শুরুতেই জমজমাট লড়াইয়ের আভাস
নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপ। সাম্প্রতিক সময়ে পারফরম্যান্সও ভালো। ফেভারিটের চাদর আলতোভাবে গায়ে জড়িয়ে তাই বিশ্বকাপ শুরু করতে যাচ্ছে নিউজিল্যান্ড। ক্রাইস্টচার্চে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সহ-আয়োজকদের প্রতিপক্ষ এবারের আসরের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দল শ্রীলঙ্কা। গত তিনটি বিশ্বকাপে টানা পাঁচ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর অনুপ্রেরণা নিয়ে মাঠে নামছেন সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনেরা। জমজমাট লড়াই দিয়ে বিশ্বকাপের ব্যাট-বলের লড়াই শুরুর প্রত্যাশা করতেই পারেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
শনিবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা।
গত মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাত ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিশ্বকাপে পা রেখেছে নিউজিল্যান্ড। প্রস্তুতি ম্যাচও প্রেরণা জোগাচ্ছে কিউইদের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে গেলেও দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৩৪ রানে উড়িয়ে দিয়েছে স্যার রিচার্ড হ্যাডলির দেশ।
ব্রেন্ডন ম্যাককালাম দল নিয়ে শুধু সন্তুষ্টই নন, বিশ্বকাপে চমক দেখানোর স্বপ্নও তাঁর চোখে। চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে আসা নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক এবারের দলটিকেই সবচেয়ে এগিয়ে রাখছেন, ‘আমি যে কয়টি বিশ্বকাপ খেলেছি তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে ভালো দল। তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার মিশেলে আমাদের দলটা চমৎকার। আমরা নিজেরাই ভালো কিছুর সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। যদিও ভালো মতোই জানি কাল নতুন একটা ম্যাচ খেলতে যাচ্ছি আমরা।’
ম্যাককালাম বাড়িয়ে বলেননি। এবারের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের দলটি সত্যিই বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। ভালো ফর্মে আছেন দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মার্টিন গাপটিল ও অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। নিজেদের দিনে রস টেলর, কেইন উইলিয়ামসন, লুক রনকি, কোরি অ্যান্ডারসন হুমকি হয়ে উঠতে পারেন যেকোনো বোলারের জন্য। টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, কাইল মিলস, অ্যাডাম মিল্ন, ড্যানিয়েল ভেট্টরিদের নিয়ে গড়া বোলিং আক্রমণও সমীহ জাগানো। সাম্প্রতিক সময়ে সবার পারফরম্যান্সও ভালো।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কাকে দুশ্চিন্তায় রাখছেই। নিউজিল্যান্ডের কাছে ৪-২ ব্যবধানে সিরিজ হারার পর (একটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত) বিশ্বকাপের দুই প্রস্তুতি ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে গেছে ১৯৯৬ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নরা। সময়টা যে ভালো যাচ্ছে না তা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই লঙ্কান অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের, ‘সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডে আমরা জয়ের চেয়ে বেশি হেরেছি। মনে হয় লোয়ার মিডল অর্ডার আমাদের ভালো ফল এনে দিতে পারেনি। প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে ভালো করতে পারিনি। কিন্তু আমরা এখন সেসব নিয়ে চিন্তিত নই। কারণ আমরা সবাইকে মাঠে নেমে খেলার সুযোগ করে দিয়েছি আর বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেছি।‘
সব ব্যর্থতা পেছেন ফেলে বিশ্বকাপে ভালো করার প্রত্যয় জানিয়ে ম্যাথিউসের মন্তব্য, ‘আমাদের একটা লড়াকু মনোভাব নিয়ে শুরু করতে হবে। কয়েকটা ম্যাচ হেরে গেলে মনোবল দুর্বল হয়ে যায়। তাই আমাদের লড়াই করার মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামতে হবে। বিশ্বকাপ আমাদের জন্য এক আনকোরা সিরিজ। তাই আগের সবকিছু ভুলে গিয়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই আমরা মাঠে নামব।’
তিন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে ও তিলকারত্নে দিলশানের কাঁধে নিশ্চিতভাবেই থাকবে প্রত্যাশার চাপ। তবে প্রথম ম্যাচে ফাস্ট বোলার লাসিথ মালিঙ্গার ওপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে মনে করেন ম্যাথিউস, ‘আমাদের অন্য বোলারদেরও আপনি উড়িয়ে দিতে পারবেন না। অনেক অভিজ্ঞ বোলার আছে আমাদের দলে। তবে নিঃসন্দেহে লাসিথ ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন।’
ওয়ানডের সবচেয়ে বড় আসরে দুই দলের মুখোমুখি লড়াই শ্রীলঙ্কাকে অনুপ্রাণিত করবেই। নয়বারের দেখায় ছয়বারই জিতেছে তারা। এরমধ্যে সর্বশেষ পাঁচটি লড়াইয়েই বিজয়ী লঙ্কানরা ২০০৭ ও ২০১১ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল।
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে দারুণ কিছু মাইলফলক হাতছানি দিচ্ছে শ্রীলঙ্কার দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান জয়াবর্ধনে ও সাঙ্গাকারাকে। আর মাত্র ১২ রান করলেই ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় রিকি পন্টিংকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছে যাবেন সাঙ্গাকারা। সামনে থাকবেন শুধু শচিন টেন্ডুলকার। নয় রান করলে সনাথ জয়সুরিয়া ও অরবিন্দ ডি সিলভার পর বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার পক্ষে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করবেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। এই মাইলফলকে পৌঁছাতে জয়াবর্ধনের প্রযোজন মোটে ২৫ রান।
মাইলফলকের হাতছানি আছে নিউজিল্যান্ডের রস টেলরের সামনেও। ৮৭ রান করলে স্টিভেন ফ্লেমিং, নাথান অ্যাস্টল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের পর চতুর্থ কিউই ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করবেন তিনি।