ভালো থাকবেন স্যার
আমার বয়স বেশি না, সবেমাত্র ২৩। এই বয়সে মৃত্যুচিন্তা আসা অস্বাভাবিক। কিন্তু প্রকৃতি যুক্তিবোধ বোঝে না। প্রকৃতি নিষ্ঠুর। তা না হলে মাহমুদুল হাসান সোহেল স্যারের সঙ্গে এমন কেন হলো?
আজ আমাদের ডিপার্টমেন্টের সোহেল স্যার মারা গেলেন। স্যার কতটা ভালো মানুষ ছিলেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না; বুয়েটের সবাই জানেন। খবরটা শুনেই ক্যাম্পাস থেকে হলে চলে এলাম করো সঙ্গে কথাবার্তা না বলে। আমাকে সাধারণত আবেগ তেমন একটা স্পর্শ করে না। একটা মানুষের মৃত্যু আমাকে এভাবে আন্দোলিত করবে, জানতাম না।
২২ তারিখ রাত ৪টার দিকে তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন তাঁর অবস্থা তেমন একটা ভালো ছিল না, তাই কর্তৃপক্ষ রাখেনি। বারডেমে যোগাযোগ করা হয়, সেখানেও নাকি আইসিইউ খালি ছিল না। তাঁর অবস্থা তখন আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। শেষমেশ নিয়ে যাওয়া হয় নর্দার্নে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, প্রকৃতি শেষ রক্ষা হতে দেয়নি।
ভাবছিলাম, খবরটা শুনে কেন এত খারাপ লাগছিল। শুনলাম, স্যার তাঁর মা-বাবার একমাত্র সন্তান, তাই? স্যারের বিয়ে হয়েছিল কয়েক দিন আগে। আর তিনি মারা গেলেন, তাই? কেবল তিনি স্যার হলেন বুয়েটে, জীবনের অনেক বড় স্বপ্ন সত্য হলো তাঁর, পুরো জীবনটা সোনালি ঊষায় রেখে চলে গেলেন তাই? নাকি আমার নিজের জন্যই খারাপ লাগছিল জানি না।
আমি খারাপ ছাত্র, ডিপার্টমেন্টের স্যারদের কাছে স্নেহ, আদর আশা করাটা আমার জন্য অবান্তর, সেই অধিকার আমি রাখি না। তিনি বোধ হয় গুটি কয়েক শিক্ষকের মধ্যে একজন, যিনি সস্নেহে সবার সঙ্গে কথা বলতেন এবং সেই সবার মধ্যে আমি একজন ছিলাম, এ জন্য আমি সৌভাগ্যবান।
স্যার আপনি যেমন ছিলেন, আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক বলে, শেষ পর্যন্ত থাকলে আপনি হয়তো একসময় বুয়েটের সেরা শিক্ষকদের একজন হতেন। ওপারে ভালো থাকবেন স্যার।
স্যারের স্ত্রীকে আমি চিনি না, কিন্তু তাঁর জন্য আমার খারাপ লাগছে অনেক। জানলাম, তিনি এমন একজন মেয়ে, ছোটবেলায় যিনি অ্যাক্সিডেন্টে বাবা-মা হারিয়েছেন, চাচা তাঁকে বড় করে বিয়ে দিলেন। কয়দিনের মধ্যে (অনুষ্ঠান করার আগেই) হাজবেন্ডও মারা গেলেন; মাত্র ২৬ বছর বয়সে।
বিধাতা যদি থাকেন, তিনি হয়তো স্যার ও তাঁর স্ত্রীকে প্রতিদান দেবেন। এখন কেবল এই আশাটাই করতে পারি।
লেখক : শিক্ষার্থী, যন্ত্রকৌশল বিভাগ, তৃতীয় বর্ষ, বুয়েট।