আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আজ শেষ হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা
আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আজ রোববার (২২ জানুয়ারি) শেষ হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। এবারের বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভিকে ছাড়াই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাঁকে নিয়ে বিতর্ক ওঠার পর মাওলানা সাদ এবারেও ইজতেমায় অংশ নিতে বাংলাদেশে আসেননি। তবে তাঁর তিন ছেলে ও জামাতা ইতোমধ্যে জামায়াত নিয়ে ইজতেমা ময়দানে এসেছেন।
এপর্বের ইজতেমার শেষদিনে আজ মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন। মোনাজাতের আগে তিনি হেদায়েতি বয়ানও করবেন। আজ সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত হবে। মোনাজাতে বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ার মানুষের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হবে বলে জানিয়েছে ইজতেমা কর্তৃপক্ষ।
দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিনে গতকাল শনিবার টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে লাখ-লাখ মুসল্লির উদ্দেশে চলে পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান। আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় লাখো মুসল্লি যোগ দিয়েছেন এবারের বিশ্ব ইজতেমায়। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে শিল্পনগরী টঙ্গী ইতোমধ্যেই ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। মহান আল্লাহতাআলার নৈকট্য লাভের ব্যাকুলতায় দ্বীনের দাওয়াতে মেহনত করার জন্য ইসলামের মর্মবাণী সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দলে দলে ছুটে আসছেন টঙ্গীর তুরাগ তীর ইজতেমা ময়দানে। টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমায় আগত লাখ লাখ মুসল্লির পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। শনিবারও টঙ্গী অভিমুখী বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে ছিল মানুষের ভিড়। শনিবার সকালেই টঙ্গী শহর এবং ইজতেমাস্থল ও এর আশপাশ এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।
দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে আজ মানুষের ঢল নেমেছে। ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। মূল প্যান্ডেলে স্থান না পেয়ে অনেক মুসুল্লি নিজ উদ্যোগেই প্যান্ডেলের বাইরে পলিথিন সিট ও কাপড়ের সামিয়ানা টানিয়ে তাতে অবস্থান নিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তার বন্দনা, আরজ-গুজার, শোকরানা আর ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল মানুষের কলরব। সৃষ্টিকর্তার দিদার লাভের জন্যে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পায়ে হেঁটে, র্যাব ও পুলিশ পাহারায় বাস ও ট্রেনে টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব এজতেমা ময়দানে সমবেত হয়েছেন। এবারের ইজতেমার শেষ দফায় মাওলানা সা’দ অনুসারী দেশের ৬৪টি জেলার মুসল্লিরা ৮৫ খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন।
দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমার প্রথমপর্ব শুরু হয় গত ১৩ জানুয়ারি। ওই পর্বে মাওলানা যোবায়েরর অনুসারী দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা অংশ নেন। ১৫ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথমপর্ব। প্রথম পর্ব সম্পন্ন হওয়ার পর চার দিন বিরতি দিয়ে ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব। আজ আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমা।
আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে মুসল্লিদের সুবিধার্থে শনিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে পুলিশ। আজ রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ বিধিনিষেধ বলবৎ থাকবে। এবারের বিশ্ব ইজতেমা নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রায় ১২ হাজার র্যাব ও পোশাকধারী পুলিশের পাশপাশি রয়েছে সাদা পোশাকে প্রায় ৩ হাজার গোয়েন্দা সদস্য। আকাশ ও নৌপথে রয়েছে র্যাবের সতর্ক নজরদারি।
এবারের ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সা’দ কান্ধলভী অনুসারী দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। দুদিন ধরে সার্বক্ষণিক ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত রয়েছেন মুসল্লিরা। প্রতিদিন ফজর থেকে এশা পর্যন্ত ঈমান, আমল, আখলাক ও দ্বীনের পথে মেহনতের ওপর বয়ান অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার বাদ ফজর ভারতের হযরত মাওলানা ইয়াকুব জিলানীর বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম।
আরও চার মুসল্লির মৃত্যু
টঙ্গীতে এবারের বিশ্ব ইজতেমায় আসা আরও চার মুসল্লি মারা গেছেন। শুক্রবার থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তারা মারা যান। তারা হলেন- ঢাকার কদমতলী থানার পূর্ব জুরাইন এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জব্বারের ছেলে আব্দুল হান্নান (৪৫), গাইবান্ধার শুক্কুর মন্ডলের ছেলে আব্দুল হামিদ মন্ডল (৫৫), রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবাজার এলাকার ব্যবসায়ী বোরহান উদ্দিন (৪৮) ও ঢাকার সাভারের বাসিন্দা আব্দুল আলীমের ছেলে মফিজুল ইসলাম (৫৪)।
ভিআইপিরা মোনাজাতে অংশ নেবেন
বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে মন্ত্রিপরিষদের একাধিক সদস্য, সংসদ সদস্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিভাগের কর্মকর্তারা অংশ নেবেন।
আজ যারা বয়ান করবেন
বিশ্ব ইজতেমার শেষদিনে ফজরের নামাজের পর বয়ান করবেন মাওলানা মুরসালিন। এরপর হেদায়তী বয়ান ও আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী। এসময় তার বয়ান বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা জিয়া বিন কাসিম।
মোনাজাতের দিন চলবে শাটল বাস ও বিশেষ ট্রেন
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোল্ল্যাহ নজরুল ইসলাম জানান, রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল আছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ইজতেমায় মুসল্লিদের আসা-যাওয়া নির্বিঘ্ন করতে শনিবার মধ্যরাত থেকে রোববার আখেরি মোনাজাতের দিন বিকেল পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে আব্দুল্লাহপুর এবং টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের মীরের বাজার হতে টঙ্গী স্টেশন রোড হয়ে কামারপাড়া ও সাভারের বাইপাইল থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের গাড়ি ছাড়া সকল প্রকার সাধারণ যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ঢাকা বাইপাস সড়কের ভোগড়ায়, শাখা রোড বোর্ডবাজার, মীরেরবাজার থেকে আসা প্রত্যেকটি সড়ক ক্রসিংগুলোতে বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে মুসল্লিদের যাতায়তের সুবিধার্থে আখেরি মোনাজাতের দিন রোববার ভোর হতে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড় এলাকা থেকে ইজতেমাস্থল পর্যন্ত মুসুল্লিদের সুবিধার্থে পুলিশের পক্ষ থেকে শাটল বাস (ইজতেমার স্টিকার লাগানো) চলাচল করবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ ট্রাফিক ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে। ইজতেমা উপলক্ষে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেনগুলো টঙ্গী রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে। রাজধানী ঢাকার আগারগাঁও থেকে উত্তরার দিয়াবাড়ি স্টেশন পর্যন্ত মেট্রোরেল বিশেষ সেবা দিবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।