েল গেম ইত্যাদিতে জড়িত তাদের সঙ্গে মিশো না।
-তোমাকে কেউ যদি এমন কিছু করতে বলে যা তোমার ভালো লাগছে না বা তুমি করতে চাও না, তবে সোজা না বলে দাও। এ ক্ষেত্রে কোনো দ্বিধা করবে না। তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করো, তাকে ফেসবুকে ব্লক করো, দেখা করা ও গল্প করা বন্ধ করো। সে যদি বেশি বিরক্ত করে তবে বাবা-মাকে বলে দেবে। কেউ তোমার হাত কাটতে বললে, ইত্যাদি অসৎ পরামর্শ দিলে বড়দের বলে দাও।
-মন খারাপ লাগলে, মরে যেতে ইচ্ছা করলে, আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা করলে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নাও। ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, মানসিক হাসপাতাল, পাব না, সব কয়টি সরকারি মেডিকেল কলেজে এ ধরনের সেবা পাওয়া যায়। জরুরি মুহূর্তে ফোন করে হেল্পলাইনে ফোন করে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে পার।
অল্প-স্বল্প মন খারাপ লাগলেও বিশ্বাস করা যায় এমন কাউকে বলবে, আলোচনা করবে, চেপে রাখবে না। ভালো হয় যদি সেটা পরিবারের মধ্যেই কেউ হয়। যদি বন্ধুদের বল তবে বিপরীত লিঙ্গের কাউকে বলতে গেলে আবার অন্য ধরনের ঝামেলায় জড়ানোর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই ছেলেরা ছেলেদের ও মেয়েরা মেয়েদের বলাই উত্তম।
-তোমাকে ইন্টারনেটে বা মোবাইলে হুমকি দিলে বা ডিস্টার্ব করলে স্থানীয় থানায় জিডি করতে পারো। অথবা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) হটলাইন ২৮৭২ এই নম্বরে সরাসরি অভিযোগ করতে পার। তবে এসব ক্ষেত্রে তোমান মোবাইলের বা নেটের তথ্য সেভ করে রাখবে যাতে তদন্তকারী কর্মকর্তারা তথ্য সংগ্রহ করে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারেন। পরিবারের বড়দের সাহায্য নিয়ে এটা করাই ভালো।
-ইতিবাচক চিন্তা করো। সমবয়সীদের সঙ্গে মাঠে খেলাধুলা করো। সুস্থ গল্পগুজব ও পড়াশোনা নিয়ে থাকো।
- মনে রাখবে ‘ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ’ খেলা কোনো সাহসের পরিচয় নয়। বরং অপরিপক্বতা ও খুব বড় ধরনের বোকামির পরিচয়। গেমটির স্রষ্টা ফিলিপ বুদেকিন নামের লোকটি যারা এই গেম খেলবে তাদেরকে জৈব আবর্জনা বলে অভিহিত করছে। সে বলেছে যে, এই আবর্জনাগুলো আত্মহত্যা করলে সমাজ তাদের বোঝা থেকে মুক্ত হতে পারে। তুমি কি নিজেকে আবর্জনা ভাব?
বাবা-মায়ের প্রতি পরামর্শ
-আপনার শিশুর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ুন। সে যাতে আপনাকে তার সব কথা বলতে পারে। সে যাতে বুঝে সে বিপদে পড়লে আপনি তার সঙ্গে আছেন। তার কথাগুলো যাতে সে আপনাকে বলে। সহজে উপদেশ দেবেন না। সহজে বকা দেবেন না। সম্ভব হলে একদম গায়ে হাত তুলবেন না।
-তার কথা শুনুন, বিবেচনায় নিন। শুরুতেই উড়িয়ে দেবেন না। কোনো কিছু দিতে না পারলে বিকল্প কিছু দেওয়ার প্রস্তাব করুন।
-তার আউটডোর গেমসের ব্যবস্থা করুন যাতে সে সমবয়সীদের সঙ্গে খেলতে পারে। সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করুন।
-ইন্টারনেট, কম্পিউটার বেসড গেম, টিভি ইত্যাদিও পেছনে সর্বোচ্চ এক থেকে দুই ঘন্টা ব্যয় করতে দিন। ও সোশ্যাল মিডিয়াতে কতটুকু কী করছে, কী ধরনের পোস্টিং করছে সম্ভব হলে তা লক্ষ করুন। ও কাদের সঙ্গে মিশে তাও লক্ষ করুন। তবে ওর জীবন অতিষ্ঠ করে ফেলবেন না। শুধু লক্ষ রাখুন। খুব বাড়াবাড়ি না হলে ততটা বাধা দেওয়ার কিছু নেই।
- আপনার সন্তানের মধ্যে হঠাৎ পরিবর্তন হয় কি না লক্ষ করুন। ও কি কথা বলা একদম কমিয়ে দিল? ওর কি হাতে পায়ে কাটা দাগ পাওয়া যাচ্ছে? ও কি ঘুম থেকে ওঠার সময় অনেক এগিয়ে আনল, শেষ রাত্রে উঠে পড়তে শুরু করল? ও কি কিছু গোপন করছে? ওর হাতে বা পায়ে কি তিমি মাছের ছবি, এফ ফিফটি সেভেন বা এফ ফোরটি ছুরি দিয়ে কেটে লেখা আছে? ও কি হঠাৎ খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করল? ও কি বলছে যে, সে কিছু গোপন করছে? ও কি আত্মহত্যার কথা বলেছে? অনেক দূরে চলে যাওয়ার কথা বলছে? প্রিয় জিনিসগুলো কাউকে দিয়ে দিচ্ছে? ও কি কারো সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়াতে যোগাযোগ করছে, কিন্তু পরমুহূর্তে সব কমিউনিকেশন ডিলিট করে দিচ্ছে? ও কি হঠাৎ করে ভূতের ছবি বা ভয়াবহ ধরনের মুভি বা মিউজিক দেখতে শুরু করল?
- আপনার মনে কোনো সন্দেহ হলে সন্তানের সঙ্গে সরাসরি কথা বলুন। তারপরও সন্দেহ থেকে গেলে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে নিয়ে আসুন। এই ধরনের শিশুদের সাইকোথেরাপি ও প্রয়োজনে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
শেষ কথা
‘ব্লু হোয়েল গেম’ আমাদের দেশে আছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই। তবে থেকে থাকলেও তা একদম সীমিত। পৃথিবীর অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও নিকৃষ্ট অপরাধীরা কিউরেটর হয়ে এই গেম চালাতে পারে। এই অসুস্থ নির্দেশনা মালা বা তথাকথিত গেম পৃথিবীব্যাপী খুবই অস্বস্তি তৈরি করেছে। তবে এ ধরনের কিছুর সামনে পড়লে আমাদের উচিত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া ও এই ধরনের গেমার শিশু-কিশোরদের উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
স্নেহ-ভালোবাসাপূর্ণ পারিবারিক বন্ধন ও মানসিকভাবে অসুস্থ শিশু-কিশোরদের সময়মতো চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে এই অদ্ভুত বিপদ তৈরিই হবে না। ভালো পারিবারিক পরিবেশ ‘ব্লু হোয়েল গেম’ এর এই সৃষ্টিছাড়া বিপদ দূর করা ছাড়াও শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করবে, আত্মহত্যা ও সেল্প হার্ম করার প্রবণতাও কমাবে। আসুন সচেতন হই, সঠিক পদক্ষেপ নেই, সুন্দর আগামী গড়ি।
লেখক : ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর অব ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।