প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা পরিশ্রমী : পলক
বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকায় চাকরি মেলার আয়োজন করে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। ২০১৫ সাল থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) উদ্যোগে এই মেলা আয়োজন করা হয়। সহযোগিতায় আছে সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজঅ্যাবিলিটি (সিএসআইডি) এবং এনজিও বিষয়ক ব্যুরো।
আজ শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকার আগারগাঁওয়ে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর অফিস ভবনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে চাকরি মেলার শুভ উদ্বোধন করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক (গ্রেড-১) মো. সাইদুর রহমান এবং সিএসআইডির নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম। স্বাগত বক্তব্য দেন বিসিসির প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মো. গোলাম সারওয়ার। এতে সভাপতিত্ব করেন বিসিসির নির্বাহী পরিচালক (গ্রেড-১) রণজিৎ কুমার।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা পরিশ্রমী। সুস্থ স্বাভাবিক তরুণ-তরুণীদের চেয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বেশি মনোযোগ দিয়ে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে সেবা প্রদান করছে। প্রতিবন্ধীরা আমাদের ভাই-বোন, তাদেরকে সুযোগ দিতে হবে। প্রতিবন্ধীরা তাদের শ্রম, মেধা ও দায়িত্বশীলতা দিয়ে অন্যান্যদের চেয়ে বেশি এগিয়ে থাকবে।
প্রতিবন্ধীদের জন্য উদ্যোক্তা মেলার আয়োজন করা হবে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য শুধু চাকরির মেলা নয়, প্রতিবন্ধীরা উদ্যোক্তা হয়ে আরও হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। ঘরে বসেই যেন প্রতিবন্ধীরা দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ নিতে পারেন সেজন্য ‘এম্পোরিয়া (emporia.bcc.gov.bd)’ পোর্টাল ব্যবহারে আহ্বান জানাই।
একই সময়ে তিনি এনজিওগুলোতেও যেন প্রতিবন্ধীদের চাকরি দেওয়া হয় সেজন্য এনজিও ব্যুরো মহাপরিচালককে অনুরোধ জানান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, কোন মানুষই ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিবন্ধী হয় না এবং এটা প্রকৃতি প্রদত্ত।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক (গ্রেড-১) মো. সাইদুর রহমান সবাইকে নিয়ে একসাথে কাজ করার পাশাপাশি আমাদের সমাজকে আরও সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আরও জানান, অক্ষম বা আংশিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের তুলনায় সক্ষম ব্যক্তিদের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই তিনি সক্ষম ব্যক্তিদেরকে অক্ষম ব্যক্তিদের পাশে থাকার বিশেষ অনুরোধ করেন।
সিএসআইডির নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম তার বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বিভিন্ন প্রশংসনীয় উদ্যোগের বিষয় তুলে ধরে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানান। তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিজেদেরকে ধৈর্যসহ কর্মক্ষেত্রে লেগে থাকতে অনুরোধ করেন। সবশেষে, তিনি বাংলাদেশ সরকারের এনডিডি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রকল্পটি প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছিল।
বিসিসির নির্বাহী পরিচালক (গ্রেড-১) রণজিৎ কুমার চাকরি মেলায় স্বতস্ফূর্তভবে অংশ নেওয়া সকল প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সবার সম্মিলিত চেষ্টায় ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের ক্ষেত্রে ইনক্লিউসিভ ডেভেলপমেন্টের বিষয় উল্লেখ রয়েছে।
আগারগাঁওয়ে এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর অফিস ভবনে অনুষ্ঠিত এই মেলায় অংশ নেয় ৪৮টি আইসিটি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এবং চাকরি প্রার্থী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা। এর আগে সারাদেশ থেকে পাঁচ শতাধিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অনলাইনে তাদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন। এ ছাড়া মেলায় সরাসরি উপস্থিত হয়েও প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থীরা সিভি বা জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার সুযোগ পান।
যাদের তথ্য প্রযুক্তির দক্ষতা রয়েছে তাদের নিয়োগের লক্ষ্যে ইন্টারভিউ গ্রহণ করে মেলায় অংশগ্রহণ করা প্রতিষ্ঠানগুলো। কল সেন্টার এজেন্ট, ডাটা এন্ট্রি, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, অ্যানিমেশন, প্রোগ্রামিং-সহ নানা প্রকার পদের জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তি চাকরিপ্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে চাকরি মেলার শেষে নিয়োগের পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এবার এই মেলার মাধ্যমে প্রায় ৫০ জনকে চাকরি দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ।