ক্রিকেট
ভারতকে হারানোর ক্ষমতা বাংলাদেশের আছে
বদলে যাওয়া ক্রিকেটের দেশ এখন বাংলাদেশ। মাথা উঁচু করে, হুঙ্কার ছেড়ে, বাঘের মতো গর্জন করে প্রতিপক্ষের বুকে কাঁপন ধরিয়ে মাঠের লড়াইয়ে নামার দেশ বাংলাদেশ। এই টাইগার বাহিনী এখন বিশ্বের যেকোনো দলকে যেকোনো মুহূর্তে হারানোর সক্ষমতা রাখে।
মাশরাফি বাহিনী এখন আর কোনোরকমে মাঠের লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য নামে না। নামে যেকোনো মূল্যে জয় ছিনিয়ে আনার জন্য। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে সব ম্যাচে জিততে পারে না। সব ম্যাচেই জয় পাবে এমনটা প্রত্যাশা করাও ঠিক নয়। প্রতিপক্ষ দলও তো খেলতেই নামে। তাদেরও চেষ্টা থাকে সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে দলকে জেতানোর। তা ছাড়া খেলায় একদল জিতবে, একদল হারবে এটাই স্বাভাবিক। লড়াইটাই এখানে মুখ্য। লড়াইয়ে কোনো কোনো দিন কেউ কেউ একটু এগিয়ে যায়। যারা এগিয়ে যায়, তারাই ম্যাচ জিতে নেয়। তবে খেলা দেখেই কিন্তু বোঝা যায়, লড়াইটা হচ্ছে সেয়ানে সেয়ানে, এটাই হলো প্রধান।
তবে এও ঠিক যে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখনো নতুন। কদিন আর হলো টি-টোয়েন্টি খেলার বয়স? এই তো সেদিন। হারতে হারতে শুরু। প্রথম দিকের শর্ট ক্রিকেট ফরম্যাটের ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশের প্লেয়ারদের একটা টার্গেটই থাকত, এই ফরম্যাটে তাঁরা নতুন, কোনোভাবে একটা সম্মানজনক স্কোর গড়তে পারলেই তাঁরা খুশি। জয়ের কথা যে মনে মনে থাকত না, তা নয়; তবে মাঠের লড়াইয়ে শক্তি ও দুর্বলতার বিষয়গুলো খুব স্পষ্ট হয়ে ধরা দিত। এখন পাল্টেছে সময়। ওয়ানডে ক্রিকেটের মতো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও মূল লড়াইয়ে পাঞ্জা দেওয়ার মতো রসদ এরই মধ্যে সংগ্রহ করে ফেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট।
চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দুটি ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু কোনো ম্যাচেই বলার মতো খারাপ খেলেনি টাইগাররা। বলতে গেলে খুবই দুর্দান্ত ফাইট দিয়েছে তারা। পাকিস্তানের সঙ্গে সেদিনের ম্যাচে বাংলাদেশ নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু চেষ্টা করেছে। পাকিস্তানের ২০১ রানের পাহাড় ডিঙানোর টার্গেটে ১৪৬ রান করেছে মাশরাফি বাহিনী, যাকে টি-টোয়েন্টিতে কোনোক্রমেই কম বলা যায় না। যেকোনোভাবেই হোক, ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না। অধিকন্তু পাকিস্তান সেদিন খুব ভালো খেলেছে। এই পাকিস্তানকেই কিন্তু গেল বছরের শেষদিকে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দুই ফরম্যাটেই হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গের ১৫৬ করা ম্যাচটি তো বলা চলে জাস্ট হাত ফসকে বের হয়ে গেল। অল্পের জন্য। কয়েকটি ইশ্, কয়েকটি আহ যদি না থাকত, ম্যাচ শেষে বিজয়ের হাসি কিন্তু বাংলাদেশই হাসত। ইশ্, আহগুলো ঘটেছে ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে। এ রকম টানটান উত্তেজনার ম্যাচে দু-একটি সুযোগের হাতছাড়াই বড় ব্যবধান গড়ে দেয়। ভাগ্য এদিন আমাদের সহায় হয়নি। মিস হয়ে গেছে। তার পরও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ দুলেছে সর্বদা জয়-পরাজয়ের মাঝখানে। শেষ ধাক্কায় ঝুলেছে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার দিকে। এটা অস্ট্রেলিয়ার নেহাতই সৌভাগ্য।
তার পরও কম জ্বালা বুকে নিয়ে মাঠে নামেনি টাইগাররা সেদিন। বলা চলে, জাস্ট খেলা শুরুর আগমুহূর্তে তুরুপের সবচেয়ে দামি তাসটিকে মাঠের বাইরে রাখতে বাধ্য করেছে আইসিসির বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। কোনো আইনের তোয়াক্কা না করেই, একেবারে মনগড়াভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানিকে। তাঁরা মাঠে থাকলে ফল ভিন্নও হতে পারত। তামিম ইকবালও অসুস্থতার কারণে নামতে পারেননি মাঠে।
অন্যদিকে, ওই ম্যাচে বিসিবির মূল একাদশ নির্বাচনও আঘাত দিয়েছে ম্যাশ সমর্থকদের মনে। বলা হয়, নাসির একাই মাঠে তিনজনের ফিল্ডিং করেন। ফিল্ডিংয়ের সময় সারা মাঠেই তাঁর দৌড়াদৌড়ি বিশেষভাবে চোখে পড়ে। কিন্তু বিসিবি এই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ম্যাচে তাঁকে একাদশের বাইরে রেখেছে। পরীক্ষিত সৈনিককে রিজার্ভ বেঞ্চে বসিয়ে রেখে অভিষেক ঘটিয়েছে সাকলায়েন সজীবকে। তিনি খুব একটা দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেননি এদিন। অবশ্য তিনি যদি জ্বলে উঠতে পারতেন, পরিস্থিতি অন্য রকমও হতে পারত। তিনি জ্বলে ওঠেননি। উঠলে হয়তো এই দর্শকই বাহ্বা দিতেন। যেহেতু তিনি ভালো করেননি, ওদিকে নাসির ছিলেন মাঠের বাইরে বসা, এমন অবস্থায় নাসিরভক্তরা যদি বিসিবির ওপর চটে যান, তাঁদের খুব বেশি দোষ দেওয়া যায় বলে মনে করি না।
তবে আশার কথা, দীর্ঘদিনের চোট কাটিয়ে মুস্তাফিজ ফিরেছেন মাঠে। এবং সঙ্গে তাঁর দুর্দান্ত সব কাটার স্টক সঙ্গে করে নিয়েই ফিরেছেন। শক্তি-সামর্থ্যে কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ।
আজ রাত ৮টায় ব্যাঙ্গালুরুতে ভারতের সঙ্গে খেলা। ভারত কোনো অংশেই বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে নেই। তবে হ্যাঁ, যদি বলা যায় তারা একটি দিক দিয়ে আগাগোড়া এগিয়ে আছে আমাদের চেয়ে। তাদের গোপন চোখের ইশারাই হয়তো আইসিসি আমাদের দুর্ধর্ষ তাসকিন-সানিকে মাঠের বাইরে পাঠিয়েছে। কার্যত আমরা ভারতের মতো এ ব্যাপারে তিল পরিমাণ এগোতে চাই না, বরং পিছিয়েই থাকতে চাই। ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। সে ভদ্রতার দারুণ মাপকাঠি হয়ে উঠতে চায় বাংলাদেশ। পর্দার আড়ালে দেনা-পাওনায় যত পিছিয়েই থাকুক টাইগাররা, মনোবল এখনো তাদের পর্বতপ্রমাণ অটুট। অনেক ঝড় বয়ে গেছে দলের ওপর দিয়ে হয়তো, অনেক ঝরেছে চোখের পানি, তবু জানি, এই তারুণ্যই ভাঙবে বাধা, ছিনিয়ে আনবে বিজয়খানি।
যেকোনো বিচারেই বাংলাদেশ আজ হারাতে পারে ভারতকে। তাদের হারিয়ে এশিয়া কাপের প্রতিশোধ নেবে, নেবে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপেরও। আজকের ম্যাচে বাংলাদেশ জিতবে—এই প্রত্যাশা। খেলার মাঠে জিতবে যেমন, জিতবে কোটি কোটি ক্রিকেটভক্তের হৃদয়ও।
শুভকামনা, প্রিয় মাশরাফি বাহিনী।
লেখক : শিক্ষক, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।