কৃষিতে প্রযুক্তির ছোঁয়া
ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া লেগেছে এখন কৃষিতেও। আর এর সুফল পাচ্ছে সরাসরি কৃষক। এখন দেখা যাক কৃষিতে ডিজিটাল ব্যবস্থা আসলে কীভাবে কাজ করছে। কৃষিকে ডিজিটাল করার জন্য কাজ শুরু করেছেন বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার। সেখানে কৃষকদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে একটি কৃষি ইনফরমেশন পোর্টাল বা কৃষি তথ্য বাতায়ন। এটি সাম্প্রতিক সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের কৃষকদের জন্য উদ্বোধন করেছেন। এ পোর্টোলে কৃষকদের জন্য বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পরামর্শ, বাজারদর, বিভিন্ন রপ্তানি কৃষিপণ্যের ব্যবস্থাপনা, কৃষি পণ্য রপ্তানি করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণসহ নানাবিধ প্রয়োজনীয় তথ্যাদি নিয়মিত হালনাগাদ হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে।
তা ছাড়া চালু করা হয়েছে মোবাইল ফোনে তথ্য পাওয়ার জন্য একটি ‘হটলাইন’।তাছাড়া আগে থেকেই দেশে বর্তমানে সহজলভ্য মোবাইল ফোন এবং স্মার্টফোনের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে কৃষিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। কৃষির যেকোনো সমস্যায় কৃষক, কৃষি সম্প্রসারণকর্মী, কৃষি বিশেষজ্ঞ, কৃষি বিজ্ঞানীদের সবার সাথে একটি সমন্বিত যোগাযোগ থাকা প্রয়োজন। আর সেটি বর্তমানে খুবই সহজ হয়ে গেছে। কারণ এখন যোগাযোগ করার জন্য প্রত্যেকের হাতেই রয়েছে একটি করে মোবাইল ফোন। দেখা যায় প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কোনো এলাকার একজন কৃষক তাঁর জমির ফসলে কোনো একটি সমস্যা দেখতে পেলেন। তখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সেটার তাৎক্ষণিক ছবি তুলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন স্থানীয় কৃষি বিশেষজ্ঞ, কিংবা পরামর্শকের কাছে। তড়িৎ পরামর্শও পেয়ে যাচ্ছেন। আর সেটি করার জন্য রয়েছে মোবাইল ফোনে ব্যবহার যোগ্য ফেসবুক, মেসেঞ্জার, এমএমএসসহ আরো অনেক রকমের ডিজিটাল পদ্ধতি, যার মাধ্যমে অতি সহজেই কৃষক তার সেবা পেয়ে চলেছেন।
প্রথম দিকে প্রতি ইউনিয়নে একটি করে আইটি সেন্টার করার ব্যবস্থা নেন। সেখান থেকে গ্রামীণ জনপদের আবালবৃদ্ধবনিতাকে দেশ-বিদেশের সাথে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে যোগাযোগের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছিল। সেখান থেকে সরাসরি কৃষকরাও বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান করার সুযোগ পেয়েছেন।
কৃষি কাজের বিভিন্ন রকম সমস্যা রয়েছে। তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো মোকবিলা করে কৃষক নিজেরা। যেমন রয়েছে উন্নত ও নিরাপদ বীজ, সার, কীটনাশকসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণের সহজ প্রাপ্তি, তেমনি রয়েছে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ। প্রত্যেকটি পর্যায়েই কৃষককে যোগাযোগের প্রয়োজন পড়ে। আর সে যোগাযোগটি যখন কোনো একটি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সম্ভব তখন তাদের কাজটা অনেকটা সহজ হয়ে যায়। কমে আসে গ্রামীণ মানুষের মবিলিটি। এতে অর্থ, সময় ও শ্রম-সবকিছুর সাশ্রয় হয়।
কৃষিকে ডিজিটাল করে আরো কৃষকবান্ধব করার জন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এমনকি মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো এগিয়ে আসছে। তারা একটি ‘হটলাইন’ সৃষ্টি করে সেটার মাধ্যমে কিছু ওয়ানস্টপ সেবার আয়োজন করেছে। দেশের সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমে কৃষির সমস্যা ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করা হয়। তারমধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রেডিও, টেলিভিশন, অনলাইনভিত্তিক ও প্রিন্ট সংস্করণের সংবাদ মাধ্যম ও কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন সংগঠন।
তেমনি একটি সংগঠন হলো কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ বা কেআইবি। তারা এ বছর (২০১৮) থেকে রাজধানী ঢাকার কেআইবি কমপ্লেক্সে একটি ইনফরমেশন সেন্টার চালু করেছে। সেখান থেকে সরাসরি কৃষকদের সমস্যার সমাধানে অনলাইনে পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে। এখন কৃষিকে আরো ডিজিটাল করার উদ্দেশে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মোবাইলে ব্যবহার উপযোগী বেশ কিছু অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়ার বা অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে যার মাধ্যমে অতিদ্রুত এবং অতি সহজেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্যসেবা পাওয়া যাচ্ছে। এভাবেই কৃষি আরো আধুনিকতার দিকে এগিয়ে চলেছে যার মাধ্যমে আমাদের দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখছে।
লেখক : কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়