বিশ্বকাপে অ্যাশেজের আবহ
১৯৭১ সালের ৫ জানুয়ারি মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে শুরু হয়েছিল ক্রিকেটের এক নতুন অধ্যায়। প্রথমবারের মতো একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমেছিল ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। সেই ম্যাচের হাত ধরেই জন্ম আজকের জনপ্রিয় ৫০ ওভারের ক্রিকেটের। ৪৪ বছরের পরিক্রমায় ১০টি বিশ্বকাপ সাফল্যের সঙ্গে শেষ করে একাদশ বিশ্বকাপে পা রাখতে যাচ্ছে ওয়ানডে। একাদশ আসরের শুরুতে মেলবোর্নের সেই বিখ্যাত মাঠে শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ক্রিকেটের দুই ‘আদি শত্রু’ অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। ওয়ানডে বিশ্বকাপের শুরুতেই যেন ঐতিহ্যবাহী অ্যাশেজের আবহ।
ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা বা ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড দ্বৈরথের উত্তেজনা। বিশেষ করে দেশ দুটির ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে। ওয়ানডের মতো ক্রিকেট-ইতিহাসের প্রথম টেস্টেরও ভেন্যু মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড শনিবার কানায়-কানায় পূর্ণ থাকারই কথা।
তবে ক্রিকেটপ্রেমীদের উত্তেজনায় ভরা জমজমাট ম্যাচ দেখার প্রত্যাশা না-ও মিটতে পারে। একে তো অস্ট্রেলিয়া ঘরের মাঠে সব সময় দুর্ধর্ষ দল। তার ওপরে ইদানীং তাদের পারফরম্যান্সও দুর্দান্ত। সর্বশেষ ১২টি ম্যাচের ১১টিতেই জিতেছে চারবারের বিশ্বকাপজয়ীরা। গত নভেম্বরে এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়েছে। ভারত ও ইংল্যান্ডের সঙ্গে লড়াই করে ত্রিদেশীয় সিরিজে অপরাজিত চ্যাম্পিয়নও হয়েছে।
ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে শীর্ষে থাকা অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন-আপ দারুণ শক্তিশালী। এমনকি ৯-১০ নম্বরে ব্যাট করার সুযোগ পাওয়া মিচেল স্টার্কেরও টেস্টে ৯৯ রানের আক্ষেপজাগানো ইনিংস আছে। ডেভিড ওয়ার্নার, শেন ওয়াটসন, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, স্টিভেন স্মিথ, জর্জ বেইলিরা ব্যাট হাতে ছন্দে আছেন। দুশ্চিন্তা শুধু অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের ফিটনেস নিয়ে। আরব আমিরাতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ৬৪ রানের ইনিংস খেলে ক্লার্ক অবশ্য ইনজুরি কাটিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
মিচেল জনসন, প্যাট কামিন্স, জশ হেজেলউড, স্টার্কদের নিয়ে গড়া অস্ট্রেলীয়দের বোলিং আক্রমণও দুর্দান্ত। তবে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক বেইলি কোনো রকম আত্মপ্রসাদে ভুগতে রাজি নন। ইংল্যান্ডকে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ মেনে সতীর্থদের প্রতি তাঁর সতর্কবার্তা, ‘এটা বলতে পারলে ভালো লাগত যে সব পরিসংখ্যান কাজে আসবে। কিন্তু আমার মনে হয় না তেমনটা হবে। ইংল্যান্ড দলে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, তারা খুব বিপজ্জনক দল।’
ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের ইদানীং কোনো সাফল্য নেই। প্রায় বছর খানেক কোনো ওয়ানডে সিরিজ জিততে পারেনি। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে সর্বশেষ ১৫টি ম্যাচের ১৩টিতেই হেরেছে তারা। ক্রিকেটের সেরা মঞ্চেও তেমন কোনো সাফল্য নেই ইংল্যান্ডের। ১৯৯২ বিশ্বকাপে রানার্সআপ হওয়ার পর কখনো সেমিফাইনালেও উঠতে পারেনি তারা। এবারও মরগান-অ্যান্ডারসনদের নিয়ে তেমন মাতামাতি নেই।
ব্যাট-বলের লড়াই শুরুর আগেই ভেঙে যেতে পারে একটি রেকর্ড। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সবচেয়ে বেশি দর্শকের রেকর্ড গড়তে পারে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের ম্যাচটি। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে অ্যাশেজের ‘বক্সিং ডে’ টেস্টের প্রথম দিন দর্শক-সংখ্যা ছিল ৯১,১১২। এখনও পর্যন্ত মেলবোর্নে সেটাই সবচেয়ে বেশি দর্শকসমাগম।