শিক্ষা
আন্দোলন সফল, দায়িত্ব বাড়ল শিক্ষার্থীদের
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের প্রাথমিক ফসল ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছে। অসংখ্য মানুষের ধারণাকে মিথ্যে করে দিয়েই এসেছে এই সাফল্য। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে পারে এই ধারণা যেমন দেশের অধিকাংশ মানুষের ছিল না, তেমনি খোদ সরকারও করতে পারেনি পূর্বানুমান।
এই আন্দোলন কোনো সহিংসতা ছড়ায়নি, দেখিয়েছে দাবি আদায়ের অসাধারণ যোগ্যতা, আর আন্দোলন যে কখনো কখনো বিনোদনও হয়ে উঠতে পারে তার প্রমাণও মিলেছে বিভিন্ন ঘটনায়। পুলিশের সঙ্গে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলা, ফুল দিয়ে জড়িয়ে ধরা এসব তো বিনোদনই।
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছ থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পেয়েছে অকুণ্ঠ সমর্থন, ভালোবাসা। নিজেদের কষ্ট আর ভোগান্তিকে উৎসর্গ করেছে শিক্ষার্থীদের জন্য। এটা কিন্তু আন্দোলনকারীদের ঋণী করেছে। অতএব, আন্দোলনকারীদের দায়িত্ব আরো বাড়ল।
এত দিন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছিল সব ধরনের আলোচনার বাইরে। এই আন্দোলন তাদের দাঁড় করিয়েছে সমাজের সম্মুখ ভাগে। এখন এই শিক্ষার্থীরা আর নিজেদের মধ্যে আটকে থাকলে চলবে না। হাত বাড়াতে হবে প্রত্যেকের তরে। কারণ আপনারা মানুষের মনে আশা জাগিয়েছেন। বৃহত্তর আলোচনায় না গিয়ে এককথায় বললে বলা যায় ভ্যাট-বিরোধী আন্দোলন ছিল আপনাদের ব্যক্তিগত। সেখানে আপনারা মানুষের সমর্থন পেয়েছেন। অতএব এবার মানুষের অধিকার আদায়ের নানা আন্দোলন-সংগ্রামেও আপনাদের অংশগ্রহণ সাধারণের কাছে প্রত্যাশিত।
বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে নিম্ন মানের পাঠদানের আর উচ্চমূল্য হাতিয়ে নেওয়ার। এটা মাথায় রাখতে হবে। যথোপযুক্ত শিক্ষা দানে ব্যর্থ হলে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে আর ছাড় দেওয়া চলবে না। শুনতে যতটাই খারাপ লাগুক- এটা মাথায় রাখতে হবে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে আছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের তুলনায়। প্রথম সারির কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে বাকি বেশির ভাগেরই অবস্থা করুণ। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হলে আপনাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে, যারা ছিলেন ভ্যাট-বিরোধী আন্দোলনের সম্মুখে।
মনে রাখতে হবে আপনারা বলে ফেলেছেন- ‘শিক্ষা কোনো পণ্য নয়।’ সুতরাং শপিংমলেও কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থাকতে পারে না। থাকা উচিত নয়। আপনারা যেমন সরকারের অন্যায্য দাবির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সফলতা পেয়েছেন, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় যেসব আইন-কানুন বিদ্যমান আছে, সেসব মানতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করা আপনাদেরই কাজ।
আপনাদের দেখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাস থেকে পরিচালিত হচ্ছে কি না, অননুমোদিত ক্যাম্পাসে পাঠদান চলছে কি না, দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের আভাব আছে কি না, মান সম্পন্ন ল্যাবরেটরি ও লাইব্রেরি আছে কি না এবং গবেষণা হচ্ছে কি না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব দুর্বলতায় যদি আপনারা চুপ করে থাকেন, তবে শুধু নিজেরা ঠকবেন না, প্রতারণা করবেন সেই সব মানুষের সঙ্গেও যারা আপনাদের সমর্থন দিয়েছে, আপনাদের আন্দোলনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছে।
পরিশেষে বলা প্রয়োজন, যারা এই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা সতর্ক থাকবেন। আপনারা এখন অনেক স্বার্থান্বেষী মহলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেন। আপনাদের ব্যবহার করে অনেকেই অন্যায় কাজে সফল হওয়ার চেষ্টা করতে পারে। আপনাদের অভিনন্দন, সংগ্রামী শুভেচ্ছা।
লেখক : স্টাফ করেসপনডেন্ট, নিউ এজ