রম্য
পরীক্ষার ফল ও দুর্যোগ-পূর্ববর্তী ব্যবস্থা
আসছে ১১ তারিখ এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে, আমাদের সবার জন্যই একটা আতঙ্কের দিন ছিল, আতঙ্কের দিন আছে, থাকবে। সেদিন আমাদের ওপর যে দুর্যোগ নেমে আসে, তা সামলাতে কিছু দুর্যোগ-পূর্ববর্তী ব্যবস্থা।
১. যদি ফেল করেন
রেজাল্ট নিয়ে বাসায় ফেরার সময়ই ঠিক করে ফেলুন, বাসায় কার প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে। আর যখন ঘরে প্রবেশ করবেন, তখন ঘরে কে কে থাকবে তার কথাও হিসাব করুন। যদি ঘরে বড় ভাই-বোন থাকে, তাহলে ভেবে নিন তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন আপনার। যদি এমন হয় তাঁদের সঙ্গে চকলেট-চিপস কিংবা মোবাইল নিয়ে ঝগড়া হয়, তাহলে ব্যাপারটা আপনার জন্য প্রতিকূল হবে। এ জন্য তাঁদের সঙ্গে সব সময় একটা বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত।
যা হোক, ঘরে খুবই সাধারণভাবে প্রবেশ করবেন, অন্যান্য দিনের মতো, যাতে করে কারো কোনো সন্দেহ না হয়। ভাই-বোনের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ভালো না হয়, তাহলে তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করুন, যাতে করে একটু পর আপনার ওপর ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাওয়ার সময় আপনি আপনার পক্ষে কাউকে পান। আর ঘরে যদি আপনার দাদা-দাদু থাকেন, তাহলে আপনার জন্য সুবিধা। তাঁরা অবশ্যই চেষ্টা করবেন আপনাকে বাঁচাতে। এর পর আসে বাবা-মা, ঘূর্ণিঝড়ের সূত্রপাত সাধারণত ওখান থেকেই হয়, ঘরে ফিরে একটু নম্র-ভদ্র থাকার চেষ্টা করুন। তাঁদের সব কথা মেনে চলুন, আবার বেশি ভদ্র হয়ে গেলে সমস্যা। জানেনই তো, অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ!
এমন করতে করতে যখন দেখবেন বাসার সবার সঙ্গে আপনি মোটামুটি ভালো একটা অবস্থায় চলে গেছেন কিংবা কোনো খোশগল্প চলছে, তখন বলে ফেলুন রেজাল্টের কথা। ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা একটু কম হবে বলে আশা করা যায়। ও আচ্ছা! সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, বাসায় যাওয়ার পরও একটু মোটা কাপড়চোপড় পরে নিন। শীতকাল-গ্রীষ্মকাল বিবেচনাধীন নয়। কারণ কথায় আছে, চাচা আগে আপন প্রাণ বাঁচা!
২. রেজাল্ট যখন মধ্যম মানের হবে
সাধারণত এমন মধ্যবিত্ত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাই বেশি হয়, তাদের ওপর একে থাকে খারাপ করার চাপ, আবার ওদিকে থাকে ভালো করার প্রত্যাশা। সব মিলিয়ে তাদের ওপর ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়। এ জন্য তারাই রেজাল্ট নিয়েই সবচেয়ে বেশি ভয়ে থাকে। আর আপনার পাশের ফ্ল্যাটেই যদি আপনার সঙ্গে পড়ুয়া কোনো ভালো স্টুডেন্ট থাকে, তাহলে তো আপনি শেষ! দিনে-রাতে, পড়তে-খেলতে, খেতে-উঠতে, আপনার সঙ্গে তার তুলনা হবে, এমনকি তার দুটো হাত-পা আপনারও দুটো হাত-পা থাকার পরও আপনার রেজাল্ট কেন তার চেয়ে খারাপ হলো, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। তাই আপনাকে এসব ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। পারলে মা-বাবার কানে রেজাল্টের আগে থেকেই এমন একটা ধারণা দিয়ে রাখুন যে অঙ্ক পরীক্ষার সময় আপনার অনেক পেটব্যথা ছিল, ইংলিশ পরীক্ষার সময় হঠাৎ জ্বর উঠে গিয়েছিল, বাংলা পরীক্ষার সময় ফার্মগেটের জ্যামের কারণে পরীক্ষার হলে ঢুকতে ১৫ মিনিট দেরি হয়ে গিয়েছিল—এ জন্য আপনার রেজাল্ট কিছুটা খারাপ হতে পারে।
আর পাশের বাসার ভালো স্টুডেন্টের ব্যাপারে বলতে পারেন, সে স্কুল অথবা কলেজের কোনো স্যারের বাসায় পড়েছিল, এ জন্য স্যার ওকে নম্বর বেশি দিয়েছেন। কিন্তু আপনি বেচারা আপনার সততার কারণে আটকা পড়ে গেলেন। এসব ব্যাপার মিথ্যা তো বটেই, তবে চাচা আগে আপন প্রাণ বাঁচা! মনে রাখবেন, রেজাল্টের পর আপনার সব অতীত কর্মকাণ্ডের জের ধরে আপনার ওপর আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা আরো বেশি হতে পারে। তাই অতীত কর্মকাণ্ডগুলোর পেছনে একটা বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে ফেলুন, যাতে তখন কিছু বলতে পারেন।
৩. রেজাল্ট যদি অনেক ভালো হয়
এ শ্রেণির মানুষ খুব কম, যাদের রেজাল্ট ভালো হয়। রেজাল্ট এমন হলে তো আপনার কোনো চিন্তা নেই, রেজাল্ট নিয়ে ফেরার সময় ঠিক করে ফেলুন, বাবা-মা কার কাছে কী গিফট চাইবেন। বাসায় যদি কোনো শত্রুভাবাপন্ন ভাই-বোন থাকে, তাহলে ঠিক করে ফেলুন গতকাল রাতে আপনাকে প্লে-স্টেশনে গেম না খেলতে দেওয়ার জন্য আজকে তার ওপর কীভাবে প্রতিশোধ নিতে চান আপনি। কারণ, আজকের দিনটা শুধুই আপনার। আপনি বাসায় কীভাবে নিজের এন্ট্রি দেবেন, তা-ও ভেবে রাখতে পারেন। রাজার মতো হেলেদুলে প্রবেশ করতে পারেন বাসায়। কিংবা বাসায় প্রবেশ করার সময় অনেকবার বেশ করে কলিংবেল চাপতে পারেন, কেউ বিরক্ত হলে রেজাল্টটা জানিয়ে দেবেন, খুশি হয়ে যাবে। কারণ, আজকের দিনটি আপনার, শুধুই আপনার। পাশের বাসায় আপনার ক্লাসের কোনো ছেলে বা মেয়ে থাকলে, যার রেজাল্ট আপনার চেয়ে খারাপ, ইচ্ছা করলে তার আম্মুর সঙ্গে দেখা করে দেখিয়ে আসতে পারেন আপনার রেজাল্ট। এখানে একটু ভয় আছে, সেই ক্লাসমেটের সঙ্গে আপনার দা-কুমড়া সম্পর্ক হয়ে যেতে পারে।
তার পর বাসায় প্রবেশ করতে পারেন বাংলা সিনেমার নায়কের মতো চিৎকার করতে করতে, ‘মা! আমি ফার্স্ট হয়েছি মা, আমি ফার্স্ট হয়েছি’ অথবা ‘মা, আমি এ প্লাস পেয়েছি মা, আমি এ প্লাস পেয়েছি।’