শুরু হচ্ছে ক্রিকেট মহোৎসব
বছর চারেক আগের কথা। ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ, মৃত্যু হলো ১৮৫ জনের, শহরজুড়ে হাহাকার-আর্তনাদ। মৃত্যুর মিছিল আর ধ্বংসস্তূপকে পেছনে ফেলে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আজ ক্রিকেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয়, সবচেয়ে আরাধ্য প্রতিযোগিতার ’উন্মোচক’। ক্রাইস্টচার্চে শনিবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ১৪টি দলের ৪৯টি ম্যাচ, ব্যাপ্তি প্রায় দেড় মাস-ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এর চেয়ে বড় আকর্ষণ আর কী হতে পারে!
শুরুতেই তীব্র লড়াইয়ের আমেজ। প্রথম দিন নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা ছাড়াও মেলবোর্নে মুখোমুখি হবে ক্রিকেটের দুই ‘চিরশত্রু’ অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। ম্যাচের ভেন্যুর সঙ্গে ইতিহাসও জড়িয়ে। ১৯৭১ সালের ৫ জানুয়ারি মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড লড়াই দিয়ে ওয়ানডের গৌরবোজ্জ্বল অগ্রযাত্রার সূচনা।
বিশ্বকাপের দ্বিতীয় দিন তো রীতিমতো যুদ্ধের আবহ। ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ শুধু একটা খেলা নয়, আনন্দ-বেদনা-উত্তেজনা-রোমাঞ্চ-নাটকীয়তা মিলিয়ে যেন এক ‘ক্লাসিক’। এমনি-এমনি তো অ্যাডিলেডের ম্যাচটির টিকিট ছাড়ার ২০ মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে যায়নি! টুর্নামেন্টের প্রধান নির্বাহী জন হার্নডেনের ঘোষণা, ক্রিকেট-ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি টিভি-দর্শক হতে যাচ্ছে এই ম্যাচে।
বাংলাদেশ মাঠে নামবে একটু পরে, ১৮ ফেব্রুয়ারি। ক্যানবেরায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে লড়াই শুধু নিজেদের খুঁজে পাওয়া নয়, লাল-সবুজ পতাকা ধারকদের প্রতিশোধের মিশনও। গত এশিয়া কাপে আফগানদের কাছে লজ্জাজনক হার আজও যেন তাড়া করে ফেরে সাকিব-মুশফিকদের। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পা রেখে টানা চার হারে আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরা মাশরাফির দলের সামনে তাই শুরুতেই কঠিন চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশ দলের দুর্ভাগ্য, অপেক্ষাকৃত কঠিন গ্রুপে পড়েছে তারা। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড নিজেদের মাটিতে সব সময়ই অপ্রতিরোধ্য। শ্রীলঙ্কা দলে সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের সমাবেশ। ইংল্যান্ড দলও শক্তিশালী। আফগানিস্তান ছাড়া ‘এ’ গ্রুপের অন্য দল স্কটল্যান্ডকে মনে করা হচ্ছিল সবচেয়ে দুর্বল। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশাল জয় আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে জিততে-জিততে হার স্কটিশদের নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়। বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের সুখস্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকলেও স্কটল্যান্ডকে নিয়ে ভাবতেই হচ্ছে বাংলাদেশকে।
অন্য গ্রুপে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার হয়তো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে সমস্যা হবে না। চতুর্থ স্থানের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের লড়াই হতে পারে জিম্বাবুয়ে আর আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে। তবে এর আগে শুধু ১৯৯৬ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাওয়া সংযুক্ত আরব আমিরাত যে অঘটনের জন্ম দেবে না, তা-ই বা কে বলতে পারে!
এবার কোটি টাকা দামের প্রশ্ন। একাদশ বিশ্বকাপের শিরোপা উঠবে কার হাতে? বেটিং সংস্থাগুলোর দৌড়ে আপাতত সবচেয়ে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। যদিও ক্রিকেট বিশ্বকাপে আয়োজক দেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজির মাত্র একবারই-২০১১ সালে ভারতের।
বিশ্বকাপে সাধারণত একটি বা দুটি দল ফেভারিটের মর্যাদা পেলেও এবার বিশেষ কোনো দলকে সেই বিভাগে ফেলা একটু মুশকিল। এমনকি শেন ওয়ার্নও কেমন যেন দ্বিধান্বিত। সর্বকালের সেরা লেগস্পিনার হিসেবে স্বীকৃত অস্ট্রেলীয়-কিংবদন্তির কণ্ঠে দ্বিধাটা ধরাও পড়েছে, ‘অস্ট্রেলিয়া অনেকবার ফেভারিট হিসেবে বিশ্বকাপ শুরু করেছে। এবার অবশ্য বেশ কয়েকটি দলকে শিরোপা লড়াইয়ে এগিয়ে রাখতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় হুমকি এবারের টুর্নামেন্টে অনেকগুলো ভালো দল আছে।’
সত্যিই তাই। এবার একটি বা দুটি দলকে ‘স্পটলাইটে’র নিচে রাখা কঠিনই হবে ক্রিকেট-অনুসারীদের জন্য। সেই হিসাব না করে ক্রিকেটে মেতে ওঠাই বোধহয় বুদ্ধিমানের কাজ।