হার দিয়ে শুরু বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজ
মেহেদী হাসান মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহর ফিফটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শক্ত চ্যালেঞ্জ পুঁজি জানিয়েছিল বাংলাদেশ। জিততে হলে ক্যারিবীয়দের পাড়ি দিতে হতো ২৯৪ রান! গড়তে হতো সেন্ট কিটসে সর্বোচ্চ রান পাড়ি দেবার রেকর্ড। সেই রেকর্ডটা দারুণভাবেই করে ফেলল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শাই হোপের দৃঢ়তা আর রাদারফোর্ডের সেঞ্চুরিতে রেকর্ড গড়েই বাংলাদেশকে হারাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল। সেই সঙ্গে এই ফরম্যাটে টানা ১১ জয়ের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হারল বাংলাদেশ।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে ক্যারিবীয়রা। অন্যদিকে টেস্টে দারুণভাবে কামব্যাক করা বাংলাদেশ নিজেদের প্রিয় ফরম্যাটে এসে হেরে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে।
সেন্ট কিটসে এদিন আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৯৪ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৪ রান করেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।
জবাব দিতে নেমে ১৪ বল হাতে রেখেই ২৯৫ রান করে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলের জয়ের ম্যাচে ১১৩ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে নায়ক রাদারফোর্ড।
বাংলাদেশের দেওয়া রান তাড়া করতে নেমে সাবধানী শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে বেশি সময় টেকেনি তাদের ওপেনিং জুটি। ক্যারিবীয়দের ধাক্কা দিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দিলেন এই তরুণ পেসার তানজিম সাকিব।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দলীয় ২৭ রানে ব্রেন্ডনকে এলবির ফাঁদে ফেলেছেন সাকিব। ফেরার আগে ১৭ বলে ৯ রান করেন ক্যারিবিয়ান ওপেনার। সাকিবের আঘাতের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে দ্বিতীয় ধাক্কা দেন নাহিদ রানা। তিনি ফিরিয়ে দেন লুইসকে। ১৬ রান করা লুইসও পড়েন এলবির ফাঁদে। জোড়া ধাক্কা খেয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে স্বাগতিকরা।
তার মধ্যেই তৃতীয় আঘাত আনেন রিশাদ হোসেন। বাংলাদেশি লেগ স্পিনারের শর্ট বল পুল করে ওড়াতে গিয়ে ধরা পড়েন কেসি কার্টি। তার টাইমিং ঠিকঠাক না হওয়াতে ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় মিডউইকেটে। সেখানে থাকা মিরাজ সুযোগ হাতছাড়া করেননি। সহজ ক্যাচ নিয়ে কেসিকে দেখিয়ে দেন সাজঘরের পথ। ফলে ভাঙে ৮২ বল স্থায়ী ৬৭ রানের জুটি আর কেসি ফেরেন ২১ রান করে।
কেসি ফেরার পর রাদারফোর্ডের সঙ্গে আরেকটি দারুণ জুটি উপহার দেন শাই হোপ। এই জুটিতেই মূলত সত্যিকারের হোপের দেখা পেয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মাঝে ৮৬ রান করে হোপ ফিরলেও বাকি পথ অনায়সে বাকিদের নিয়ে পাড়ি দেন রাদারফোর্ড। সেঞ্চুরি করে দলকে জয়ের সীমানায় পৌঁছে দেন রাদারফোর্ড। শেষ দিকে নেমে ৪১ রানের কার্যকারী ইনিংস খেলেন জাস্টিন গ্রেভস।
এর আগে সেন্ট কিটসে এদিন ম্যাচের শুরুতে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। আগে ব্যাটিংয়ে সাবধানী শুরুর আভাস দেন সৌম্য সরকার ও তানজিদ হাসান। তবে থিতু হয়ে জমেনি এই জুটি। পঞ্চম ওভারেই সাজঘরে ফিরে হতাশ করেন সৌম্য। আলজারি জোসেফের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে কিপার শাই হোপের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফেলেন। ১৮ বলে ১৯ রান করে বিদায় নেন তিনি, ৩৪ রানে ভাঙে জুটি।
সৌম্যর বিদায়ের পর ওয়ানডাউনে নেমে হতাশ করেন লিটন দাস(২)। দলীয় ৪৬ রানে রোমারিও শেফার্ডের বলে কাট করতে গিয়ে তিনিও ধরা পড়েন হোপের হাতে। টানা দুই উইকেট হারানোর পর তানজিদ তামিমের সঙ্গে জুটি বাধেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
এই জুটিতে আশার আলো দেখে বাংলাদেশ। দলীয় শতরান পার হওয়ার পর এই জুটি ভাঙেন আলজারি জোসেফ। দলীয় ১২৫ রানে জোসেফের বলে শর্ট থার্ডম্যানে রোস্টন চেজের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তানজিদ। ফেরার আগে তৃতীয় ওয়ানডে ফিফটিতে ৬০ বলে ৬০ রান নিয়ে বিদায় নেন তানজিদ। ৭৯ রানে ভাঙে জুটি।
এরপর মিরাজকে সঙ্গ দিতে মাঠে নামেন আফিফ। নতুন জুটি গড়ার পথে ৭১ বলে ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ফিফটি তুলে আফিফকে নিয়ে ছুটছিলেন তিনি। কিন্তু জমে ওঠেনি এই জুটিও। দলীয় ১৭৯ রানে আফিফকে বিদায় করে এই জুটি ভাঙেন শেফার্ড। ২৯ বলে ২৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন আফিফ।
আফিফের বিদায়ের কিছুক্ষণ ভাঙে মিরাজের প্রতিরোধও। রাদারফোর্ডের বল মোকাবিলায় এক্সট্রা কাভারে সিলসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ছয় বাউন্ডারি আর এক ছক্কায় ১০১ বলে ৭৪ রানে ফেরেন মিরাজ।
অধিনায়কের বিদায়ের পর বাকি পথ টানেন মাহমুদউল্লাহ ও জাকের আলি। সপ্তম ওভারেই এই জুটি দুজন মিলে বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন প্রায় তিনশ রানের কাছাকাছি। শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে ফিফটি তুলে নেওয়া মাহমুদউল্লাহ করেন ৪৪ বলে ৫০রান। তার সঙ্গে থাকা জাকের খেলেন ৪০ বলে ৪৮ রানের ইনিংস।
বল হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সমান দুটি করে উইকেট নেন আলজারি জোসেফ ও রোমারিও শেফার্ড। একটি উইকেট নেন সিলস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৯৪/৬ (তানজিদ ৬০, সৌম্য ১৯, লিটন ২, মিরাজ ৭৪, আফিফ ২৮, মাহমুদউল্লাহ ৫০*, জাকের ৪৮, রিশাদ ০*; জোসেফ ১০-১-৬৭-২, সিলস ১০-০-৬৩-১, শেফার্ড ১০-১-৫১-৩, গ্রেভস ৭-০-৫০-০, চেইস ৩-০-১৬-০, মোটি ১০-০-৪২-০)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৭.৪ ওভারে ২৯৫/৫ (কিং ৯, লুইস ১৬, কার্টি ২১, হোপ ৮৬, রাদারফোর্ড ১১৩, গ্রেভস ৪১*, চেইস ২*; তাসকিন ৯-১-৫৩-০, তানজিম ১০-১-৫৫-১, নাহিদ ৮.৪-০-৫০-১, রিশাদ ৯-০-৪৯-১, মিরাজ ৯-০-৬২-১, সৌম্য ২-০-২৪-১)।
ফল : ৫ উইকেটে হারল বাংলাদেশ।