প্রতিক্রিয়া
আমি জিপিএ ৫ পেয়েছি, I am GPA 5
এবার এসএসসিতে সারা দেশে গড় পাসের হার ৭৮.৩৩ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় বেশি। এ বছর জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। শিক্ষার্থীরা মনে করে, জিপিএ ৫ পাওয়ার এ যুগে অন্য কোনো ফল করাটাই যেন হতাশাজনক। কয়েক বছর ধরে নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হওয়ার ফলে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাসের হার বাড়ছে, জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর হারও বাড়ছে। অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়া ও ক্লাসে আসার প্রবণতা বাড়ছে। আর তাই পাসের হারও বাড়ছে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে শিক্ষাব্যবস্থায় গুণগত মান বৃদ্ধি করা খুবই প্রয়োজন। কিন্তু আমরা কি পারছি গুণগত মান বৃদ্ধি করতে?
কয়েক দিন ধরে মাছরাঙা টেলিভিশনের একটি রিপোর্ট ভাইরাল হয়ে ফেসবুক, ইউটিউবে ঘুরছে। বাংলাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের মান যে কতটা নিম্নগামী, তা এই ভিডিও দেখলে বোঝা যায়।
আসুন, চীন দেশের উন্নয়নের গল্প শুনি। বিপ্লবের পর চীন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য প্রায় ১২ বছর তাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিল। চীন সরকারের বক্তব্য ছিল, এত ছেলেমেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে কী করবে? কোথায় চাকরি পাবে? কে-ই বা চাকরি দেবে? এত হাজার হাজার বেকারকে চাকরি দেওয়ার মতো প্রতিষ্ঠান চীনে নেই। এই সময়টায় চীন ছাত্রছাত্রীদের আধুনিক প্রশিক্ষণ দিয়েছিল নানা ধরনের ট্রেড কোর্সে। স্বল্পমেয়াদি ট্রেড কোর্স শিখে চীনের ছেলেমেয়েরা স্বাবলম্বী হয়ে গেল। প্রতিটি বাড়ি গড়ে উঠল একটা করে ছোট ছোট কারখানায়। পরিবারের সবাই সেখানে কাজ করে। বড় ফ্যাক্টরি করার আলাদা খরচ নেই। ফলে পণ্যের উৎপাদন খরচ কমে গেল। চীন সরকার তাদের ১০০ কোটি মানুষকে সম্পদে পরিণত করল। এখন চীনে উচ্চ মানের বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে। বিভিন্ন দেশের ছেলেমেয়েরা সেখানে পড়ালেখাও করছে।
১০০ কোটি মানুষকে যদি সম্পদে রূপান্তর করা যায়, তাহলে আমরা কি পারি না এই ১৬ কোটি মানুষকে বোঝা না বানিয়ে সম্পদে রূপান্তর করতে? এর জন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন নেই; প্রয়োজন কর্মমুখী শিক্ষার। রোগকে অস্বীকার করলে সঠিক মেডিসিন প্রেসক্রাইব হয় না আর তাতে রোগও সারে না। শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আরো গবেষণা ও পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি মানোন্নয়নের প্রচেষ্টা চালানো প্রয়োজন এবং এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরো অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এর জন্য দরকার সরকারের আন্তরিকতা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।