আশা জাগিয়েও পারল না বাংলাদেশ
ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়ের শুরুটাও হয় দারুণ। প্রথম ওভারেই নাসুম আহমেদের ফুল লেংথ বল বেরিয়ে এসে মিড অনের ওপর দিয়ে খেলতে গিয়ে কাটা পড়েন ব্র্যান্ডন কিং। এরপর সাকিব-মেহেদী মিলে চেপে ধরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। কিন্তু শুরুর এই ছন্দ শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। নিকোলাস পুরান ও কাইল মায়ার্সের ব্যাটে ঠিকই ম্যাচ বের করে জিতে নিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। নিকোলাস পুরানের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের দেওয়া লক্ষ্য ১০ বল হাতে রেখেই টপকে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ডোমিনিকাতে এর আগে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম ম্যাচ ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। তাই দুই ম্যাচ জিতে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের করে নিল নিকোলাস পুরানের দল।
১৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন নাসুম আহমেদ। আগের ম্যাচে বাংলাদেশকে ভোগানো ব্র্যান্ড কিংকে শুরুতেই বিদায় করেন তিনি।
এরপর চতুর্থ ওভারে এসে শ্যামার ব্রুকসকে বিদায় করেন মেহেদী হাসান। তরুণ এই স্পিনারকে সুইপ করে স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন ব্রুকস। ১২ বলে দুই চারে ১২ রান করেন ব্রুকস। এরপর বোলিংয়ে এসে ক্যারিবীয়দের তৃতীয় শিকার নেন সাকিব আল হাসান। ওডিন স্মিথকে দ্রুত থামান সাকিব।
দলীয় ৪৩ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বেশ চাপেই পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু ক্যারিবীয়দের চাপের সুযোগ ভালোভাবে নিতে পারল না বাংলাদেশ। তিন উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে ঠিকই দলকে পথ দেখান ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক নিকোলাস পুরান ও কাইল মায়ার্স। এই দুজনের ব্যাটেই জয়ের নাগাল পেয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্যাট হাতে ৩৮ বলে ৫৫ রান করেন মায়ার্স। আর পুরানের ব্যাট থেকে আসে ৭৪ রান।
গায়ানাতে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৬৩ রান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫০ রান করেছেন আফিফ হোসেন।
পুরো সফরে টপ অর্ডার নিয়ে ধুঁকছিল বাংলাদেশ। গায়ানাতে আজকের ম্যাচে সেই টপ অর্ডারই সাবধানী শুরুতে ভালো করার আভাস দেন। প্রথম চার ওভার থিতু হয়ে যান দুই ওপেনার এনামুল হক বিজয় ও লিটন দাস। রানের গতি মন্থর হলেও আশা দেখান দুজন।
কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সেই আশা মিলিয়ে যায়। পঞ্চম ওভারেই ওডিন স্মিথের বলে উইকেট দিয়ে আসেন এনামুল। ওভারের তৃতীয় বল তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে সহজ ক্যাচ যায় থার্ড ম্যানে। সেখানে থাকা আকিল হোসেন ক্যাচ নিতে কোনো ভুল করেননি। ভাঙে ৩৫ রানের শুরুর জুটি। ১১ বলে এক চারে এনামুল করেন ১০ রান।
এনামুলের পর উইকেটে গিয়েই স্মিথের শর্ট বলে বাউন্ডারি মেরে শুরু করেন সাকিব আল হাসান। ছন্দ ধরে রাখতে পারলেন না সাকিবও। পরের ওভারেই ৫ রান করে বিদায় নেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
এরপর আফিফ হোসেনের সঙ্গে জুটি বাঁধেন লিটন। বেশ সময় তাঁদের জুটি স্থায়ী হলেও রানের গতি ছিল মন্থর। তবুও এই জুটিতে ভালোই প্রতিরোধ গড়ে বাংলাদেশ। দলীয় ১৩তম ওভারে এই জুটি ভাঙে বাংলাদেশের। হেইডেন ওয়ালশ জুনিয়রের ডেলিভারিতে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে তার উপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেন লিটন। কিন্তু টাইমিং ঠিক রাখতে পারেনি। ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ চলে যায় পয়েন্টের ফিল্ডারের হাতে। ভাঙে ৪৪ বল স্থায়ী ৫৭ রানের জুটি। ফেরার আগে ৪৯ রান করেন লিটন। ৪১ বলে তাঁর ইনিংস সাজানো ছিল দুই ছক্কা ও তিন বাউন্ডারিতে।
লিটন ফিরলে বাকি সময় বাংলাদেশকে টানেন আফিফ হোসেন। ৩৮ বলে ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। তাঁর হাফসেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ওভারে ১৬৩ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। তাঁর সঙ্গে ২০ বলে ২২ রান করেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। নুরুল হাসান সোহান করেন ২ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৬৩/৫ (লিটন ৪৯, এনামুল ১০, সাকিব ৫, আফিফ ৫০, মাহমুদউল্লাহ ২২, সোহান ২*, মোসাদ্দেক ১০*; মেয়ার্স ২-০-১৪-০, ম্যাককয় ৪-০-২৯-০, আকিল ৪-০-৩১-০, স্মিথ ৩-০-৩৪-১, শেফার্ড ২-০-১৯-১, ড্রেকস ১-০-৬-০, ওয়ালশ জুনিয়র ৪-০-২৫-২)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৮.২ ওভারে ১৬৯/৫ (কিং ৭, মেয়ার্স ৫৫, ব্রুকস ১২, স্মিথ ২, পুরান ৭৪*, পাওয়েল ৫, আকিল ৩*; নাসুম ৪-০-৪৪-২, মেহেদি ৪-০-২১-১, সাকিব ২-০-১০-১, মোসাদ্দেক ৪-০-৩৪-০, মুস্তাফিজ ২-০-২৭-০, শরিফুল ১-০-১৩-০, আফিফ ১-০-১০-১, মাহমুদউল্লাহ ০.২-০-৭-০)।
ফল : ৫ উইকেটে জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সিরিজ : ২-০ ব্যবধানে জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ।