রম্য
সুলতানি রিভিউ
নায়কের সঙ্গে ধাক্কা লেগে নায়িকার প্রথম দেখা হয়, তা আমরা বহু বাংলা সিনেমায় দেখেছি। ‘সুলতান’-এও এর পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। যদিও ‘সুলতান’ কোনো বাংলা সিনেমা নয়, তবুও সালমানের সঙ্গে আনুশকার প্রথম দেখা হয় স্কুটির সঙ্গে ধাক্কা লাগার মাধ্যমেই। এর পর লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট হয়ে যায়। নায়ক নায়িকার পিছে পিছে ঘুরতে থাকে। বাট নায়িকা তাকে পাত্তা দেয় না। আর দেবেই বা কেন? নায়িকা যে আর দশটা সিনেমার নায়িকার মতো ঘরে বসে শাবানা-ববিতার মতো থালাবাসন মাজা, কাপড় কাচা আর পরের কাপড় সেলাই করা মহিলা না! সে একজন রেসলার। আর তাই নায়কের ইনডিরেক্ট প্রপোজের সঙ্গে সঙ্গেই তার গালে বায়োমেট্রিকের ছাপ... মানে কষে একটা থাপড় মেরে বসে। এতে করে নায়কের আত্মসম্মানবোধ জেগে ওঠে। প্রতিজ্ঞা করে, সেও একদিন রেসলার হয়ে অলিম্পিকের মেডেল এনে সবাইকে দেখিয়ে দেবে।
ব্যস, শুরু হয়ে গেল তার রেসলিং জীবন। একসময় সে স্টেট চ্যাম্পিয়ন হয়। নায়িকা নিজের ভুল বুঝতে পেরে নায়ককে স্যরি বলে রিস্ক না নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই বিয়ে করে ফেলে। বিয়ের পরে আর দশটা নায়িকার মতোই আগের পেশা ভুলে গিয়ে সে সংসারে মনোযোগী হয়। তাদের ঘরে সন্তান আসার সময় হয়। নায়ক তত দিনে রেসলিং ম্যাচ জিততে জিততে নিজেকে দেশসেরা বানিয়ে ফেলেছে। এবার তার অলিম্পিক উদ্ধারের পালা! এই কয়দিনে তার মাঝে একটা অহংকার ঢুকে পড়ে। যার ফলে সাংবাদিকদের সঙ্গে বেয়াদবি আর একজনকে লাইভ থাপড় মেরে বসে। ফলে মিডিয়াগুলো তার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। একদিকে নায়কের ঘরের প্রথম সন্তান আসার ডেট নিকটে আসে, অন্যদিকে তার অলিম্পিক বিজয়ের সময় চলে আসে। নায়িকা ওরফে তার ওয়াইফ তাকে বহু রিকোয়েস্ট করে সন্তান আগমনের সময় যেন সে তার পাশে থাকে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বউয়ের আকুতি-মিনতি উপেক্ষা করে সে অলিম্পিকে অংশ নিতে চলে যায়। ফিরে আসে বীরের বেশেই। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।
এসে দেখে, তার সন্তান দুনিয়ায় নাই। রক্তের অভাবে সে মারা গেছে। যেখানে ফেসবুকে পোস্ট করলে আজকাল শত শত ব্লাড ডোনার মিলে যায়, সেখানে তারা সমগ্র ভারতবর্ষ ঘুরেও ব্লাড জোগাড় করতে না পারার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নায়ক ওরফে সুলতান এতে ভীষণ কষ্ট পায়। আর ঠিক সে মুহূর্তেই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হতে নায়িকাও তাকে ছেড়ে চলে যায়। তবে একেবারে দুনিয়া ছেড়ে নয় কিন্তু। সে চিরদিনের জন্য তার বাপের বাড়িতে চলে যায়। নায়ক তখন সিদ্ধান্ত নেয়, জীবনে আর কোনোদিন রেসলিং না খেলার।
নায়ক এখন পুরোদমে চাকরিজীবী। অফিসে কাজ করে আর সবার কাছ থেকে ১০ টাকা করে চাঁদা তোলে তার গ্রামে একটি ব্লাড ব্যাংক খোলার জন্য, যাতে করে কেউ আর রক্তের অভাবে মারা না যায়। এ জন্য সে এক রাজনীতিবিদের পিছে ঘোরে। বাট রাজনীতিবিদ বলে কথা, সহজে কিছু করে দেওয়ার তো কথা না! তাই সে নায়ককে হয়ে যাবে হয়ে যাবে বলে আশারবাণী শোনায় আর ঘোরায়। এদিকে, ইন্টারন্যাশনাল রেসলিং চ্যাম্পিয়নের এক আয়োজক নায়কের সঙ্গে দেখা করে। তাকে টাকা দিয়ে কিনতে চায়, কিন্তু নায়কের কী আর টাকার লোভ আছে নাকি? তাই সে ভদ্রলোককে খালি হাতেই ফিরিয়ে দেয়। নায়কের বন্ধুর কাছে অতীত জীবনের কাহিনী শুনে ভদ্রলোক আবার নায়কের কাছে ফেরত আসে। নায়ককে ইমোশনাল করে ব্লাড ব্যাংক খোলার টাকা ম্যানেজ করে দেবে এমন এ-কথা ও-কথা বলে তার মন নরম করে চলে যায়। ফলে দুদিন বাদে নায়ক গাট্টি-বোঁচকাসমেত শহরে সেই ইন্টারন্যাশনাল রেসলিং চ্যাম্পিয়নের আয়োজকের সঙ্গে দেখা করতে রওনা দেয়।
প্রায় সাত বছর নায়ক রেসলিং থেকে বিদায় নিয়ে অফিসে বসে বসে কাজ করেছে। এ জন্য তার ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অন্যান্য আয়োজক আর স্পন্সর এটা মানতে নারাজ। নায়কের ভুঁড়ি দেখে তারা হাসাহাসি করে এবং তাকে আনফিট বলে ঘোষণা দেয়। নায়ক এতে কষ্ট পায়। আবার আগের মতো ফিট হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। সবাই বলে, এটা বেসম্ভব! কিন্তু তারা তো আর জানে না, সিনেমার নায়কদের ডিকশনারিতে অসম্ভব বলে কোনো শব্দ নেই। যার ফলে সে এক সপ্তাহের মধ্যে কিছুটা ফিট হয়ে যায়। এর পর চলতে থাকে তার ইন্টারন্যাশনাল রেসলিংয়ে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি। মোটামুটি মাসখানেকের মধ্যে সে পুরোপুরি ফিট হয়ে আবার রেসলিং দুনিয়ায় প্রবেশ করে। তার পর টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মতো একেকটা ম্যাচ জিততে জিততে সে ফাইনালে পৌঁছে যায়। আর প্রতিটি ম্যাচেই দেশের মানুষের ভালোবাসা কুড়াতে কুড়াতে সে আগের চেয়েও বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সেমিফাইনালে খেলতে গিয়ে নায়কের শরীরের একটা হাড় ভেঙে গিয়েছিল। তাই ডাক্তার থেকে শুরু করে খেলার আয়োজক পর্যন্ত তাকে আর না খেলার পরামর্শ দেয়। কিন্তু দেশের মানুষের ভালোবাসার খাতিরে সে তাদের পরামর্শ উপেক্ষা করে ফাইনালে মাঠে নামবে বলেই সিদ্ধান্ত নেয়। এদিকে, এত দিন দূরে থাকলেও নায়কের সাফল্য আর হাসপাতালে ভর্তির খবর শুনে নায়িকা অতীতের সবকিছু ভুলে গিয়ে আবারও তার কাছে চলে আসে। নায়কের কাছ থেকে ওয়াদা নেয়, যেন ফাইনাল তো জিতবেই, সঙ্গে যেন জীবিত ফিরে আসে।
এখানে দর্শকের মনে সিনেমার শেষ অংশে নায়ক মরে যাবে বলে একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল। এখন দেখার পালা দর্শকের ধারণা কতটুকু সত্য হয়। যাই হোক, নায়ক ‘হ্যাঁ’ সূচক মাথা নাড়ে। এর পর ফাইনালে খেলতে যায়। ফাইনালটা আগেরবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিস্টেম না হয়ে অনেকটা টেস্ট ফরম্যাটের হয়। নায়ক অনেক মার খায়। শেষমেশ আর সহ্য করতে না পেরে সে একেবারে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সবাই ভাবল, নায়ক ম্যাচ তো হারছেই, সঙ্গে বুঝি মরেও গেছে। কিন্তু না, মানুষের দোয়া আর ভালোবাসায় সে ক্ষণিকের জন্য ফ্ল্যাশব্যাকে যায় এবং সুপার পাওয়ার নিয়ে ফিরে আসে! এর পর ম্যাচ শেষ, নায়ক বিজয়ী ঘোষিত হয়। নায়ক সবার সামনেই নায়িকাকে জড়িয়ে ধরে কোলে তুলে নেয়। পরের দৃশ্যেই তাদের গ্রামে ব্লাড ব্যাংক উদ্বোধনের ফিতা কাটতে দেখা যায়। সবাই হাততালি দেয়। অতঃপর আর কী, তাহারা আবারও সুখে-শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলেন!